• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

২০২৩-এ যাদের হারালাম


নূর মামুন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০২৩, ০৬:০০ পিএম
২০২৩-এ যাদের হারালাম
২০২৩-এ যাদের হারালাম। গ্রাফিক্স : সংবাদ প্রকাশ

মৃত্যু হলো জীবনপ্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ অবসান, যা সব প্রাণীর মধ্যে ঘটে। মৃত্যু বলতে জীবনের সমাপ্তিকে বোঝায়। তবে কিছু মানুষ আছেন, যারা মরেও অমর হয়ে আছেন তাদের কাজের দ্বারা। সাধারণ মানুষের মৃত্যু হলে পৃথিবীতে কেউ তাকে আর স্মরণ করে না। অথচ ‘কীর্তিমানের’ মৃত্যু হলে তার শরীরের অবসান হয় বটে, কিন্তু তার মহৎ কাজ তাকে বাঁচিয়ে রাখে। এ বছর দেশবরেণ্য এমনি কয়েকজনকে হারিয়েছি আমরা। তারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্টজন। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাদের ভূমিকা অপরিসীম। হারানোদের মধ্যে কয়েকজনকে নিয়েই বছরান্তের এ প্রতিবেদন।

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন

স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন গত ১ জানুয়ারি রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি ও নাগরিক আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি।

সুফিয়া খাতুন

লেখক, শিক্ষক ও সমাজসেবক সুফিয়া খাতুন গত ৭ জানুয়ারি ভোর পৌনে চারটার দিকে মারা যান। তার বয়স ১০০ পেরিয়েছিল। বনানী কবরস্থানে স্বামী এ কে এম ওয়াঝিহ উল্লাহ্‌র কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। তিনি চার ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনি, অসংখ্য শিক্ষার্থী ও শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।

২০২১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত ‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে’ গ্রন্থের রচয়িতা সুফিয়া খাতুন। তিনি ছিলেন সফল স্কুলশিক্ষক। ১৯৫০-এর দশক থেকে শুরু করে ২৩ বছর তিনি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও তৎকালীন ক্যান্টনমেন্ট মডার্ন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।

সমাজসেবাধর্মী নানা কর্মকাণ্ডেও নিয়োজিত ছিলেন সুফিয়া খাতুন। গড়ে তুলেছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারী সঙ্গিনীদের নিয়ে ‘উষা মৈত্রী’ সংগঠন। যুক্ত ছিলেন ‘হেমন্তিকা’ নামের সংগঠনের জন্ম প্রক্রিয়া থেকে। সমমনা আগ্রহী নারীদের সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধাবাস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছে ‘হেমন্তিকা’। দুটি সংগঠনের নামই তার দেওয়া।

সুফিয়া খাতুনের জন্ম ময়মনসিংহে, খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্রের তীরে। তাই আত্মজীবনী ‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে’ বইতে নদীর মতো প্রবহমান জীবনের গল্প তুলে ধরেছেন তিনি। বইটির সময়কাল ১৯৩০ থেকে ২০০৩ সাল। এই বইতে এক সাধারণ নারীর অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প রচিত হয়েছে।

ডা. এন কে নাতাশা

মাছরাঙা টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা ডা. এন কে নাতাশা গত ১৯ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। সংবাদ উপস্থাপিকা ছাড়াও সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সহযোগী অধ্যাপক ও এআইইডিসিআর থেকে প্রকাশিত হেলথ বুলেটিনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ছিলেন তিনি।

অ্যাডভোকেট রেজা আলী

ময়মনসিংহ-৭ (ত্রিশাল) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট রেজা আলী (৮২) গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন রেজা আলী। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে রেজা আলী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য ও ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

আব্দুর রউফ চৌধুরী

দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রউফ চৌধুরী র‍্যাংগস গ্রুপ ও সি রিসোর্সেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী (৮৬) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।

আব্দুর রউফ চৌধুরী বেসরকারি ব্যাংক এশিয়ারও চেয়ারম্যান ছিলেন এবং ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের মালিক প্রতিষ্ঠান মিডিয়া ওয়ার্ল্ডেরও অন্যতম পরিচালক ছিলেন। তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে গেছেন। তারা হচ্ছেন রোমানা রউফ চৌধুরী, রোমো রউফ চৌধুরী ও সোহানা রউফ চৌধুরী।

ভাস্কর শামীম শিকদার

একুশে পদকপ্রাপ্ত ভাস্কর শামীম শিকদার (৭০) গত ২১ মার্চ বিকেলে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন হার্ট ও কিডনিজনিত রোগসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

