আট মাসের শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা। কিন্তু হতভাগ্য বাবা-মায়ের নেই সেই সামর্থ্য। তাই বিত্তবানদের কাছে অর্থ সাহায্য চাইতে ঢাকা থেকে ছুটে যান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। সেখানে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় অসহায় পরিবারটিকে। একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের দাবি কবা ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না দেওয়ায় অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হন হৃদযন্ত্রে ছিদ্র থাকা ছোট্ট শিশুটির মা।
এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলামকে (২৯) গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৮ ও র্যাব-১৫।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, নারীকে ধর্ষণের পর দেশজুড়ে বিষয়টি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে আশিকুল ইসলাম বেশভূষা পরিবর্তন করে কক্সবাজারে আত্মগোপনে চলে যান। দুই দিন সেখানে আত্মগোপনে থাকার পর বাসে করে ঢাকায় আসেন। এরপর ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব সদস্যরা তাকে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিকুল ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন উল্লেখ করে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, আশিকুল ও তার সহযোগীরা ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। অসহায় পরিবারটি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ২২ ডিসেম্বর রাতে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে ওই নারীকে লাবণী বিচ থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান আশিকুল। এরপর জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটকে রেখে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন।
র্যাবের এই পরিচালক আরও জানান, গ্রেপ্তার আশিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ধর্ষণের পর আশিকুল ভুক্তভোগীর স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন এবং তাকে হোটেলে আটকে রেখে বের হয়ে যান। পরে ওই নারী কৌশলে সেখান থেকে বের হয়ে তার স্বামীকে ফোন করেন এবং র্যাবের সহযোগিতায় উদ্ধার হন।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও জানান, গ্রেপ্তার আশিকুল একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। কক্সবাজারে তার এই চক্রে সদস্য রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ জন। তারা রাতে সি-বিচে ঘুরতে আসা পর্যটকদের হেনস্তা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করত। এছাড়া হোটেল মোটেল জোনেও পর্যটকদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায় করত। গ্রেপ্তার আশিকুল তার এই সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তার ও জমি দখল করতেন।
র্যাব আরও জানায়, গ্রেপ্তার আশিকুলের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ মোট ১২টি মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি পাঁচবার গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় আড়াই বছর কারাভোগও করেছেন।