• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

আইএমএফের ঋণ ও বাংলাদেশের আর্থিক অনাচার


ড. মো. আইনুল ইসলাম
প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২২, ০৫:৪৭ পিএম
আইএমএফের ঋণ ও বাংলাদেশের আর্থিক অনাচার

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ১৫ দিনের বাংলাদেশ সফরে বাংলাদেশে এসেছে গত মাসের শেষ সপ্তাহে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে দলটির সদস্যরা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারক এবং অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করার পর ৯ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনায় বসবে। এদিনই সংস্থাটির কাছে চাওয়া ঋণের শর্তগুলো চূড়ান্ত হবে। আইএমএফের এই সফর কোনো আকস্মিক বিষয় নয়। চলতি বছরের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ সরকার ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণসহায়তা চেয়ে সংস্থাটিকে পত্র দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল যে চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। বিশ্ববাজারে অভূতপূর্ব হারে বেড়ে গেছে জ্বালানি, খাদ্যপণ্য ও নিত্যপণ্যের দাম; তাই বাজেট সহায়তার প্রয়োজন। সেই সময় থেকেই সরকার এমন একটি সফরের জন্য অপেক্ষা করছিল। বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক দিক থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো আমাদের গ্রামীণ মহাজনদের চেয়ে খুব আলাদা নয়। প্রত্যেক ঋণদাতার মতো তারাও প্রদানকৃত অর্থ সুদে-আসলে ফেরত নেয়। কারণ, এটাই তাদের মূল লক্ষ্য। আইএমএফ স্বভাবতই এর ব্যতিক্রম নয়। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা অনেক শর্ত আরোপ করে থাকে, যার কিছু কঠিন, কিছু সহজ। কিছু শর্ত থাকে, যার শেষ ফলাফল ঋণগ্রহণকারী দেশের জনগণের জন্য ভোগান্তি সৃষ্টি করা, যা পরোক্ষভাবে শাসকদের স্বার্থকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দেনা-পাওনার হিসাব কষে দেখা যায়, দিন শেষে জনগণের ভোগান্তির দিকটিই বেশি উপেক্ষিত থেকে যায়, গুটিকয় মানুষ ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষিত হয়।

খোলা চোখে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর শর্তগুলো নিষ্কলুষ ও মানুষের প্রকৃত উপকারের লক্ষ্যে আরোপিত হয়েছে বলে মনে হয়। কারণ, জনগণের সামনে সেসব শর্তই প্রকাশ করা হয়, যা দেখে যে কেউ সেসবকে নিরপরাধ ও সৎ উদ্দেশ্যে প্রণীত বলে মনে করবে। যেমন এবার আইএমএফের কাছ থেকে ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারি ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ, অর্থনীতিতে ভর্তুকির বোঝা কমানো, ব্যাংক খাতে ঋণের সুদের উপরিসীমা তুলে দেওয়া ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং রিজার্ভ ও খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা ইত্যাদি। আইএমএফের এই শর্তগুলোর অধিকাংশই মেনে নিতে পারে বাংলাদেশ। তবে আরও কয়েকটি শর্ত নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে, যেগুলো চূড়ান্ত হয় অর্থ বিভাগ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবদের বৈঠক। অর্থমন্ত্রীরও নিশ্চয় কিছু ভূমিকা থাকবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে। সব শর্ত পরিপালনে রাজি হলেই বাংলাদেশকে আগামী তিন বছরে এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অবস্থা, তাতে বাংলাদেশ যেকোনো শর্তেই যে ঋণ পেতে চাইবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী থাকায় দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর কোনো শর্ত বাংলাদেশ মেনে নেবে না, সেটা আশা করাই যেতে পারে।