শামীম সিকদার ১৯৫২ সালের ২২ অক্টোবর বগুড়ার মহাস্থানগড়ের চিংগাশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৫ বছর বয়সে তিনি বুলবুল ললিত কলা একাডেমিতে ভর্তি হন। পরে ১৯৭৬ সালে তিনি লন্ডনের স্যার জন কাস স্কুলে চলে যান।

১৯৭৪ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন শামীম সিকদার। ১৯৮৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত ‘স্বোপার্জিত স্বাধীনতা’ শিরোনামের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটির মূল বেদিতে আছে একাত্তরের বিভিন্ন ঘটনার চিত্র। ১৯৮৮ সালের ২৫ মার্চ এটি স্থাপন করা হয়। স্বামী বিবেকানন্দের ভাস্কর্য নির্মাণ করেন ১৯৯৪ সালে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে স্থাপন করা হয়।

শামীম শিকদার ২০০০ সালে একুশে পদক পান। তিনি চারুকলা ইনস্টিটিউটের ভাস্কর্য বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৮০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ললিত কলা অনুষদের একজন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।

নূরে আলম সিদ্দিকী

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নূরে আলম সিদ্দিকী গত ২৯ মার্চ ভোরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।

সত্তরের দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা নূরে আলম সিদ্দিকী ১৯৭০-১৯৭২ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের চার খলিফার একজন হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়। মুজিব বাহিনীর অন্যতম কর্ণধারও ছিলেন তিনি।

নূরে আলম সিদ্দিকী ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন যশোর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে অংশ নিয়েছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী।

রোকিয়া আফজাল রহমান

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রোকিয়া আফজাল রহমান (৮২) গত ৫ এপ্রিল ভোরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালে মারা যান। দ্য ডেইলি স্টারের মালিকানাধীন মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রোকিয়া আফজাল রহমান মিডিয়া স্টারের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক এবং এবিসি রেডিওর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক ছিলেন।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী (৮২) গত ১১ এপ্রিল রাত ১১টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। গত ৫ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বেশ কিছুদিন ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল তাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত  সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরে আসেন। এরপর ভারতের আগরতলায় গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। যে হাসপাতাল থেকে মুক্তিযুদ্ধে আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হতো।

মুক্তিযুদ্ধের পর সেই হাসপাতালকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। তবে পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরামর্শ অনুযায়ী নাম পরিবর্তন করে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র রাখেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের তাঁর ওষুধনীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। বিকল্প ধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে বিশ্বে তার খ্যাতি রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য।

১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম। বাবা হুমায়ন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা ও মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। ১০ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য

প্রবীণ রাজনীতিক ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা পঙ্কজ ভট্টাচার্য (৮৩) গত ২৩ এপ্রিল রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান।

শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ১৭ এপ্রিল তাকে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য ১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। তিনি ১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালে ‘স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র’ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারারুদ্ধ হন।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় তিনি ছিলেন দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। পরে সম্মিলিত ‘সামাজিক আন্দোলন’ নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন। ২০১৩ সালে তিনি ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন।

নুরুল ইসলাম

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম গত ৮ মে রাত ১২টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মারা যান।

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইফপ্রি) ইমেরিটাস ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১৯৮৭ সালে সংস্থাটির মহাপরিচালকের জ্যেষ্ঠ নীতি পরামর্শক হিসেবে তিনি যোগ দেন।

বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ার‌ম্যান ছিলেন নুরুল ইসলাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অর্থনীতি ও সামাজিক নীতি বিভাগের সহকারী মহাপরিচালক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান-বিআইডিএসের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যাপক নুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে শিক্ষকতাও করেন। এ ছাড়া ইয়েল, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ভিজিটিং একাডেমিক পদে দায়িত্ব পালন করেন।

আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক)

বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়াভাইখ্যাত নায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান (ফারুক) গত ১৫ মে সকাল সাড়ে ৮টায় সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সেখানে একটি হাসপাতালে প্রায় দুই বছর চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন নায়ক ফারুক। ১৯৭৫ সালে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ সালে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত তিনি।

ফারুক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে সারেং বৌ, লাঠিয়াল, সুজন সখী, নয়নমণি, মিয়াভাই, গোলাপী এখন ট্রেনে, সাহেব, আলোর মিছিল, দিন যায় কথা থাকে ইত্যাদি।

