• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ‘আরেক’ তারা


পার্থ প্রতীম রায়
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০২২, ০২:৩৬ পিএম
বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ‘আরেক’ তারা
ছবি- আল জাজিরা

গোলের পর ব্রাজিলিয়ানদের বুনো উল্লাসই বলে দেয়, তারা কতটা উল্লাসপ্রিয়। নাচে-গানে সমর্থকদের উন্মাতাল করে রাখার অদ্ভুত এক ক্ষমতাও রাখে ব্রাজিল। বিশ্বকাপে সেলেসাও সমর্থকদের এই রেশ আরও কয়েকধাপ বাড়িয়ে দিতে ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী ড্রাম হাজির হন ওয়ালেস লেইটি। মেক্সিকো বিশ্বকাপ থেকে শুরু হওয়া লেইটির এই যাত্রা চলছে কাতারেও। ‘আনঅফিসিয়াল’ ড্রামার হিসেবে পরিচিতি পাওয়া লেইটিকে বিশ্বমঞ্চে না পেলে তা যেন হয়ে ওঠে অসম্পূর্ণ।

আগের ৯ আসরের মতো এবারও কাতারে ঐতিহ্যবাহী ব্রাজিলিয়ান ড্রাম নিয়ে আছেন ওয়ালেস লেইটি। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে প্রথমবারের গিয়েছিলেন। পরের আসরগুলো পারিবারিক সমস্যা, ইনজুরি কিংবা কোনো বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। সেলেসাওদের সমর্থনে প্রতি বিশ্বকাপে থাকায় তাকে বলা হয়, ব্রাজিল দলের ‘আনঅফিসিয়াল’ ড্রামার।

লেইটির হাতে থাকে প্রায় ৭ কেজি ওজনের ঐতিহ্যবাহী ড্রাম। ব্রাজিলিয়ান ভাষায় যেটাকে বলা হয় সুরদাও। নিজ খরচে প্রতি বিশ্বকাপে এভাবে দলকে সমর্থন দেওয়া লেইটি কেন আসেন? এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের খুশি থাকাটাই পেয়েছে প্রাধান্য। লেইটি বলেন, “অন্য সবার মতো আমিও এখানে নিজের খুশি খুঁজে পাই।”

দেশ থেকে দেশান্তরে ব্রাজিলের সমর্থনে ঘুরে বেড়ানো লেইটিকে কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারেনি। রাজনীতি কিংবা অন্যান্য সমস্যা থাকলেও তার আটকে না থাকার মূল কারণ, ব্রাজিল দলের প্রতি সবার অকুণ্ঠ সমর্থন বলে মনে করেন লেইটি।

ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী সুরদাওকেই কেন ব্রাজিলের সমর্থনে ব্যবহার করেন তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে। লেইটি বলেন, “এর সুরই সবাইকে একসঙ্গে করে নেয়। আমি অনুভব করি সুরদাও সবাইকে একসঙ্গে করে দেয়।”

১৯৮৬ বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের সমর্থনে একের পর এক দেশে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ানো লেইটি ভুগছেন নানা শারীরিক সমস্যায়। তবুও থামেননি ব্রাজিলের সমর্থনে নানা বিশ্বের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে যাওয়া। তার শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়েছে মূলত এই সুরদাও বহন করতেই। এমনটাই জানিয়েছেন লেইটি।

তিনি বলেন, “আমার শরীরে অনেকগুলো ইনজুরি আছে। হাত, কাধ ও পিঠে ইনজুরি সমস্যা আছে। টুর্নামেন্ট শেষে সেরে উঠতে আমাকে আবার থেরাপি নিতে হবে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করে ড্রামটা বহন করা কঠিন কি-না। অবশ্যই কঠিন, কিন্তু খুশি থাকাটাই মূল বিষয়।”

ব্রাজিল দলের সঙ্গে বারবার বিশ্বকাপের নানা প্রান্তে ঘোরায় লেইটি নিজেও হয়ে উঠেছেন একজন সেলেব্রেটি। ব্রাজিল দলের খেলোয়াড়দের মতো তার সঙ্গেও সেলফি তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেকেই। বিষয়টি তাকে ‘বিশেষ’ ভাবায় বলেও জানান লেইটি।

লেইটিকে দলটি সমর্থকরা চেনেন ওয়ালেস ডাস কোপা নামে। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় বিশ্বকাপ ওয়ালেস। তার নামের আগে জুড়ে গেছে বিশ্বকাপ। নিজের এই পরিচিতি নিয়েও খুশি ওয়ালেস লেইটি। বলেন, “আমার মনে হয় না আমি তারকা। কিন্তু আমাকে এটা বিশেষ ভাবায়।”

বিশ্বকাপ উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘোরায় তৈরি হয়েছে অসংখ্য বন্ধু। এছাড়াও দেশগুলোর ঐতিহ্যবাহী জায়গা ঘুরে দেখার অনুরোধও পান লেইটি। সুযোগগুলো কখনই হাতছাড়া করেন না এই ব্রাজিলিয়ান। এই সুযোগ ঘুরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত ক্রুগার সাফারি পার্ক, মস্কোর ক্রেমলিন এবং কাতারের উট রাইড।

বিষয়গুলো লেইটিকে নতুন নতুন শিক্ষা দেয় জানিয়ে বলেন, “বিশ্বজুড়ে আমার অসংখ্য বন্ধু তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এই সুযোগ কেউ হাতছাড়া করতে চায় না। আমিও করি নাই। এটা আমার জন্য একটা আশীর্বাদ স্বরুপ।”

টানা ১০ টি বিশ্বকাপ আসর উপভোগ করার পর কোনটা বেশি ভালো লেগেছে তা নিয়ে অবশ্য কোনো উত্তর দেননি লেইটি। সবগুলোই ভালো লাগছে বলে জানান তিনি। তবে প্রিয় হিসেবে ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপকেই এগিয়ে রেখেছেন লেইটি। কারণ, ওইটা ছিল তার অভিষেক বিশ্বকাপ।

মেক্সিকোতে তাকে সবাই বেশ দ্রুতই আপন করে নিয়েছিল। ফলে তাদের প্রেমে পড়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেছেন।  ১৯৮৬ সালের আগে ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল মেক্সিকো। ওই বিশ্বকাপে পেলে জাদুতেও মুগ্ধ হয়েছিল বিশ্ব। ‘৮৬ বিশ্বকাপে তাই ব্রাজিলের প্রতি ছিল মেক্সিকানদের ভালোবাসা, তাতেই মুগ্ধ হয়ে পড়েছিলেন লেইটি।

Link copied!