• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

কেনাকাটায় ‘নিরাপদ’ ডিজিটাল লেনদেন


মো. মির হোসেন সরকার
প্রকাশিত: এপ্রিল ৭, ২০২৪, ০৯:৫৮ পিএম
কেনাকাটায় ‘নিরাপদ’ ডিজিটাল লেনদেন
ডিজিটাল লেনদেন। ছবি : প্রতীকী

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জমে উঠেছে কেনাকাটা। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে মার্কেটে নগদ টাকা নিতে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বিপরীতে সহজ, নিরাপদ এবং সুবিধাজনক হিসেবে ডিজিটাল লেনদেনকেই প্রধান ভরসার মাধ্যম মানছেন তারা। বিগত বছরের মতো এবারও পণ্যের বিল পরিশোধে ডিজিটাল লেনদেনের পেমেন্ট রেখেছেন বিক্রেতারা। তবে উৎসব ঘিরে এ লেনদেন কিছুটা বাড়লেও বছরের বাকিটা সময় তা আশানুরূপ নয়।

ডিজিটাল লেনদেন মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করেছে তেমনি কিছু সমস্যাও আছে। যেমন- মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে লেনদেন যতটা সহজ, মোবাইল ফোনের আর্থিক সেবায় একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ততটা সহজ নয় এবং কিছু কিছু সেবা নেওয়া যায় শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাব ব্যবহার করে। ফলে মানুষকে একাধিক হিসাব খুলতে বাধ্য হতে হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড় জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় না আনা গেলে বাড়বে না এ মাধ্যমে লেনদেন। পাশাপাশি প্রতারণা ঠেকাতে মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানকেও সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগী হতে হবে। মোবাইলে আর্থিক সেবায় একটি সেবাদাতা থেকে অন্য সেবাদাতার হিসাবে যাতে সহজে টাকা লেনদেন করা যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। সব সেবা সব প্রতিষ্ঠানের জন্য উন্মুক্ত করাও দরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, “১০ লাখ মানুষের ইকোনমি কিন্তু সারা বাংলাদেশের হিসাব নয়। ডিজিটালে পেমেন্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২ শতাংশ কেটে রাখা হয়। এটার জন্য অনেকেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। তাই এটা একটা বড় বাঁধা।”

বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা যায়, কেনাকাটায় ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করলে বিশেষ ছাড় আছে বলে দোকানের সামনে বিলবোর্ড কিংবা পোস্টার লাগিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে সারা বছরই পেমেন্ট হয়। কিন্তু ঈদ এলে সেটা বাড়ে কয়েকগুণ। এর কারণ উৎসব ঘিরে বড় ধরনের ক্যাম্পেইন।

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকেও কার্ড পেমেন্টে নানা ধরনের অফার দিচ্ছে। ডাচ বাংলা ব্যাংকে পেমেন্ট করলে পাওয়া যাচ্ছে ২০ শতাংশ ক্যাশব্যাক, সিটি ব্যাংকের কার্ডে ১০ শতাংশ আর ব্র্যাক ও ইসলামী ব্যাংকের কার্ডে ১৫ শতাংশ ছাড় পাচ্ছেন ক্রেতা। এছাড়া ঢাকা ব্যাংকসহ আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংকে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত কেনাকাটায় ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। তবে ব্যাংকের নানা ঝামেলা থেকে নিজেদের স্বস্তি দিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেই মূলত ডিজিটাল লেনদেনে ব্যবসায়ীরা মত দিয়েছেন। এতে গ্রাহকের ভোগান্তি কমছে, বিক্রেতার ভোগান্তিও কমছে। বিশেষ করে সারাদিন ব্যবসা করে রাতে বেশি টাকা নিয়ে বাসায় ফিরলে একটা ঝুঁকি থেকে যায়। ডিজিটালে পেমেন্ট রাখার কারণে সেই ঝুঁকি থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাচ্ছে।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের একটি পোশাক শো-রুমের ম্যানেজার সজিব সরকার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বিকাশ কিংবা নগদের মাধ্যমে কাপড়ের বিল নিলে কিছুটা স্বস্তিবোধ করি আমরা। তবে বেশি চাপের ক্ষেত্রে আবার অসুবিধাও আছে। তবে আমাদের দোকানের মালিক বলেছেন, যতদূর পারি ডিজিটাল মাধ্যমে পেমেন্ট নেই। মালিকের কথা অনুযায়ী কর্মচারারীরা পণ্য বিক্রি করে। আর আমি বিল নিয়ে থাকি। যাদের বিকাশে বা নগদে টাকা থাকে না, তারা ক্যাশ টাকা দিয়ে বিল পরিশোধ করে থাকেন।”

নাদিম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, “প্রায় ৭০ শতাংশ কাস্টমারই ডিজিটাল পেমেন্ট করে থাকেন। এ বছর এটা প্রায় দ্বিগুণ ব্যবহার হচ্ছে। নিরাপদ, সহজ এবং ডিজাটাল লেনদেনে মানুষ অভ্যস্ত হওয়ায় এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।”

বিকাশ, নগদ কিংবা কার্ডে পেমেন্ট করলে আলাদা করে হাতে ক্যাশ রাখতে হয় না। তাই নিরাপদে মার্কেটে স্বাচ্ছন্দ্যে পণ্য কেনা যায় বলে মতামত দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাদের ভাষ্য, ডিজিটাল লেনদেনে পেমেন্টে কেনাকাটা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন অনেক মানুষ। এছাড়া জাল নোট আসারও কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশের অনেক শপিং সেন্টারে অধিকাংশ দোকানেই আছে ব্যাংকের পজ মেশিন। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ও ইন্টারনেট ব্যাংকিং মিলে কোনো কোনো দোকানে আবার বেচাবিক্রির প্রায় অর্ধেক হচ্ছে ডিজিটাল পেমেন্টের মাধ্যমে।

পরিবারের সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে বসুন্ধরা শপিং মলে আসেন আব্দুর রউফ মন্ডল। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “কার্ডে পেমেন্ট করলে আলাদা করে ক্যাশ রাখতে হয় না। তাই এ মাধ্যমেই কেনাকাটা করতে আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কার্ডে পেমেন্ট করলেই সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ। কোনো ক্যাশ সঙ্গে রাখতে হয় না এবং জাল নোট আসারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এটা খুব ভালো দিক।”

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক প্রায় ২২ কোটি। 
আর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে গত জানুয়ারি মাসে ডেবিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৫২ লাখ। ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ২৪ লাখ ২৯ হাজার। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে মোট গ্রাহক প্রায় ৮৫ লাখ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগদের হেড অব মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন জাহিদুল ইসলাম সজল বলেন, “আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি পেমেন্ট ও অন্যান্য সেবাগ্রহণ করছে নগদের গ্রাহকরা। আমরা আশা করছি, দিন যত বাড়বে পেমেন্টে নগদের লেনদেনও বাড়তে থাকবে।”

Link copied!