বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (সেজ) এবং রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর-কষাকষি করতে পারার অধিকার সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সপ্তম বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সংক্রান্ত পরিষদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এই সুপারিশ করে।
সভায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে জানায়, বর্তমানে একটি ত্রিপক্ষীয় শ্রম আইন পর্যালোচনা কমিটি বাংলাদেশ শ্রম আইনের সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ইউএসটিআর) দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী ব্রেন্ডান লিঞ্চ রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
উভয় দেশের প্রতিনিধিদিলে বাণিজ্য, শ্রম, মেধা সম্পদ সুরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলা দিয়ে তৈরি পোশাক দেশটির বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইতে পারে বাংলাদেশ। ঢাকা এই বাণিজ্যের প্রতি বিশেষ গুরত্ব দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে তুলা আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলে পোশাক শিল্পের জন্য সুবিধা হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক দেশ। প্রতিবছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ তুলা আমদানিও করে। অন্যদিকে, বৃহত্তম তুলা রপ্তানিকারক হলো যুক্তরাষ্ট্র।
পোশাক রপ্তানির জন্য বাংলাদেশের তুলার চাহিদা বার্ষিক ৯০ লাখ বেল। এরমধ্যে দেশে উৎপাদিত হয় মাত্র দেড় লাখ বেল, যা মোট চাহিদার মাত্র ১.৬ শতাংশ।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ বিশ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলার ফিউমিগেশন বা বিষবাষ্পীকরণের মাধ্যমে পতঙ্গমুক্ত করার বাধ্যবাধকতা বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ কৃষি ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ক সংলাপে পরস্পরকে সহযোগিতা করেছে এবং এ বছরে এ খাতে আরও গভীরভাবে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে উভয় দেশ কাজ করছে।
টিকফা পরিষদের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে শ্রম সংস্কার নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ ও ডিজিটাল বাণিজ্যকে প্রভাবিত করে এমন নীতি, মেধা সম্পদের সুরক্ষা ও আইনের প্রয়োগ এবং কৃষি খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে, শ্রমিকদের সংগঠন করার স্বাধীনতা ও যৌথ দর-কষাকষি করতে পারাসহ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করা বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিদল শ্রমিক ও ইউনিয়ন সংগঠকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা মোকাবিলায় ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি ইউনিয়ন-বিরোধী বৈষম্য ও শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অন্যায্য চর্চা প্রতিরোধের ওপর জোর দিয়েছে।