• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫
শিশুদের ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে

মুগদা হাসপাতালে ৫ ঘণ্টায় ৮৭ শিশু ভর্তি


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৩, ০৯:৫১ পিএম
মুগদা হাসপাতালে ৫ ঘণ্টায় ৮৭ শিশু ভর্তি
মুগ্দা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা। ছবি-সংবাদ প্রকাশ

ডেঙ্গুর আতংক পিছু ছাড়ছে না রাজধানীবাসীর। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই রোগে। শিশুদের কাছে এই রোগ ঈশ্বর প্রদত্ত, ‘দুষ্টুমির শাস্তি’। অভিভাবকরা বলছেন, চরম আতংকের। মাত্র সাড়ে ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে ৮৭ শিশু-কিশোর ভর্তি হয়েছে মুগদা হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে।

সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুরে কথা হয় ১২ বছরের কিশোর শামীম’র সঙ্গে। সে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ধলপুর থেকে এসে ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডে।

শামীম বলে, “১ তারিখ থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি। আজকে (সোমবার) সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছি। ভালো লাগছে না আমার। বাড়িতেই ভালো ছিলাম। অনেক দুর্বল হয়ে গেছি। বাড়িতে অনেক দুষ্টুমি করতাম। খেলে বেড়াইতাম। কোনটার শাস্তি যে আল্লাহ্ আমাকে দিচ্ছে। কবে যে বাড়ি যাবো?”

শামীমের মত অনেককেই পাওয়া যায় হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে। যাদের কেউ ছাড়পত্র পেয়ে খুশি। আবার কেউ অন্যকে বাড়ি যেতে দেখলে, কেবলই প্রশ্ন, ‘বাড়ি যাবো কবে ?’

৫০০ শয্যার হাসপাতালটিতে সোমবারে (৭ আগস্ট) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ১০৩ জন, পূর্বের রোগী ছিল ৪৮৬ জন। একইদিনে মৃত্যু হয় ১ জনের ও ছাড়পত্র নেয় ১২৬ জন রোগী।

শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে জানা যায়, একইদিনে সকাল ৮ থেকে দুপুর দেড়টা (সাড়ে ৫ ঘণ্টা) পর্যন্ত ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত মুগদা হাসপাতালে প্রায় ৬ হাজার ৬৩৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। একই সময় পর্যন্ত ঢাকা মহানগরে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৫ হাজার ৬০১ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৪৮ জনের।

পুরান ঢাকা থেকে আসা ১০ বছর বয়সী মো. শাফিন বলে, “সারদিন বেডে (শয্যা) শুয়ে মোবাইলে গেইম খেলছি। বাড়িতে থাকলে স্কুল থেকে ফিরে খেলতে বের হই। আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমার সব বন্ধ হয়ে গেছে। কবে বাড়ি যাবো, মাকে প্রশ্ন করলে, খালি বলে সুস্থ হলে তারপর। আর কতদিন হাসপাতালে থাকবো। অনেক মানুষ এখানে। অনেক মানুষের গ্যাঞ্জামে ভালো লাগে না”

জুড়াইন রেলগেইট এলাকা থেকে ভর্তি হওয়া সাব্বির বলে, “আজকে আমার অনেক ভালো লাগছে। অনেক দিন পর বাড়িতে যাব। এখানে শুধু শুয়ে থাকতাম। কতদিন স্কুলে যাইনি। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নাই। ভালো লাগছে না কিছু। বাড়িতে গিয়ে কয়েকদিন রেস্ট নিব। তারপরে আবার আগের মত খেলে বেড়াবো, স্কুলে যাব। এতদিন মনে হচ্ছিলো শাস্তি দিচ্ছে কেউ।”

গোলাপবাগ এলাকার তায়েব বলে, আজকে ছুটি দিছে আমাকে। বাড়ি যাব বলে ভালো লাগছে। কিন্তু ওখানেও নাকি ১৫ দিন রেস্ট নিতে হবে। রেস্ট নেয়া হলেই আবার খেলাধুলা শুরু করবো। ডেঙ্গু রোগ আসলেই একটা শাস্তি।”

আড়াই বছর বয়সী শিহাবের মা লাকী বলেন, “আমার বাচ্চাটা আগের থেকে অনেকটা সুস্থ। খুব জ¦র ছিল। পরশুদিন রাত ২ টায় ভর্তি করাইছি হাসপাতালে। কি যে টেনশেনে ছিলাম, বোঝাতে পারব না! ছোট বাচ্চা কিছু বলতেও পারছে না। শুধু আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি। তিনি আমার ডাক শুনছে। সকলে দোয়া রাখিয়েন বাচ্চাটার জন্য।”

লিজা নামে অপর এক মা বলেন, “আমার অনেক সাধনার দুইটা বাচ্চা। আতংকে আছি। সুস্থ হচ্ছে আবার জ¦র আসছে। আল্লাহ্ যেন আমার বাচ্চাটাকে সুস্থ করে দেন।”

Link copied!