যত দূর জানা গেছে, আইএমএফের শর্তের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। অর্থ বিভাগের দুটি উইংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইএমএফ কর্মকর্তারা দুই দফায় বৈঠক করেছেন। এর একটি বৈঠক হয়েছে সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে। অন্য বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় বাজেট বিষয়ে। তবে বৈঠকে কী কী বিষয়ে কথা হয়েছে, তা নিয়ে সচিবেরা কোনো কথা বলতে চান না। তারা শুধু বলেছেন, বিষয়টি অত্যন্ত ‘স্পর্শকাতর’। সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের মাথার ওপরে নতুন করে ঋণের বোঝা চেপে বসবে, অথচ তাদের তথ্য জানানোকে স্পর্শকাতর আখ্যা দিয়ে এড়িয়ে যাওয়া হবে, তা এই একবিংশ শতকে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৯৫ হাজার ৬০০ টাকা। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার মাথায়ও সমপরিমাণ ঋণের দায় চাপবে। গত ১ বছরে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৮৩০ টাকা। আগামী ১ বছরে এটা আরও প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাড়বে। ফলে ওই সময়ে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১ লাখ ১১ হাজার টাকা। আইএমএফের কাছ থেকে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিলে ঋণের বোঝা যে আরও অনেক গুণ বাড়বে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তা ছাড়া সরকার তো বলছে, ঋণ নিচ্ছে জনগণের বাজেট চাহিদা মেটাতে, অর্থাৎ খোলা চোখে সৎ উদ্দেশ্য। তাহলে ঋণের শর্তগুলোর খুঁটিনাটি জনগণের জানার অধিকার নিশ্চয়ই আছে। যদিও জানি, এই অর্থনীতিবিদদের বা সাধারণ মানুষের শর্তের বিষয়াবলি জানতে চাওয়া কখনোই পূরণ হবে না, তবু বলে কিছুটা শান্তি পাওয়া এই যা।

জানা গেছে, আইএমএফের বেশ কয়েকটি শর্ত অর্থনীতির জন্য ভালো হলেও তা সরকারের জন্য বেশ স্পর্শকাতর। যেমন আইএমএফ ভর্তুকি কমিয়ে আনার কথা বলেছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে সরকার জ্বালানি তেলে কোনো ধরনের ভর্তুকি দিচ্ছে না। উপরন্তু সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ দাম বাড়ানোর কারণে এখন সরকারি জ্বালানি বিপণনকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) তেল বিক্রি করে মুনাফা করছে। আর এই মুহূর্তে সার ও বিদ্যুতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতি দুই ডিজিটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আর সামনে নির্বাচন, তাই ভর্তুকি কমিয়ে আনা একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। অর্থ বিভাগ আইএমএফকে বলছে, তাদের পক্ষে ভর্তুকির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। অর্থ বিভাগের এমন কথায় কিছুটা বিস্মিত হতে হয়। কারণ, সরকারি দলের রাজনীতিবিদেরাই অনেক দিন ধরে বলে আসছেন, সরকারি আমলারাই সব সিদ্ধান্ত নেন, তারা শুধু অনুষ্ঠানে পুতুলের মতো বসে থাকেন। সে যা হোক, অর্থনৈতিক সুশাসনের বিষয়টি সবাই চায় বলে আইএমএফকে বলা হয়েছে। খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আন্তর্জাতিক মানের হিসাব পদ্ধতির বিষয়ে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ তা মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ঋণের সুদের সীমা একেবারে তুলে না দিয়ে তার উপরিসীমা বাড়ানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ঋণের সুদের হার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশের পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষেত্রে তা ১২ শতাংশ করার কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

আইএমএফের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির এশীয় ও প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ। দলটি বাংলাদেশে চূড়ান্ত আলোচনার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের হিসাব নিয়ে আপত্তি তুলেছিল। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেখানো ৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে বিনিয়োগকৃত প্রায় সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলার বাদ দিয়ে রিজার্ভের হিসাব কষতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের সুশাসনের ঘাটতি, খেলাপি ঋণ, ঋণ ও আমানতের সুদহার বেঁধে দেওয়াসহ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনা সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। ব্যাংক খাতের সংস্কার নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। কোনো লক্ষযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। তবে বাংলাদেশ এখন যেহেতু ঋণ পেতে কিছুটা মরিয়া, সেহেতু চাপে পড়ে লোকদেখানো কিছু সংস্কার হতেও পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) করহার বাড়ানো এবং কর অব্যাহতির সুবিধা তুলে নেওয়ার কথাও বলেছে আইএমএফ। এ জন্য করের আওতা বৃদ্ধি করে প্রান্তিক পর্যায়ে করদাতাদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণে কর আহরণ করার কথা বলেছে। সক্ষমতা তৈরির জন্য এনবিআরকে সহায়তারও প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। ভর্তুকি বন্ধ করে বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন খরচ ও বিক্রির মধ্যে ঘাটতি কমাতে মূল্য সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ। মূল্য সমন্বয়ের অর্থ হলো জনগণের ওপর আবার বাড়তি অর্থের বা বিলের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি জানতে চেয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ জানতে চেয়েছে, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বারবার নির্ধারণ করতে পারবে কি না। জবাবে বিইআরসি বলেছে, আইন সংশোধন করা হয়েছে। ফলে কেউ আবেদন করলে তা করার সুযোগ আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া (ক্যাপাসিটি পেমেন্ট) হ্রাসের উপায়, বিপিডিবির আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব ও বিদ্যুতের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। তবে অতীত ইতিহাস বলে, নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর জন্য সুবিধাজনক কোনো বিষয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য বা শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বা চাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ। কারণ, উদার বাজারব্যবস্থার সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষকতাকারী আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতাদর্শ ও কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী সমাজের গুটিকয় মানুষের ওই শ্রেণিটিই।

আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যাদের মার্জিত ভাষায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে তুলে ধরা হচ্ছে। এর আগে এই সংস্থাগুলো নিজেদের ডোনার বা দাতা বলে জাহির করত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের দাতা হওয়ার দাবি নাকচ করে দিয়ে প্রথমবারের মতো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বলে অভিহিত করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই অভিধা অত্যন্ত যৌক্তিক। কেননা, বাংলাদেশেরও বিশ্বব্যাংকে মালিকানা রয়েছে, প্রতিবছর চাঁদা দিয়ে সংস্থাটির তহবিল বৃদ্ধি করে থাকে। আর আইএমএফ বা অন্য সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণে অর্থ নিলেও আসলসহ বিপুল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করে। সাধারণত, এদের কাছে ঋণ চাইতে গেলেই নানা তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। নানা শর্ত নিয়ে চলে নানান আলোচনা। কিন্তু আমাদের ভাবতে কষ্ট হয় এই ভেবে যে, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কৃতিত্ব নিয়ে সরকার দেশব্যাপী যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল গত জুন মাসে, তা কেন জুলাই মাসে এসেই মিলিয়ে গেল? দেশে যদি সুশাসন থাকত, যদি আর্থিক জবাবদিহি থাকত, তাহলে এই সামান্য টাকার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে কাকুতিমিনতি করতে হতো না, দিতে হতো না এত কৈফিয়ত, মানতে হতো না অন্যায্য অনেক শর্ত। আমার এ কথার সপক্ষে একটি উদাহরণ দিলেই যথেষ্ট। আমরা আইএমএফের কাছে আন্তর্জাতিক মুদ্রায় ঋণ চেয়েছি মাত্র ৪৫০ কোটি ডলার। তা-ও প্রায় ছয় মাস আগে। সব প্রক্রিয়া শেষ করে এই ঋণ পেতে আরও ৬ মাস লেগে যাবে। অথচ গত ১০ বছর ধরে প্রতিবছর এই দেশ থেকে গড়ে ৭০০ কোটি ডলার করে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই হিসাবে ৬ মাস আগে আইএমএফের দ্বারস্থ হওয়ার পরও তো সাড়ে ৩০০ কোটি ডলারের মতো অর্থ এই দেশ থেকে পাচারের হয়ে গেছে। এই দৃষ্টিতে আবেদনকৃত ঋণের পরিমাণ নগণ্য নয় কি? আসলে, লুটপাটের সংস্কৃতি বন্ধ করতে পারলে আমাদের ভিক্ষুকের মতো কারও কাছে হাত পাততে হতো না। বাংলাদেশ আইএমএফের ঋণ চাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অনেক গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে ভেঙে পড়া এক অর্থনীতির দেশ বলে নানা নেতিবাচক মন্তব্যে উপস্থাপন করা হয়েছে। নিজ অর্থে পদ্মার বুকে সুদীর্ঘ সেতু স্থাপনে বিশ্বব্যাপী হাজারও বাঙালি যেভাবে নিজ দেশকে নিয়ে গর্ববোধ করেছে, তা দেখে অনেকের চোখে জলও এসেছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশ শিরোনাম হয়ে তারা যারপরনাই হতাশ হয়েছে। তাদের গর্বের হাসি অনেকটাই মিইয়ে গেছে। পরিশেষে বলব, আইএমএফ যত কঠিন শর্তের কথাই বলুক না কেন, বাংলাদেশের ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। কেননা, ঋণ দেওয়ার জন্যই তো তারা বসে থাকে। তারা ঋণের মহাজন, অর্থের ফেরিওয়ালা, সুদের কারবারি। আর আমাদের জন্য নিরাশার কথা হলো, এ দেশ থেকে আর্থিক বিশৃঙ্খলাও অব্যবস্থাপনা এখনো দূর হলো না!

 

লেখক : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়; সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি

Link copied!