• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রামপুরায় যানবাহনে আগুন


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৯, ২০২১, ০৫:৫৫ পিএম
নাশকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রামপুরায় যানবাহনে আগুন

রাজধানীর রামপুরায় বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারী সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যুতে সে সময় চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে অপব্যবহারের উদ্দেশে এই নাশকতা সৃষ্টি করে গ্রেপ্তারকৃতরা।

বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর রামপুরা ও কুমিল্লায় অভিযান চালিয়ে নাশকতা সৃষ্টিকারী এই সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব- ৩ এর আভিযানিক দল।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা মনির হোসেন (৫৪) এবং তার সহযোগী মো. হৃদয় হাসান পারভেজ (১৯), মো. আলাউদ্দিন সিফাত (২৫) ও মো. নাঈম হাসান মীর (২৪)।

র‌্যাব জানায়, গত ২৯ নভেম্বর রামপুরায় বাস চাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে ঘটনাস্থলে বেশকয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় একটি নাশকতাসৃষ্টিকারী সিন্ডিকেট। সে সময় শিক্ষার্থীদের ‘হাফ ভাড়া’ ইস্যুতে চলমান আন্দোলকে উসকে দিতে এবং জনমনে আতঙ্ক ও ভয়ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে এই অরাজকতা সৃষ্টির অপচেষ্টা করা হয়। এই ঘটনার পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। পরে মাঠ পর্যায়ে তদন্ত, বিভিন্ন ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টিকারীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দারা।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মনিরের নির্দেশে এবং পরিকল্পনায় রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালিয়েছেন তারা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রামপুরার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা।

গাজীপুরে ঘটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাশকতা চালানো হয় রামপুরায়

গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব জানতে পারে, গাজীপুরে ঘটে যাওয়া একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামপুরায় নাশকতা চালায় ষড়যন্ত্রকারীরা। যেখানে মাইনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী বাস চাপায় নিহত হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, গত ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় গাজীপুর চৌরাস্তায় সাদ্দাম নামের এক ব্যক্তি তার বন্ধুসহ অনাবিল সুপার বাসে উঠতে গেলে চালক ও হেলপারের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা হয়। সাদ্দাম নিহত শিক্ষার্থী মাঈনুদ্দিনের ভগ্নিপতি। এই ঘটনার পর অনাবিল বাসের চালক ও সহকারীকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সাদ্দাম ও তার বন্ধু অন্য আরেকটি বাসে করে রামপুরায় রওনা দেয়। পাশাপাশি তারা তাদের নিকট আত্মীয়, সহচার্য ও বন্ধু-বান্ধবদেরও রামপুরায় জড়ো হতে বলে। বিষয়টি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারে গ্রেপ্তারকৃতরা। ঘটনাটিকে ব্যবহার করে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের উদ্দেশে তারা রামপুরা বিটিভি ভবন এলাকায় জড়ো হয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃত মনির নাশকতা সংগঠনের জন্য নাঈম-আরাউদ্দিনসহ ৪-৫ জনকে নির্দেশ প্রদান করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেপ্তারকৃত আলাউদ্দিন-হৃদয়সহ ৩-৪ জনকে বোতলে করে অকটেন সরবরাহের দায়িত্বও দেওয়া হয়। এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত নাঈম আগ্নিসংযোগকারী দল, সন্ত্রাসী ও হামলাকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে। যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করার জন্য চক্রের বিশ্বস্ত ১৫-২০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

র‌্যাবের এই পরিচালক আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা পরিকল্পনা অনুযায়ী রামপুরা বিটিভি ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং অনাবিল বাসটি ওই এলাকা অতিক্রমকালে সেটিকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। বাসের চালক ও হেলপার সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে বুঝতে পারলে বেপোরোয়া গতিতে রামপুরা ত্যাগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ৪০০-৫০০ মিটার অতিক্রম করে পলাশবাগ এলে সাদ্দাম ও তার শ্যালক মাঈনুদ্দিন ফের বাসটি থামানোর চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে মাঈনুদ্দিন জোর করে বাসে উঠতে গেলে হেলপার তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি রাস্তায় পড়ে বাসের চাকায় পিস্ট হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তখন সুযোগ সন্ধানীরা শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে বলে প্রচারণা চালায় এবং উত্তেজনা ছড়ায়। পাশাপাশি পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তার বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

আগেও নাশকতার মামলা ছিল মনিরের বিরুদ্ধে

র‌্যাব আরো জানায়, গ্রেপ্তারকৃত মনিরের বিরুদ্ধে আগেও বিস্ফোরক দ্রব্যসহ নাশকতার সাতটি মামলা রয়েছে। তিনি একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী। রামপুরায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনার অন্যতম সংগঠন ও পরিকল্পনাকারী তিনি। তার নির্দেশেই এই নাশকতা চালানো হয়।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আলাউদ্দিন তার নিজের গ্যারেজসহ কয়েকটি স্থানে বোতলভর্তি অকটেন মজুদ রাখে ও সরবরাহ করে। গ্রেপ্তারকৃত হৃদয় স্বশরীরে বাসে অগ্নিসংযোগ করে এবং গ্রেপ্তারকৃত নাঈম বিভিন্ন গ্রুপগুলোর ভেতর সমন্বয় করে।

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায় র‌্যাব।

Link copied!