• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

সবকিছু যদি ইচ্ছেমতো হতো!


ইশতিয়াক হোসেন
প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২২, ০৯:২৫ পিএম
সবকিছু যদি ইচ্ছেমতো হতো!

আপনি কি ওদের একজন, যাদের খুব সহজেই মন খারাপ হয়। আগের বা এখনকার কোনো কারণে কিংবা কোনো জটিলতা বা কারও কথায় হয়তো আপনার মন খারাপ। সারা দিন এমনকি রাতেও মাথায় সেটা ঘুরপাক খাচ্ছে। দেখুন, নেতিবাচক কোনো কিছু মনের ওপর প্রভাব থাকবেই। এগুলো মনে ধরে রেখে কষ্ট পাওয়া বা রাগ হয়ে থাকা, চিন্তা করা বুদ্ধি ও সৃজনশীলতাকে কমিয়ে দেয়ে। হয়তো অত্যন্ত  প্রয়োজনীয় কাজ না করে অযথা অন্যের কথা ভেবে সময় নষ্ট হচ্ছে। মনমতো জীবন গড়ে তুলতে অভ্যাস করুন নেতিবাচক প্রভাবকগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার।

যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ—এ কথার সঙ্গে সবাই পরিচিত। মন প্রায় সব সময় অতীত অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে। কখনো অতীত ভেবে দুঃখী হই আমরা। অথবা ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হই। অতীত ভেবে সময় ও শক্তি উভয়ই নষ্ট হয়। অথচ এই সময় কত কাজ এগিয়ে নেওয়া যেত। অন্তত ভবিষ্যৎ নিয়ে সৃষ্টিশীল চিন্তা করা যেত। কাজেই চিন্তাভাবনা থেকে অতীতকে দূর করে দিই। অতীতের সঙ্গে সমঝোতা করি ও পরিকল্পনা অনুযায়ী মনমতো ভবিষ্যৎ সাজাই।

আচ্ছা, দুশ্চিন্তা আর জীবনকে উপলব্ধি করা কীভাবে একসঙ্গে সম্ভব? কারণ ব্যর্থতা, জটিলতা, অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি জীবনকে বিষাদময় করে। এর ফলে দেখা দেয় মানসিক চাপ। বাড়ে হতাশা। সবকিছু মনমতো হতে হলে এসব নিয়ে বেঁচে থাকা নয়। দুশ্চিন্তামুক্ত হওয়া কঠিন কাজ নয়। কিছু নিয়ে অতিরিক্ত ভাবা বন্ধ করুন। অতীত- ভবিষ্যতে না থেকে মনকে বর্তমানে রাখুন।

রেগে গেলাম তো হেরে গেলাম। জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়ার গ্লানি আজীবন পঙ্গুত্ব ডেকে আনে। রাগ নামের এই বিধ্বংসী অনুভূতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের অন্তরায়। কাজেই আপনার মনের মতো জীবন পেতে হলে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করুন। 

নিখুঁত হওয়ার অনুশীলন জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। তাই চেষ্টা করবেন যেন জীবনের প্রতিটা বিষয় নিখুঁত হয়। ধরুন আপনার জামাকাপড়, কথাবার্তা, হাঁটাচলা এমনকি বন্ধুবান্ধব জীবনসঙ্গী সবই হবে নিখুঁত মনমতো। তবে খেয়াল রাখতে হবে এই প্রচেষ্টায় যেন আবার অভিযোগের বাতিক পেয়ে না বসে। এখন সবকিছুই যদি যথার্থ, সঠিক বা নিখুঁত হয়, তবে উন্নয়নের সুযোগ থাকে না। অর্থাৎ মানুষের চাহিদার শেষ নেই। কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা আপনার নির্মল আনন্দকে ম্লান করে দিতে পারে। কারণ, অভিযোগ বিরক্তির উদ্রেক করে। কিছু বিষয় প্রশান্তি এলেও সবকিছুতেই ভুল ধরা পরে। সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা ও কাজে ব্যাঘাত দেখা দেয়। 

ছন্দময় জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন কার ভালো লাগে? এক কাপ চা নিয়ে দারুণ একটি সিনেমা দেখছেন, হঠাৎ মোবাইলে নোটিফিকেশন বেজে উঠল। শুধু মোবাইল নয়, আধুনিক জীবনে এমন অনেক জিনিস আপনার স্বাচ্ছন্দ্যের ছন্দপতনের কারণ হতে পারে। ইন্টারনেট, ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদির আসক্তি সৃষ্টিশীল কর্মময় সফল জীবনের পথে বড় বাধা। এ আসক্তি থেকে বের হয়ে ঘুরে আসুন কোনো নির্জন পার্ক থেকে একাকী। অথবা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। মনের গণ্ডিকে নির্দিষ্ট না করে বরং একে স্বাভাবিক গতিতে ছেড়ে দিন। 

অন্যকে খুশি করার চেষ্টা করেন সব সময়? এই অভ্যাস আপনাকে নিজের আকাঙ্ক্ষা ইচ্ছা-অনিচ্ছা থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অন্যের পছন্দ দিয়ে আপনার চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। নিজের মনের আশা, পছন্দ ইচ্ছা জানতে চেষ্টা করুন। অন্যের চোখে খারাপ ভালো হওয়া আপনার হাতে নেই। প্রত্যেকেই নিজ আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়। কাজেই সময় নষ্ট না করে নিজেকে নিয়েই ভাবুন। 

আমাদের মন কখনোই বাধা মানে না। কখন কী চেয়ে বসে ঠিক নেই। মনের চাহিদা শিশুকাল থেকে প্রাপ্তবয়স কালে ভিন্ন হয়। ব্যক্তি-সামাজিক পারিপার্শ্বিকতা আমাদের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার ওপর প্রভাব রাখে। কাজেই মনমতো জীবনের নির্দিষ্ট কোনো কাঠামো নেই। এখন অল্পতে তুষ্ট থাকাই হলো সবচেয়ে সহজ উপায়। মনমতো জীবন গড়ার কৌশল।

Link copied!