• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৪ জনের মৃত্যু, মাটির নিচে ছিল অবৈধ সংযোগ


বিজন কুমার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৩, ১০:৩৩ পিএম
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ৪ জনের মৃত্যু, মাটির নিচে ছিল অবৈধ সংযোগ

রাজধানীতে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একই পরিবারের তিনজনসহ মোট চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ থেকেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে মিরপুরের ঝিলপাড় বস্তি সংলগ্ন কমার্স কলেজ রোডে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বললে তারা এ কথা জানান।

এর আগে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে প্রবল বৃষ্টিতে এই এলাকায় জলাবাদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পরে সেই জলাবদ্ধতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় চারজনের। মৃতদের মধ্যে তিনজন একই পরিবারের। তারা হলেন মো. মিজান (৩০), তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৫) ও মেয়ে লিমা (৭)। এই দম্পতির সাত মাস বয়সী ছেলে হোসাইনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত অন্য ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ অনিক (২০)।

এদিকে ঘটনার পরদিন ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের ভিড় চোখে পড়লেও, বৈদ্যুতিক সংযোগের কোনো তার ছেঁড়া বা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়নি। তবে একটি দেয়ালে সিমেন্ট ও বালুর প্লাস্টার ভেদ করে বৈদ্যুতিক একটি তারের অংশ দেখা যায়। এছাড়াও খানিক দূরে রাস্তার ফুটপাত সংলগ্ন তারে সংযোগও লক্ষ্য করা যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব তার মাটির নিচ দিয়ে বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবি, ঘটনাস্থলে বিদ্যুতের কোনো অবৈধ সংযোগ নেই।

সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে কথা হয় স্থানীয় এক যুবক মকবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, “একটি পরিবারের ৪ জন রাস্তার ফুটপাত ধরে হেঁটে যাওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়ে যায়। এসময় ওখানে জুয়েল ও অনিক নামের দুজন বসে ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা পানিতে ছটফট শুরু করলে জুয়েল ও অনিক তাদের বাঁচাতে যান। এসময় জুয়েল পানিতে থাকা কারেন্টের বিষয়টি (বিদ্যুৎ) বুঝতে পারে। কিন্তু অনিক কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই পরিবারের সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে  মারা যায়। রাস্তায় কোনো কারেন্টের তার (বৈদ্যুতিক সংযোগের তার) পড়ে থাকতে দেখিনি। কিন্তু ওখানে সিমেন্ট দিয়ে ঢাকা একটি অবৈধ সংযোগ আছে। সেখান থেকে এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা দরকার।”

মকবুলের কথা বলার সময় পাশেই বসে থাকা মোক্তার হোসেন বলেন, “ডেসকোর (ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড) লোকজন যদি ভালো উদ্যোগ নিতো, তাহলে তাদের মৃত্যু হতো না।“ এসময় তিনিও এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

ঘটনার সময় ডেসকো কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছিল কিনা এ  ব্যাপারে কথা হয় প্রত্যক্ষদর্শী শরীফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখানে এর আগে এমন পানি জমে থাকেনি। জমে থাকা রাস্তার পানিতে তিনজনকে দেখতে পেয়ে ডেসকোর ১৬১২০ নম্বরে কল দিয়ে জানাই। কিন্তু তারা লাইন বন্ধ করেনি। পরে তাদের বাঁশ দিয়ে ঠেলে সরিয়ে এনে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এই সময়ের ব্যবধান প্রায় ৪৫ মিনিট। ডেসকোর লোকেরা টাকা খেয়ে মাটির নিচ দিয়ে চোরা লাইন (অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ) বস্তিতে দেয়।”

এ বিষয়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) সেকশন ৬ এর কার্যালয়ে গিয়ে কথা হয় সহকারী কমপ্লেইন সুপার ভাইজার এস এম মনজুর রশিদের সঙ্গে। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমরা রাত ১০টা ২৫ মিনিটে খবর পাই। এরপর ১০টা ২৬ মিনিটে লাইন বন্ধ করা হয়। পরে ৫ থেকে ৬ জনকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। সেখানে তারা ট্রান্সফরমার পরীক্ষা করে লাইনে কোনো সমস্যা পায়নি। পরে ঊর্ধ্বতন স্যারদের সঙ্গে কথা বলে সংযোগ দেওয়া হয়।”

মাটির নিচের থাকা অবৈধ সংযোগ এবং ঘটনার দীর্ঘ সময় পর সংযোগ বন্ধ করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি এই বিষয়ে জানি না। আমাদের কেউ কিছু খুঁজে পায়নি। আমাদের লাইন ঠিক থাকায় পরবর্তীতে চালু করা হয়। খবর পাওয়ার পরেই বন্ধ করা হয়। তাদের অভিযোগ ভুল। এই বিষয়ে আমাদের কাছে এভিডেন্স (প্রমাণ) রয়েছে।”

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিন বলেন, “এ ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। অনিকের বাবা বাবুল মিয়া অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ঘটনাটি তদন্ত সাপেক্ষ হওয়ায় অন্যান্য সংস্থাকে আমরা জানাচ্ছি। এর দায়ভার কার এটা আমরা জানতে চাচ্ছি?”

Link copied!