• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫

মার্কিন নির্বাচন : ডিস্যানটিসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্প


আফরিদা ইফরাত
প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২৩, ০৬:৫৫ পিএম
মার্কিন নির্বাচন : ডিস্যানটিসের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ ট্রাম্প

সম্প্রতি এবিসি নিউজ এবং ওয়াশিংটন পোস্ট একটি পোলের আয়োজন করে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দৌড়ে জো বাইডেনকে কতটা যোগ্য বলে মনে করা হয়— তার জরিপ করতেই এই পোল। সেখানে ৬৮ শতাংশ নাগরিকই বাইডেনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। জরিপ থেকে আমরা সচরাচর সাধারণ কিছু উত্তর পাই। তবে এই উত্তরগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ ২০২৪ সালে মার্কিন নির্বাচনের রূপরেখা নিয়ে ইতোমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে।

বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার পেছনে তার প্রশ্নবিদ্ধ নীতিমালা ও ব্যবস্থাপনার চেয়ে বয়সটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন, বাইডেনের বয়স বিবেচনায় আরও এক দফা তাকে ক্ষমতায় আনাটা ঠিক হবে না। বিষয়টি এত সহজ হলে তো হয়েছিল। এখানে কিছু জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলোকে বিবেচনা করতে হয়। অন্তত মার্কিন নির্বাচনে এই সচেতনতা থাকাটা জরুরি। আর এই মুহূর্তে বাইডেন, ট্রাম্প এবং ডিস্যানটিস—এই তিনজনের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ডিস্যানটিসকেই এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে অবশ্য পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। এতগুলো বিষয় একটি লেখায় আঁটানো কঠিন। কারণ এই জটিলতার দিকেই পুরো পৃথিবী তাকিয়ে আছে। সেজন্যই এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা জরুরি।

২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন একসময় তার সহকর্মী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যানটিস। ফ্লোরিডার গভর্নর আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, রিপাবলিকান শিবিরে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ইতিমধ্যে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছে তিনি সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। এর ফলে রিপাবলিকান দলের ভেতর রন ডিস্যানটিসের সঙ্গে ট্রাম্পের লড়াই হবে। শেষ পর্যন্ত রিপাবলিকান ভোটাররা যাকে নির্বাচিত করবেন, তিনি ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর সঙ্গে লড়বেন। ৪৪ বছরের এই গভর্নর ক্ষমতায় এলে কী করবেন, তারও একটি রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, আমেরিকার সীমান্তে তিনি দেওয়াল তৈরি করবেন। মেক্সিকোর ড্রাগ মাফিয়াদের আটকাতে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ আটকাতে এই ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু কাজের কথা বলেছেন তিনি। নিজের কম বয়সকে প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন তিনি।

