বছরের শুরুর দিকে বাজারে একটি কলমের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫ টাকা। কিন্তু ৮ মাসের মাথায় এই কলমের দাম বেড়ে যায় আরও ২ টাকা। শুধু কলম নয়, একইভাবে বাজারে সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবক ও ক্রেতারা। পাশাপাশি তাদের অভিযোগ, উপকরণের দাম বাড়লেও, বাড়েনি গুণগত মান।
সোমবার (২৮ আগস্ট) তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ছেলেকে নিতে আসেন পান্থপথ এলাকার রাবেয়া সুলতানা। এরপর ছেলের জন্য কলম কিনতে যান বিদ্যালয়ের পাশের একটি দোকানে। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
গুণগত মানের অভিযোগ করে রাবেয়া সুলতানা বলেন, “আমার দুই ছেলে-মেয়ে। পড়ালেখার জন্য খাতা, কলম, টিফিন, স্কুলের বেতন, যাতায়াত সব মিলিয়ে খরচ ৩০ হাজারের কমে হয় না। বাজারে সব জিনিস এখন বেশি দামে কিনতে হয়। আগে একটা কলম কিনতাম ৫ টাকা, এখন কিনতে হয় ৭ টাকা। খাতা আগে কিনতাম ২৫ টাকা (৮৪ পাতা), এখন কিনতে হয় ৩৫ টাকা। দাম বাড়লেও গুণগত মান ভালো না। এখন অনেক কষ্ট করে বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে হয়।”
শুধু রাবেয়া সুলতানা নন, শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকেই আবার মনে করছেন, শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি হতে পারে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার কারণ। আর বিক্রেতারা বলছেন, আগামী মাসে কমতে পারে শিক্ষা উপকরণের দাম।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার স্টেশনারি দোকান ঘুরে জানা যায়, চলতি বছর নতুন বাজেট প্রস্তাবের পর থেকে বাজারে বেড়েছে শিক্ষা উপকরণের দাম। বাজারে এক দিস্তা খাতার বর্তমান দাম ৩০ টাকা। যা পূর্বে ছিল ২০ টাকা।
একইভাবে ছোট মাপের বাঁধাই খাতার (৮৪ পাতা) বর্তমান দাম ৩০ টাকা ও পূর্বের দাম ২৫ টাকা, বড় মাপের বাঁধাই খাতার (৮৪ পাতা) বর্তমান দাম ৩৫ টাকা ও পূর্বের দাম ৩০ টাকা, স্পাইরাল বাইন্ডিং খাতার (২০০ পাতা) বর্তমান দাম ১১০ থেকে ১১৫ টাকা ও পূর্বের দাম ৭০ থেকে ৭৫ টাকা এবং ৬৫ গ্রাম কাগজের (প্রতি বান্ডেল) বর্তমান মূল্য ৪০০ টাকা ও পূর্বের দাম ছিল ১৯০ টাকা।
রফিকুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, “আমার দুই ছেলে-মেয়ে। শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় শুধু আমি নই, সকল অভিভাবকের কষ্ট হচ্ছে। সব জিনিসের সঙ্গে এসব জিনিসের দামও বেড়ে গেছে। আজকে মেয়ের জন্য যে পরিমাণ খাতা ৪০০ টাকায় কিনলাম। আগে এসব খাতা কিনতাম ২০০ টাকায়। দাম আগের থেকে প্রায় দ্বিগুণ। একইভাবে আগে যদি তাদের জন্য খরচ হতো চার হাজার, এখন হয় আট হাজার টাকা। সরকারের এসব জিনিসের দাম অন্তত কমানোর দরকার। অনেক অভিভাবক আছেন যারা খরচ চালাতে পারে না। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পরে।”
শয়ন নামে এক ক্রেতা বলেন, “আগে যেদিন চাইতো, সেদিনই কিনে দিতে পারতাম। এখন একদিন অপেক্ষা করতে হয়। তাই মেয়েকে জানিয়ে দিয়েছি, শেষ হওয়ার আগে আমাকে জানাতে। দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে আমরা। কিছুই করার নাই। খাওয়া দাওয়া সব জিনিস বেশি দামে কিনতে হয়।”
সারোয়ার হোসেন নামের এক বিক্রেতা বলেন, “বাজারে সব ধরনের খাতা-কলমের (শিক্ষা উপকরণ) দাম বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা খাতা কলম অপচয় করতো। দাম বেড়ে যাওয়াতে এখন অভিভাবকরা হিসাব করে বাচ্চাদের খাতা-কলম দেয়। তাই আমাদের বিক্রি কমছে। আগে একটা কলমের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫ টাকা, এখন ৭ টাকার নিচে কলম নাই।”
সুমন নামের এক বিক্রেতা বলেন, “বাজারে ফ্রেশ নামে একটা কলম আছে ৫ টাকা। তাছাড়া সব ৫ টাকার ওপরে। দাম বেড়ে যাওয়াতে এখন অনেকেই কম কিনে। আমরাও কোম্পানির কাছে কম নেই। আগে ৫ বক্স কলম নিলে, এখন নেয় ১ বক্স। আগামী মাস থেকে দাম কম হওয়ার কথা শুনেছি। দেখি কী হয়?”