কার্টুনিস্ট শাহানারা নার্গিস শিখা

প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট শাহানারা নার্গিস শিখা (৪৪) গত ৩০ মে সকালে ঢাকার আহ্‌ছানিয়া মিশন ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শিখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কার্টুন আঁকতে শুরু করেন ছাত্রাবস্থায়। তিনি ছিলেন পেশাদার কার্টুনিস্ট।

সিরাজুল আলম খান

মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান গত ৯ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

ষাটের দশকের প্রথমার্ধে সিরাজুল আলম খান ও আরও কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার উদ্যোগে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়। যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

অভিনেত্রী মিতা চৌধুরী

অভিনেত্রী মিতা চৌধুরী গত ২৯ জুন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় মারা যান। দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি।

দীর্ঘদিন প্রবাসেও ছিলেন মিতা চৌধুরী। ২০০৬ সালে দেশে ফিরে আবার নাটকে অভিনয় শুরু করেন। অসংখ্য টেলিভিশন নাটক ও থিয়েটার নাটকে কাজ করেছেন তিনি। তার প্রথম ধারাবাহিকের নাম শান্ত কুটির। এ ছাড়া বরফ গলা নদী, ডলস হাউসসহ নানা বিখ্যাত নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।

বিটিভিতে মিতা চৌধুরীর প্রথম নাটক আতিকুল হক চৌধুরীর ‘আরেকটি শহর চাই’।

বুলবুল মহলানবীশ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বুলবুল মহলানবীশ গত ১৪ জুলাই ভোরে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ধরনের অসুখে ভুগছিলেন।

বুলবুল মহলানবীশ একাধারে কবি ও লেখক সংগীত, নাট্য ও আবৃত্তিশিল্পী হিসেবেও খ্যাতি লাভ করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি টেলিভিশন-বেতার-মঞ্চে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান তিনি উপস্থাপনা করতেন।

১৯৫৩ সালের ১০ মার্চ বিক্রমপুরে জন্মগ্রহণ করেন বুলবুল মহলানবীশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স করেছেন তিনি। দেশে-বিদেশে শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘদিন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে সেই সময়কার রেসকোর্স ময়দানে যখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করছিল, ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে কলকাতার বালিগঞ্জের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত হয় ‘বিজয় নিশান উড়ছে ঐ’- গানটি। বাঙালির বিজয়ের ঐতিহাসিক ক্ষণে কালজয়ী গানটিতে কণ্ঠ দেওয়া শিল্পীদের অন্যতম বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহলানবীশ।

কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুস

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সহসভাপতি ও কার্টুনিস্ট এম এ কুদ্দুস গত ১৫ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টার দিকে শাহীনবাগের বাসায় স্ট্রোক করে মারা যান।

এম এ কুদ্দুস সর্বশেষ দৈনিক সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি দৈনিক ইত্তেফাকসহ আরও কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেছেন।

শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার

বাংলাদেশের শিশু-কিশোর আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য শহীদজায়া অধ্যাপক পান্না কায়সার গত ৪ আগস্ট বেলা ১১টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।

পান্না কায়সার শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের সহধর্মিণী এবং অভিনেত্রী শমী কায়সারের মা।

১৯৫০ সালের ২৫ মে জন্মগ্রহণ করেন পান্না কায়সার। তার আরেক নাম সাইফুন্নাহার চৌধুরী। ১৯৬৯ সালে শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কিছু সদস্য শহীদুল্লা কায়সারকে তার ২৯বি-কে গাঙ্গুলী লেনের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফিরে আসেননি।

পান্না কায়সার ১৯৭৩ সাল থেকে শিশু কিশোর সংগঠন ‘খেলাঘর’ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৯৯০-তে তিনি এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালের জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় অবদান রাখার জন্য তাকে ২০২১ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

কবি মোহাম্মদ রফিক

কবি মোহাম্মদ রফিক (৮০) গত ৬ আগস্ট রাত ৯টার দিকে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

কবি মোহাম্মদ রফিক ১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা সামছুদ্দীন আহমদ এবং মা রেশাতুন নাহারের আট সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে।

১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন মোহাম্মদ রফিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়, কিন্তু এমএ পরীক্ষার জন্য ছাড়া পান তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে  কাজ করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন। ২৯ জুন ২০০৯ পর্যন্ত দীর্ঘকাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

১৯৭০ সালে মোহাম্মদ রফিকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।

মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রথম আলো বর্ষসেরা গ্রন্থ পুরস্কার, জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও পুরস্কার অর্জন করেছেন।

মতিউর রহমান

সাবেক ধর্মমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মতিউর রহমান গত ২৭ আগস্ট রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ নগরীর ধোপাখোলা নেক্সাস কার্ডিয়াক হাসপাতালে মারা যান।

