• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মেসি-রোকুজ্জো: বাল্যপ্রেম, বিচ্ছেদ, পুনর্মিলন


সৌরভ কুমার দাস
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম
মেসি-রোকুজ্জো: বাল্যপ্রেম, বিচ্ছেদ, পুনর্মিলন

ফুটবল মাঠের বাইরে মেসিকে যদি কোথাও দেখা যায় সেটা রোকুজ্জোর সাথেই। অনেক আগে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠান শুরুর আগ মুহূর্তে ফটোসেশন চলছিল। এক পর্যায়ে পাশে থাকা প্রোডাকশনের এক লোক মেসির স্ত্রীকে সরে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন যাতে করে মেসির সিঙ্গেল ছবি নিতে পারেন। সেটা চোখ এড়ায়নি মেসির, সাথে সাথে হাত দিয়ে টেনে নেন রোকুজ্জোকে বলেন সেখানেই থাকতে।

কেনই বা দূরে সরতে দিবেন, যে মানুষটা সেই অখ্যাত মেসির পাশে ছিল সেই তো বিখ্যাত মেসির পাশে থাকার সবচেয়ে বড় দাবিদার। মেসির জীবনে সবচেয়ে বড় ভালোবাসার নাম কি? এই প্রশ্নের উত্তরে বোধকরি শতভাগ উত্তর আসবে ফুটবল। হ্যাঁ, ফুটবল তো বটেই তবে যে মানুষটা সেই উঠতি বয়স থেকে মেসির সঙ্গে আছেন, সুখে-দুঃখে মেসির পাশে দাড়িয়েছেন সেই মানুষটার কথাও নিশ্চয়ই ভোলা উচিত নয়।

ক্যারিয়ারে যেমন অর্জন কম নয়, তেমনি আর্জেন্টিনার জার্সিতে ট্রফি না জেতার জন্য নিন্দুকদের সমালোচনার তীরেও কম বিদ্ধ হতে হয়নি মেসি। সেই সব সময়ে মেসির পাশে ছিলেন রোকুজ্জো। মোটামুটি সবাই জানেন, মেসি আর রোকুজ্জো একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তবে জানেন কি তাদের ভালোবাসার সব অজানা গল্প!

আর্জেন্টিনার শহর রোজারিতেই বেড়ে উঠেছেন মেসি ও রোকুজ্জো। ছোটোবেলা থেকে দুজন দুজনকে চিনলেও সেটা প্রেমের সম্পর্কে গড়িয়েছে অনেক পরে। মেসি তখন বার্সেলোনায় এসেছেন, বিশ্ব তাকে চেনা শুরু করেছে ভবিষ্যৎ তারকা হিসেবে। আর তখনই রোকুজ্জোর প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা বুঝতে পারেন মেসি।

ছুটিতে রোজারিওতে গেলেই মেসি দেখা করতেন রোকুজ্জোর সঙ্গে। ১৯৯৬ সালের কথা, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজে থাকতে প্রায়ই পারানা নদীর তীরে গিয়ে আড্ডা দিতেন দুজনেই।  

তবে তাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারেননি সহজে, কারণ তিনি নিজেই তো বুঝতে পারেননি কবে ভালোবেসে ফেলেছেন ছোটবেলার বন্ধুর বোনকে।

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসলো। ক্রিসমাসের ছুটিতে যখন রোজারিওতে মেসি, পন করলেন এবার যেভাবেই হোক রোকুজ্জোকে নিজের মনের কথা জানাবেন। কিন্তু এবার বাধলো আরেক সমস্যা, ফুটবল পায়ে যে লোক একের পর এক ডিফেন্ডারকে বোকা বানান সেই তিনিই কিনা বুঝতেই পারছিলেন না কিভাবে বলবেন ভালোবাসার কথা।

শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মেসি জানিয়ে দেন, তাঁর মনের বক্সের    স্ট্রাইকার আন্তোনেল্লা রোকুজ্জো। উত্তরে রোকুজ্জো কি বলেছিলেন সেটা কি আবার বলে দিতে হবে? মনে হয় না।

কিন্তু দীর্ঘ সময় মেসির বার্সেলোনা থাকা লম্বা সময় ধরে যোগাযোগ না হওয়াতে ছেদ পড়ে সেই সম্পর্কে। যদিও মেসি অন্য কোনো ললনার প্রেমে না পড়লেও রোকুজ্জো ঠিকই আরেক পুরুষের প্রেমে জড়িয়ে গিয়েছিলেন।

২০০৭ সালে রোকুজ্জোর ভাই লুকা স্কাগলিয়াকের দেওয়া চিঠি থেকেই এই খবর পেয়েছিলেন মেসি। ঘটনা হচ্ছে, লম্বা সময় দেখা না হওয়াতে মেসির প্রতি আকর্ষণও কমে গিয়েছিল রোকুজ্জর। ফলে নতুন আরেক প্রেমে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

তিন বছর সেই যুবকের সঙ্গে প্রেমও করেছিলেন রোকুজ্জো। এরপর ২০০৫ সালে এক দুর্ঘটনায় খুব কাছের এক বন্ধুকে হারিয়েছিলেন রোকুজ্জো। প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া রোকুজ্জোর পাশে দাঁড়াতে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন মেসি। এরপরই মূলত মেসির প্রতি আবারও দূর্বল হয়ে পড়েন রোকুজ্জো, আর সেই যে সম্পর্ক জোড়া লাগলো সেটা অমলীন আজও।

২০১০ সালে এ বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সেই প্রেমিক। সেখানে  রোকুজ্জোর সেই প্রেমিকের নাকি এ বিষয়ে কোনো রাগ বা অভিমানই নেই। তিনি বলেন, “আন্তোনেল্লার ওপর কোনো রাগ নেই। সে মেসির জন্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে  ঠিকই করেছে। একদিন আমার কাছে এসে একটি ফোন ব্যাগ থেকে বের করে বলেছিল, এটা মেসি তাকে দিয়েছে। আমি বুঝে যাই, তাদের দু’জনের মধ্যে পুরনো সম্পর্ক আবার জোড়া লেগেছে। তাই আমিও দূরে চলে যাই।”

যদিও তখন ওই সাক্ষাৎকারে নিজের নাম গোপন রেখেছিলেন ওই প্রেমিক। ততদিনে অবশ্য মেসির সঙ্গে সম্পর্ক জমে খির, এমনকি লিভ ইনও করছেন রোকুজ্জো।

Link copied!