• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঘর গোছাচ্ছে নির্ভার আওয়ামী লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩, ০২:৩৮ পিএম
ঘর গোছাচ্ছে নির্ভার আওয়ামী লীগ
প্রতীকী ছবি

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঘর গোছাতে শুরু করেছে তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। দলের কোন্দল নিরসনে ইতিমধ্যে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা তৃণমূল ও কেন্দ্রের নেতাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কয়েকটি বাধা অতিক্রম করেছে। প্রথম বাধা ছিল বিএনপির আন্দোলন। গত বছর ডিসেম্বরে বিএনপির আন্দোলনে যেরকম তেজীভাব ছিল, সেই তেজীভাব নেই, তাদের আন্দোলনে এখন ভাটার টান। বিএনপি আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। এই আন্দোলন দিয়ে দুই মাস সময়ের মধ্যে সরকার পতন ঘটানো যাবে-এমনটি বিএনপির নেতারাও বিশ্বাস করেন না। তাই বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো উদ্বেগ বা চিন্তার কারণ নেই। 

দ্বিতীয় বাধা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারি। নির্বাচন নিয়ে একটি সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছে তারা। নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয়-সেই নির্বাচনে যেন সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। এভাবেই পশ্চিমা দেশগুলোর বার্তা ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে নিষেধাজ্ঞাসহ নানা হুমকিও ছিল তাদের। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ব্যক্তিগত কূটনীতি দিয়ে এসব বাধা অতিক্রম করেছেন বলেই এখন সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ব্রিকস সফর ও জি-২০ সফরের পর এটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনটি আগে দেখতে চায়, এবং কতটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে সেটি পর্যবেক্ষণ করতে চায় তারা। নির্বাচনে কারা অংশগ্রহণ করল, কারা করল না, সেটি তাদের কাছে বড় বিষয় নয়। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যে সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে পারবে, আন্তর্জাতিক কোনো বাধা তাতে আসবে না-এটি মোটামুটি এখন নিশ্চিত। তাই আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই নির্ভার। দলের নেতারা মনে করছেন, এখন শুধু নিজেদের কোন্দল নিরসনই আসল কাজ।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেছেন, প্রতিটি আসনে তিন থেকে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন এবং তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন। এই অবস্থা বন্ধ করতে হবে। প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলাতেই কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। মারপিট এবং প্রকাশ্য বিরোধের ঘটনা ঘটছে। এগুলো দলের জন্য ক্ষতিকর।

ইতোমধ্যে মনোনয়ন নিয়েও শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। সব আসনেই একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নের জন্য বিভিন্ন নেতাদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, সবার আগে কোন্দল নিরসন করতে হবে। তারা বলছেন, বিদেশি অতিথিদের বিদায় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন কোন্দল মিটমাট করার কাজে মনোযোগ দেবেন। 

ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ প্রায় আড়াইশ আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন, এরকম ব্যক্তিদের ইতোমধ্যেই সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছে। বাকিদেরও পর্যায়ক্রমে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। কোন্দল দূর করতে পারলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সহজ জয় পাবে এমনটি মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, “প্রতিটি বৈঠকেই রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবারও তাই হবে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। সামনে জাতীয় কাউন্সিল। কয়েকটি সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বৈঠকে এসব বিষয়েও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।” একই কথা বলেছেন দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানও।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “নির্বাচনী প্রচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, “ধাপে ধাপে আমরা জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, থানা, মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছি। আগামী অক্টোবর থেকে পুরোদমে প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। ইতোপূর্বে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বড় বড় শোডাউনের মাধ্যমে নেতাদের নির্বাচন বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এভাবে ধাপে ধাপে নির্বাচনী কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতাকে তুলে ধরা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের ‘দুঃশাসন’ নিপীড়ন-নির্যাতন, জ্বালাও পোড়াও, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে বিরোধী দলের অগ্নিসন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে ব্যবহার করে অপরাজনীতির যে অশুভ তৎপরতা শুরু হয়েছে, এ বিষয়গুলোও মানুষের সামনে তুলে ধরার হচ্ছে।” 

Link copied!