বাইডেনকে নিয়ে ট্রাম্পের খুব একটা চিন্তা ছিল না বোধহয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক উত্থানটিও বেশ চমৎকার। অন্তত মার্কিন ইতিহাসে বা রাজনীতিতে বোধহয় এমন অভূতপূর্ব ঘটনা আগে ঘটতে দেখা যায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতাকালে নানা অন্যায় সুবিধা নিয়েছেন। তার এই অন্যায় সুবিধা রাষ্ট্রের সঙ্গে বেইমানির শামিল বলেই অনেক মার্কিন নাগরিকের বক্তব্য। বিশেষত নির্বাচনকে প্রতিবার অস্বীকারের একটি প্রচারণা পদ্ধতি তিনি বেছে নিয়েছিলেন। বাইডেনের সঙ্গে গতবারের টক্করে পারেননি। কিন্তু এবার যেন বদলে গেছে অনেককিছু। ডোনাল্ড ট্রাম্প যে পদ্ধতিই অনুসরণ করুক না কেন তা যে কাজ করছে তা বোঝা যায়। ক্রমেই তার জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করেছে। এমনকি রাজনৈতিকভাবে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার পরও তিনি যেন মার্কিন নাগরিকদের কাছে অন্য এক ভাবমূর্তিতে আবির্ভূত হলেন। এই ঘটনা পুরনো এবং আমাদের প্রায় সবারই জানা। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, একবার কোনো রাষ্ট্রপতি ক্ষমতাচ্যুত হলে পরের কোনো নির্বাচনে আবার হোয়াইট হাউজ অফিসে ফিরবেন এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না। কিছু কিছু বিষয় যেন ধ্রুবকের মত জ্বলজ্বল হয়ে আছে মার্কিন নির্বাচনে। আপাতত ফক্স নিউজের এক পোলে আবার দেখা গেছে ট্রাম্প এগিয়ে আছে ডিস্যানটিস থেকে। কিন্তু সমীক্ষার ওপর আমাদের নির্ভর করার সুযোগ নেই। কারণ সমীক্ষা কখনই আমাদের সঠিক উত্তর দেয়নি। স্মরণে আছে, গত মার্কিন নির্বাচনে বাইডেন জনপ্রিয়তার নিরিখে ট্রাম্প থেকে পিছিয়েই ছিলেন। কিন্তু পরাজয়টা ট্রাম্পেরই হয়েছিল। এই মুহূর্তে ট্রাম্পের পক্ষে যারা সহযোগী হিসেবে কাজ করবেন বা তাকে সমর্থন দেবেন তাদের একটি বিষয়ই মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতি থাকার পর তিনি নির্বাচনে হেরে গেছেন। আবার হোয়াইট হাউজে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা অন্তত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় একেবারেই শূন্য।

এবার রন ডিস্যানটিসের দিকে ফেরা যাক। রন ডিস্যানটিস এই বছরটা শুরু করেছিলেন দুর্দান্তভাবে। সম্ভাবনাময় রাজনৈতিক প্রার্থী হিসেবে তার আবির্ভাব এবং মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তাকে কেন যেন অনেকেই ‘বোকার হদ্দ’ বলে রায় দিতে শুরু করেছেন। এত জনপ্রিয় এক প্রার্থীর ক্ষেত্রে কেন এমন মন্তব্য সেটিও কিন্তু ভাবা দরকার। একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। ২০২২ সালে ফ্লোরিডার নির্বাচনে ডিস্যানটিসের আবির্ভাব। নির্বাচনী প্রচারণায় লোকটির ভাবমূর্তি ভালো নয়। ভোটারদের সঙ্গে ঠিক মিশতে পারেন না। এমনকি তার কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা এক কথায় জঘন্য। কিন্তু কোনো অদ্ভুত কারণে ২০ পয়েন্টের ব্যবধানে তিনি ওই নির্বাচনে বিজয়ীর আসনে বসেন। মার্কিন নির্বাচনের আগে ডিস্যানটিস এক ভয়ংকর অগ্নিপরীক্ষার মুখে। ২০২২ সালের পর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তবে তার নির্বাচনী পরিকল্পনার রূপরেখা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে না। পলিটিকোর একটি মতামতে ন্যাশনাল রিভিউর সম্পাদক রিচ লৌরি জানান, ওনার জন্য এই নির্বাচনের আগের কয়েক মাস খুবই কঠিন হবে। কারণ রাষ্ট্র সম্পর্কে তার স্বচ্ছ পরিকল্পনা নেই। বৈশ্বিক সংকটের মুহূর্তে পরীক্ষামূলক জ্ঞানের প্রয়োগ ক্ষতিই ডেকে আনবে। জানুয়ারিতেই এই লোকটিকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি নন্দিত করা হয়েছিল। আর মার্কিন নির্বাচনের আগে এই প্রার্থীকে একটু বেশিই দমিয়ে ফেলা হচ্ছে।