প্রবীণ সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১৯৪২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুর রেজ্জাক এবং মায়ের নাম মেহেরুন্নেসা খাতুন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন।

মতিউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মুক্ত হওয়ার দিনে শহরের সার্কিট হাউস মাঠে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২২ সালে একুশে পদক পান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম এ নেতা।

সোহানুর রহমান সোহান

চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান গত ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান।

দেশের বহু সফল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন সোহানুর রহমান সোহান। তার হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন সালমান শাহ, মৌসুমী, পপি ও ইরিন জামান। শাকিব খানের মুক্তি পাওয়া প্রথম ছবির পরিচালকও তিনি।

সোহানুর রহমান সোহান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে টানা দুইবার মহাসচিব এবং দুইবার সহসভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন।

শিবলি সাদিকের সহকারী হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন সোহান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’। এরপর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান এ গুণী নির্মাতা।

সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী

চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।

১৯৪৬ সালের ২৬ আগস্ট সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকীর জন্ম।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী কাহিনিকার, সংলাপ রচয়িতা, চিত্রনাট্যকার ও লেখক হিসেবে পরিচিত। ১৯৮০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নিজের প্রথম চলচ্চিত্র ‘ঘুড্ডি’ দিয়ে দর্শকদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র সমালোচকদেরও মন জয় করেন তিনি। এই সিনেমার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর ‘লাল বেনারসি’, ‘আয়না বিবির পালা’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন তিনি।

জিনাত বরকতউল্লাহ

একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী জিনাত বরকতউল্লাহ গত ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে ধানমন্ডির নিজ বাসায় মারা যান।

দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করছেন জিনাত বরকতউল্লাহ। চলতি বছরের শুরুর দিকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ এবং ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছিলেন গুণী এই শিল্পী।

স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারায় নৃত্যচর্চার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন জিনাত বরকতউল্লাহ। নৃত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২২ সালে একুশে পদক প্রদান করে।

শুধু নৃত্যচর্চায় নয়, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত ‘মারিয়া আমার মারিয়া’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবেও যাত্রা শুরু করেন জিনাত বরকতউল্লাহ। প্রায় ৮০টি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে নাট্যকার মোহাম্মদ বরকতুল্লাহকে বিয়ে করেন জিনাত বরকতউল্লাহ।

কবি আসাদ চৌধুরী

কবি আসাদ চৌধুরী গত ৫ অক্টোবর কানাডার টরন্টতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি কয়েক বছর ধরে কানাডায় ছেলে-মেয়ের সঙ্গে বাস করছিলেন। তিনি ব্লাড ক্যানসারে ভুগছিলেন।

কবি আসাদ চৌধুরী ঢাকার আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৭ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬০ সালে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৬৩ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৪ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

কবি আসাদ চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে ১৯৬৪ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। পরে ঢাকায় স্থিত হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন খবরের কাগজে সাংবাদিকতা করেন। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনি ভয়েস অব জার্মানির বাংলাদেশ সংবাদদাতার দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে দীর্ঘকাল চাকরির পর তিনি এর পরিচালক হিসেবে অবসর নেন।

আসাদ চৌধুরীর প্রথম কবিতার বই ‘তবক দেওয়া পান’। তিনি ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। ২০১৩ সালে পান একুশে পদক।

কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার মেহেন্দিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন।

আমিনুর রহমান তাজ

বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সহসভাপতি আমিনুর রহমান তাজ গত ১৬ অক্টোবর সকাল সোয়া ১০টায় ঢাকার মালিবাগের নিজ বাসায় মারা যান।

বাংলাদেশের অপরাধ সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল নক্ষত্র আমিনুর রহমান তাজ। ১৯৯০ থেকে শুরু করে প্রায় এক দশকের বেশি সময় তার কলমের খোঁচায় কাঁপত ঢাকার অপরাধ জগৎ।

২০০০ সালে ‘মন্ত্রীর বউ আর পুলিশ কমিশনারের বউয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার’ দাপট নিয়ে প্রতিবেদন করে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাজ। প্রথম বাংলাদেশি সাংবাদিক হিসেবে তার গ্রেপ্তারে আন্দোলন হয়েছিল বিশ্বের অনেক দেশে। যার ফলে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিল তৎকালীন প্রশাসন।

