• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

যেমন হতে পারে এবারের মন্ত্রিসভা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৯, ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
যেমন হতে পারে এবারের মন্ত্রিসভা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । ফাইল ছবি

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রিসভার শপথ। সবার চোখ এখন নতুন মন্ত্রিসভার দিকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া পঞ্চম মন্ত্রিসভায় কারা স্থান পাচ্ছেন, পুরোনোদের মধ্যে কারা বাদ পড়ছেন, কে কোন দপ্তর পাচ্ছেন–এসব নিয়েই চলছে আলোচনা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব পাবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার তিনজন প্রতিমন্ত্রী এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আবার মনোনয়ন পেয়েও জয়ী হতে পারেননি আরও তিনজন। ফলে তাদের দপ্তরে দেখা যাবে নতুন মুখ। এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কারও কারও প্রতি প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত। তাদের বিষয়েও নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনায় এমন ব্যক্তিরাই প্রাধান্য পেতে পারেন, যারা সামনের দিনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। সে ক্ষেত্রে কেউ কেউ ছিটকে পড়তে পারেন মন্ত্রিসভা থেকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সংসদ সচিবালয়ে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরপরই নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করবে আওয়ামী লীগ। দলের প্রধান শেখ হাসিনা পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বৃহস্পতিবার তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। এদিকে নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ আগামীকাল ১০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ব্যাপারে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানিয়েছেন, সংবিধান মেনেই নতুন সংসদের কার্যক্রম শুরু করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন সরকার গঠন করবে আওয়ামী লীগ। আর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হবে নতুন সরকারের প্রধান লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, স্মার্ট মন্ত্রিসভা গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানুয়ারি থেকেই এই মন্ত্রিসভার পথচলা শুরু হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সব সময়ই নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রাক্কালে অনেকেই বাদ পড়েন। এবারও সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার অনেক নতুন মুখ আসবে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের কয়েকজন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা করেননি। তবে মন্ত্রিসভায় নতুনদের প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়ে এক ধরনের ইতিবাচক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে আসা এমপিরা প্রাধান্য পেতে পারেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকেই বাদ পড়তে পারেন। বিশেষ করে দায়িত্ব পালনের বেলায় যারা খুব একটা দক্ষতা দেখাতে পারেননি, তারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন না।

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে কারা থাকবেন, তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অর্থমন্ত্রী হতে পারেন। এ পদে তার পাশাপাশি জামালপুর-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রী না হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী হতে পারেন, এমন আলোচনাও আছে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বর্তমানে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেতে পারেন। আরেক যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনিও নতুন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক মন্ত্রিসভায় থাকবেন কি না, তা নিয়েও গুঞ্জন আছে।

এ মেয়াদে সাবেক আমলাকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। টেকনোক্র্যাট কোটায় দেখা যেতে পারে দু-একজন অর্থনীতিবিদকেও, যারা অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় কাজ করবেন। পাশাপাশি সাবেক সচিব সাজ্জাদুল হাসান ও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. সাদিকও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। আলোচনা আছে, ড. সাদিককে শিক্ষা এবং সাজ্জাদুল হাসানকে বেসামরিক বিমান পরিবহনের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়া খাগড়াছড়ির কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও এবার মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।

নতুন মন্ত্রিসভা কেমন হতে পারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, “এটি আমার বিষয় নয়। তারপরও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা আছে, তা পূরণে যাদের যোগ্য মনে করবেন, তাদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটা একমাত্র তারই এখতিয়ার।”

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় শক্ত রাজনৈতিক অবয়ব থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এবারে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের অন্যতম সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে মন্ত্রিসভায় দেখা যেতে পারে। প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও শাজাহান খানের মন্ত্রিসভায় থাকার সম্ভাবনা আছে।

এ ছাড়া মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন সাতবারের নির্বাচিত এমপি আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মির্জা আজম। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হবেন নাকি চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন, তা নিয়েও আলোচনা আছে। ময়মনসিংহ থেকে মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন মে. জে. (অব.) আবদুস সালামও।

অনেকে বলছেন, এবারের মন্ত্রিসভায় তরুণ মুখ থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে চাঁদপুর থেকে নির্বাচিত ড. সেলিম মাহমুদ, ঢাকার মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মাশরাফি বিন মর্তুজা কিংবা নাজমুল হাসান পাপনকে মন্ত্রিসভায় দেখা গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সবকিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ওপর।

তবে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, মন্ত্রিসভায় ১৪ দলের শরিকদের না রাখার সম্ভাবনাই বেশি। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি এবার মন্ত্রিসভায় থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায় আওয়ামী লীগ। ওই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ইতিহাস গড়ে বিজয় হয় আওয়ামী লীগের।

এর পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের রেকর্ড গড়তে চলেছেন। 
 

Link copied!