• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬
নিয়ন্ত্রণহীন ডেঙ্গু পরিস্থিতি

হু-হু করে বাড়ছে সংক্রমণ-মৃত্যু


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
হু-হু করে বাড়ছে সংক্রমণ-মৃত্যু
মুগদা হাসপাতালে মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ছবি : সংবাদ প্রকাশ।

রাজধানী ঢাকায় কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি। প্রতিদিন রেকর্ড পরিমাণে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের এই সংখ্যা।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। এখান প্রতিদিন তিন শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় বলে জানিয়েছে হাসপাতাল সূত্র।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীর চাপে পা ফেলার উপায় নেই। নির্ধারিত শয্যা ছাড়াও বারান্দা- মেঝেতে চলছে চিকিৎসা।

রোগীর চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকদের। হাসপাতালটিতে এখনো ভর্তি আছেন সাত শতাধিক ডেঙ্গু রোগী। চলতি বছর এ হাসপাতালেই ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে এবার রোগী বেড়েছে ৬ গুণ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৩০০ লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৭০ হাজারের বেশি।

মানিকনগর থেকে দুই মেয়ে নিয়ে তিন দিন ধরে হাসপাতালে মনোয়ারা বেগম। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বড় মেয়ের ১০১ ডিগ্রি জ্বর, আর প্লাটিলেট নেমেছে ২০ হাজারে। গতকাল ও আজ তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া লাগছে। ডাক্তার বলছে এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।”

মনোয়ারা বেগম আরও বলেন, “মানিকনগর এলাকার প্রতিটি বাসায় কেউ না কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত। এই এলাকায় মাঝে মাঝে সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ দেয়। প্রতিদিন ওষুধ দিলে এত লোক আক্রান্ত হতো না।”

মুগদা হাসপাতালে শয্যা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। ছবি : সংবাদ প্রকাশ।

শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা প্রিয়াংকা রাণীর সঙ্গে। তিন দিন আগে তার ১০ মাস বয়সী ছেলে অপু সাহার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। সেই থেকে হাসপাতালে আছেন তিনি। সংবাদ প্রকাশকে প্রিয়াংকা রাণী বলেন, “গত কয়েকদিন থেকে আমার ছেলের জ্বর। তিন দিন পর জ্বর কমেছিল। তারপর একদিন রাতে তীব্র জ্বর ও বমি হয়। ওষুধে জ্বর না কমায় ডেঙ্গু পরীক্ষা করি। তারপর গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়।”

হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে স্কুল শিক্ষার্থী সুবর্ণাকে নিয়ে বসে আছেন তার বাবা জয়নাল হোসেন। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের বাসা মগবাজারে। তিন দিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার পর মেয়েকে এখানে ভর্তি করেছি। কোনো উন্নতি হয়নি। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে।”

১০ দিন ধরে জ্বর শিশু মিহিরুল ইসলামের। ৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। মিহিরুলের মা মনিরা বেগম বলেন, “ডেমরা থেকে ছেলেকে নিয়ে এসেছি। প্রথমে ৩ দিন ছেলের অনেক জ্বর ছিল। এরপর পেট ফুলে যায়। সেখান থেকে একটি হাসপাতালে পরীক্ষা করলে ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তারপর মুগদা হাসপাতালে নিয়ে আসি।”

অতিরিক্ত রোগী ভর্তি হওয়ায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে নার্সরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নার্স সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ওয়ার্ডে তিন শিফটের প্রতিটিতে ৫ জন করে নার্স কাজ করেন। ৫ জনের পক্ষে ১৫০-২০০ রোগীর প্রেসার দেখা, স্যালাইন ঠিক করে দেওয়া অনেক কঠিন কাজ। একেকজন রোগীর সঙ্গে তিন-চারজন করে স্বজন আছে, হাঁটা চলারও জায়গা নেই আমাদের।”

শিশু ওয়ার্ডের কর্তব্যরত ডাক্তার কানিজ ফাতেমা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এবার ডেঙ্গুর ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। ডেন-২ ধরনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। জ্বর, মাথা ব্যথা, ডায়রিয়ার সমস্যা নিয়ে আসছেন রোগীরা। যাদের প্রত্যেকের পরীক্ষা করে দেখা যায় ডেঙ্গু আক্রান্ত। অনেক রোগীর পেট ফুলে যাচ্ছে। ফুসফুসে পানি জমছে। দ্রুত রক্তচাপও কমছে। এমন রোগীই বেশি আসছেন।” 

Link copied!