তাজ ১৯৭৫ সালে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর।

আবদুল মতিন চৌধুরী

ভাষাসৈনিক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ আবদুল মতিন চৌধুরী (৯২) গত ৪ নভেম্বর রাত সাড়ে ১১টায় বার্ধক্যজনিত কারণে মোল্লাবাড়ির নিজ বাসায় মারা যান।

আবদুল মতিন চৌধুরী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন।

ড. ইমদাদুল হক

ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক গত ১১ নভেম্বর ভোরে রাজধানীর বিআরবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

অধ্যাপক ইমদাদুল হক একজন বাংলাদেশি উদ্ভিদবিজ্ঞানী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য ছিলেন। তিনি ২০২১ সালের ১ জুন চার বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য পদে নিয়োগ পান।

অধ্যাপক ইমদাদুল হকের জন্ম পাবনা জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৭৮ সালে এমএসসি এবং ১৯৮৮ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে তিনি একাধিক পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেছেন।

ইমদাদুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ঢাবির জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও সদস্য, বাংলাদেশ উদ্ভিদবিজ্ঞান সমিতির কোষাধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্ল্যান্ট টিস্যু কালচার অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইমদাদুল হক একাধিক পেশাজীবী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবেও ভূমিকা রেখেছেন। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জার্নালে তার ৮০টির বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।

ডা. আব্দুল মালিক

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আব্দুল মালিক (৯৪) গত ৫ ডিসেম্বর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যান।

আব্দুল মালিক ১৯২৯ সালের ১ ডিসেম্বর দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই ইউনিয়নের পশ্চিম ভাগ গ্রামে জন্ম নেন। তার বাবার নাম মরহুম ফুরকান আলী, মায়ের নাম মরহুমা সৈয়দা নুরুন্নেছা খাতুন। প্রাইমারি স্কুল শেষে ১৯৩৯ সালে সিলেট সরকারি হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন এবং সরকারি বৃত্তি পান।

ম্যাট্রিক পাসের পর সিলেট সরকারি এমসি কলেজে ভর্তি হন আব্দুল মালিক। ১৯৪৯ সালে আইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানে কেবল একটাই বোর্ড ছিল, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই পরীক্ষায় তিনি ১১তম স্থান অর্জন করেন।

আইএসসি পাসের পর ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন আব্দুল মালিক। ১৯৫৪ সালে নভেম্বর মাসে মেডিকেল কলেজের ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ১৯৫৮ সালে তাকে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) পেশোয়ারে কর্নেল আজমিরের কাছে মেডিকেল স্পেশালিস্টের যোগ্যতা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এতে তিনি প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হন।

১৯৬৩ সালে সরকার আব্দুল মালিককে বিলেতে পাঠায় উচ্চশিক্ষার জন্য। ১৯৬৪ সালে তিনি এমআরসিপি পাস করেন এবং হ্যামার স্মিথ হসপিটাল অ্যান্ড পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিকেল স্কুল, লন্ডন থেকে কার্ডিওলজিতে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

শামীমা নাসরিন

বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিশিষ্ট সংবাদ পাঠিকা শামীমা নাসরিন (৬৬) গত ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় মারা যান।

শামীমা নাসরীন ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ দশক পর্যন্ত বেতার ও টেলিভিশনের সুপরিচিত কণ্ঠ ও মুখ ছিলেন। তিনি একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট লেখক ও সাবেক সচিব আবদুশ শাকুরের মেয়ে।

ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন (৮৩) গত ৯ ডিসেম্বর মারা যান।

২০০৭ সালে গঠিত ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে তথ্য, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন।

১৯৬১ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। এরপর মিডল টেম্পল এ আইনবিষয়ক পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে বার থেকে ব্যারিস্টার-ইন-ল ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বাবা ছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া।

আরফানুল হক রিফাত

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) মেয়র আরফানুল হক রিফাত গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান।

কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আরফানুল হক রিফাত।

গত ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত।

আরফানুল হক রিফাত কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি ও একই কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। জিলা স্কুলে পড়াকালীন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী হিসেবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮০ সালে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি হন। ১৯৮১ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে বহিঃক্রীড়া ও ব্যায়ামাগার সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মো. আনিছুর রহমান খান

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি মো. আনিছুর রহমান খান গত ১৯ ডিসেম্বর ভোর সোয়া ৩টার দিকে রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসায় মারা যান।

১৯৪৯ সালে পাবনার বেড়া থানার সিংহাসন গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মো. আনিছুর রহমান খান। তিনি ১৯৭৩ সালে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।

মো. আনিছুর রহমান খান কর্মজীবনে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, বরিশাল ও নেত্রকোনা জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ পুলিশ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

Link copied!