• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

কিংবদন্তি সুরকার ও মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্মদিন আজ


হাবীব ইমন
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩, ০৩:৫৭ পিএম
কিংবদন্তি সুরকার ও মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের জন্মদিন আজ
আলতাফ মাহমুদ। ফাইল ফটো

এক। 
বিশেষ দিন ছাড়াও প্রায় গান শোনা হয়। হঠাৎ হঠাৎ করে শুনি। কোনো উপলক্ষ লাগে না। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ তেমনি একটি গান। একুশের গান, আমাদের প্রভাতফেরির গান। যে গান না শুনলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে পানসে মনে হয়। গানটা শুনতে শুনতে মনের অজান্তেই চোখের কোণে জল এসে যায়। শিউরে উঠি। লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। যখন থেকে বুঝতে-শিখতে শুরু করলাম, তখন থেকেই এ গানটা শুনি। এজন্যই আমার বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে এ গানটি জড়িয়ে আছে।

দুই।
এ গানটা লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৫৩ সালে অনন্য এই গানটাকে সুর দিয়ে অমরত্ব দিয়েছেন শহীদ আলতাফ মাহমুদ। মানুষের মুক্তির নির্মাণে এক অনির্বাণ নাম তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বরিশালে কৃষকদের জনসভায় ‘ম্যায় ভুখা হুঁ’ গান পরিবেশন করেন। অবশ্য একুশের এই গানের তিনিই ছিলেন দ্বিতীয় সুরকার। প্রথমে গানটির সুর দিয়েছিলেন গণসংগীতের প্রবাদপ্রতিম পুরুষ আব্দুল লতিফ।

তিন।  
ছোটবেলায় দুষ্টুমি করে কাঁঠালগাছের বাকলে নিজের নাম লিখেছিলেন ‘ঝিলু দ্য গ্রেট’। কে জানত সেদিনের সেই ছোট্ট ঝিলুর হাতেই গড়ে উঠবে প্রভাতফেরির গান, কে জানত সেই ঝিলুই দিনে দিনে হয়ে উঠবেন বাংলা সুরের মহীরুহ রূপে। মুক্তিযুদ্ধে তার বাসা হয়ে উঠবে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্রের নিরাপদ ভাণ্ডার হিসেবে। কে জানত সেই ঝিলুই টর্চার সেলে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সহযোদ্ধাদের অভয় দিয়ে বলবেন, ‘তোমরা সবকিছু অস্বীকার করবে। আমি স্বীকার করেছি, সমস্ত দায় আমার। তোমাদের কোনো দোষ নেই।’ সেই ঝিলু দ্য গ্রেট বাংলা গানের কিংবদন্তি সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ।

চার। 
বায়ান্ন থেকে একাত্তর অবধি ঢাকার প্রায় প্রতিটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও জনসমাবেশে আলতাফ মাহমুদ ছিলেন এক অনিবার্য চরিত্র। মুক্তিযুদ্ধেও তার ছিল বড় ভূমিকা। গান করেছেন তিনি গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে গঞ্জ থেকে বন্দর, নগরে, রাজপথে। ১৯৭০-এর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ‘এ ঝঞ্ঝা মোরা রুখবো’র মতো অসামান্য সব গানের মধ্য দিয়ে নাড়া দিয়েছিলেন মানব হৃদয়কে। আর তার অসীম ত্যাগের চির স্বাক্ষর তো আমরা পেয়েছি মুক্তিযুদ্ধেই।

চার। 
মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের ৩৭০ আউটার সার্কুলার রোডের বাসা হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম গোপন ক্যাম্প। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আলতাফ মাহমুদ। তার সুরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অজস্র দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা তার বাড়িতে নিরাপদে অস্ত্র রাখতেন। তার পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্থও সংগ্রহ শুরু করেছিলেন আলতাফ মাহমুদ।

পাঁচ। 
৩০ আগস্ট ভোরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আলতাফ মাহমুদের রাজারবাগের বাসায় যায়। ওই বাসা থেকে আলতাফ মাহমুদকে আটক করা হয়। এরপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় তেজগাঁও নাখালপাড়ার ড্রাম ফ্যাক্টরি-সংলগ্ন এমপি হোস্টেলের মিলিটারি টর্চার সেলে। সেখানে তার ওপর চালানো হয় পৈশাচিক নির্যাতন।
আলতাফ মাহমুদকে ফ্যানের সঙ্গে পা বেঁধে মাথা নিচের দিকে ঝুলিয়ে ফুলস্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিত আর্মিরা। গায়ে জ্বলন্ত সিগারেট ডলে ডলে নেভাত, হাঁটুর হাড় ভেঙে দিয়েছিল, কিন্তু সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। পিশাচের বুকের ওপর বসে, মা, মাটি ও মাতৃভূমিকে ভালোবেসে তিনি উন্নত শির মরণকে বরণ করে নিয়েছিলেন।

ছয়। 
আজ আলতাফ মাহমুদের জন্মদিন। মহাকালের মঞ্চে তার অনিঃশেষ যাত্রাকে আমরা সব সময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। তার অনুপস্থিতি আমাদের সব আন্দোলন-সংগ্রামে বেদনা জাগায়।

Link copied!