ডিসানটিসের ভাগ্য একটু খারাপই বলতে হবে। কয়েক মাস আগে ট্রাম্পের নামে একটি মামলার পর প্রায় অধিকাংশ রিপাবলিকানই ভেবেছিলেন ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবনের ইতি এখানেই। অন্তত ট্রাম্পকে নমিনেশন দেওয়ার বিষয়ে কারোই আর সমর্থন ছিল না। কিন্তু আচমকা রাজনৈতিক ভাগ্যদেবীর সহায়তায় ট্রাম্প যেন তার হৃত গৌরব ফিরে পেলেন। কিভাবে জানা নেই। তবে আশা এবং মানুষের মনোযোগ এখানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতেই পারে। ট্রাম্প এরপর ৫০টিরও বেশি ন্যাশনাল সার্ভেতে জনপ্রিয়তা শীর্ষে ছিলেন। তাই এই নির্বাচনে ডিস্যানটিসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার সম্ভাবনা নাজুকই মনে হচ্ছে।

অবশেষে প্রস্তুতির বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। যেমনটা বলেছি, বাইডেনের প্রস্তুতির বিষয়টি নিয়ে এখন বিশ্লেষণ করা কঠিন। তার পরিকল্পনা ও কার্যপদ্ধতি নানা সংকটের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি জি-৭ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর কোয়াড বৈঠক এবং অস্ট্রেলিয়া সফর তাকে বাতিল করতে হয়। তাছাড়া মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, তেল সংকট, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতাও তার জন্য অসংখ্য সংকট দাঁড় করিয়েছে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে মার্কিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রস্তুতিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডিস্যানটিসের রূপরেখা মানুষের মধ্যে কতটা আশার সঞ্চার করে তা দেখার বিষয়। কিন্তু গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনাটি একটু বেশি সাহসিক হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে গর্ভপাতের অধিকার এই মুহূর্তে খুব জটিল সংকট। অন্তত রাজনৈতিক অঙ্গনে তো বটেই।

যাহোক, ডিস্যানটিসের অবস্থা নাজুক মনে হলেও তার জেতার সম্ভাবনা নেই তা বলা যাবে না। ২০২৪ এর নির্বাচনী দৌড়ে ডিস্যানটিস শুরুর দিকে স্টেটে ব্যাপক জনপ্রিয়। জাতীয় পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা এখনো তেমন তীব্র নয়। তার নির্বাচনী পরিকল্পনা ও প্রচারণার ক্ষেত্রে আইওয়ায় বিজয় লাভের বিষয়ে গুরুত্ব থাকবে বেশি বলেই ধারণা করা যায়। আইওয়ায় বিজয় মানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকটাই টেক্কা দেওয়া। এমনিতে রিপাবলিকানদের অনেকেই তার গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তে নারাজ। কিন্তু দলের বড় সহযোগী ও রাজনীতিকরা তাকে সমর্থন দিচ্ছে এটুকু স্পষ্ট। এই মুহূর্তে ডিস্যানটিসকে আইওয়ায় বিজয়ের বিষয়ে গুরুত্ব দিতেই হবে। ৩৭টি স্টেটের বিজয় চাট্টিখানি কথা নয়। নির্বাচনী রূপরেখা দেখে মনে হচ্ছে ডিস্যানটিস জয়ের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অতীতের মতো ফ্লোরিডা কনগ্রেশনাল ডেলেগেশনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির মতো গাফিলতি করলে আর দেখতে হবে না তাকে। কয়েক মাস আগেও তাকে বিজয়ীই মনে হচ্ছিল। এখন একটু সন্দেহ কাজ করছে। ট্রাম্প এখনো এগিয়ে। তারপরও ডিস্যানটিস আগামী কয়েক মাস কীভাবে তার প্রচারণা চালায় সেটিই দেখার বিষয়। এই প্রচারণাই নির্ভর করবে ট্রাম্পকে সে টেক্কা দিতে পারবে কি-না। নাহলে ট্রাম্প বিজয়ীর দৌড়ে থাকবেই। বাকি থাকে বাইডেন। এখন আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে প্রচারণায়। আর মাঝপথে রাজনীতির বাকবদলে জটিল কিছু ঘটলে একটু চোখ রাখা।  

লেখক: সংবাদকর্মী।

Link copied!