দুই দিন ধরে রাজধানীজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিতে বিপাকে ভাসমান ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। দিনের বেশির ভাগ সময় দোকান বসাতে না পেরে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না তাদের। লোকসান গায়ে উঠছে অনেকের। প্রতিদিনের আয় জোগাড় না হওয়ায় সংসারেও টানাপোড়েন চলছে অনেকের।
সোমবার সকাল ৮টা, পান্থপথ মোড়। ফুটপাতের পোশাক বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলতে থাকেন, “গত তিন-চার দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ তো সকাল থেকেই বৃষ্টি। দোকান এখন পর্যন্ত খুলতেই পারি নাই। আমরা দিন আনি দিন খাই। এক দিন বন্ধ থাকলে লোকসান। দোকান খুলতে অপেক্ষা করতে হয়। আগে যেখানে সারা দিন দোকান বসাইতাম, এখন আধা বেলা দোকান করতে হয়। এক দিনে আমার বিক্রি হয় চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তিন-চার দিনে প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি বন্ধ। বৃষ্টির কারণে এখন অভাব মোকাবিলা করতে হবে।”
শুধু জাহাঙ্গীর আলম নন। ফুটপাতে বসা অনেক ব্যবসায়ীর কথাগুলো ঠিক একই রকম। যারা থেমে থেমে আসা এই বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন, যাদের এক দিনের আয়ে নির্ভর করে বাড়ির হাঁড়িতে কী রান্না হবে।
এই ফুটপাতেই বিষণ্ণ মনে বসে আছেন আরও অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। টানা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে দোকান বসাতে পারছেন না অনেকে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
মোজা বিক্রি করেন আব্দুর রাজ্জাক। একই সঙ্গে রয়েছে প্যান্টের ব্যবসাও। বৃষ্টিতে অন্যের টিনশেডে বসে তিনি বলেন, “ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসি। মাথার ওপরে ছাদ নাই। বৃষ্টিতে দোকান ঠিকমতো বসাতেই পারছি না। মালামাল ভিজে যায়। আমি মোজার সঙ্গে ট্রাউজার ও প্যান্ট বিক্রি করি। বৃষ্টিতে ট্রাউজার, প্যান্ট দোকানে সাজাতেই পারি নাই। শুধু মোজাগুলো নিয়ে অন্যের দোকানের টিনশেডের নিচে বসে আছি। মোজা তো শীতকালেই বেশি চলে। এখন তেমন বিক্রি হয় না। দোকান ভাড়াসহ (ফুটপাতের) আরও খরচ থাকে। খরচ ওঠাতে পারছি না। দোকান খুলতে না পারলে লোকসান গায়ে ওঠে। অনেক কষ্ট যাচ্ছে ভাই।”
ব্যাগের দোকানের কর্মচারী রায়হান বলেন, “ঈদের পর থেকে দোকানে ঢুকছি। রাস্তায় ওস্তাদ দোকান বসালে ব্যাগগুলো সাজায়া দিই। বৃষ্টিতে সকালে এসে বসে আছি। এখনো বেতন ধরে নাই। পরে ধরবে বলছে। ঈদের পর তো বেচাবিক্রি কমছে। তারপরে বৃষ্টিতে দোকান বসাইতে পারছি না। ওস্তাদের বিক্রি না হলে আমারে বেতন দিবে কী? সেই নিয়ে চিন্তায় আছি।”
মাহাবুব নামের এক টি-শার্ট বিক্রেতা বলেন, “বৃষ্টির কারণে দোকান খুলতে পারছি না। আল্লাহ দিলে আর কিছু করার নাই। তিনি চাইলে সারা দিনের ব্যবসা ১ ঘণ্টাতেও হয়ে যাবে। তাঁর ওপর ভরসা করেই চলছি।”
এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আরও বলেন, “ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসি, যা বিক্রি হয়, তা দিয়েই সংসার চলে। কিছুদিন আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও ব্যবসা খারাপ গেছে। এখন বৃষ্টি, আগের মতো বিক্রি হয় না। আল্লাহ এর মধ্যে চালাচ্ছে, চলছি।”