• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২, ১০ মুহররম ১৪৪৬

খোঁচা আর দোষারোপে প্রকাশ্যে দুই প্রজন্মের লড়াই


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩১, ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
খোঁচা আর দোষারোপে প্রকাশ্যে দুই প্রজন্মের লড়াই

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। দেশটির নির্বাচনের প্রচারের শেষ ধাপে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস ও রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভোটারদের উদ্দেশে তাদের সমাপনী বক্তব্য দিয়েছেন।

রাজনীতি বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত অপমান-দোষারোপে ভরপুর এই বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছে যেন আলাদা দুই প্রজন্মের লড়াই প্রকাশ্যে এসেছে। নিজেদের সমাপনী বক্তব্যে দুই প্রার্থীই বেছে নিয়েছেন ব্যক্তিগত অপমান ও দোষারোপের পথ। বিশেষত কমলা হ্যারিসের বক্তব্যের স্থানটিই যেন ট্রাম্পের জন্য বড় খোঁচা। 

প্রায় চার বছর আগে ক্যাপিটল দাঙ্গার আগে যে জায়গায় ডোনাল্ড ট্রাম্প বক্তব্য রেখেছিলেন, কমলা হ্যারিসও সেখানেই বক্তব্য দিয়েছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ার অ্যালেন্টাউনে প্রচারণা সমাবেশে তার বক্তব্য দেন।

রাজনীতি বিশ্লেষক ইয়োসি মেকেলবার্গ বলেছেন, “এই বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও অপমানের মধ্য দিয়ে চলছে। দেশের উন্নয়নে গঠনমূলক কথাবার্তা হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দুই প্রার্থী যেন একে অপরকে দুই প্রান্তে ফেলে দিতে চেয়েছেন। অথচ তাদের বক্তব্যের মূল স্তম্ভ হওয়া উচিত ছিল গণতন্ত্র।”

বক্তব্যের শুরুতেই কমলা হ্যারিস বলেন, “ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার নারীদের গর্ভধারণ করতে বাধ্য করবেন…আপনারা প্রজেক্ট ২০২৫ গুগল করুন। যদিও ট্রাম্প এ ধরনের কিছু করার পরিকল্পনা করছেন, সে রকম কোনো প্রমাণ এখনো মেলেনি।”

তিনি ভোটারদের নির্বাচনের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে বলেন, “এই নির্বাচন সম্ভবত আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট এবং এর মানে স্বাধীনতা ও বিশৃঙ্খলার মধ্য থেকে একটিকে বেছে নেওয়া। এর মাধ্যমে মার্কিন ভোটাররা সবচেয়ে অসাধারণ কাহিনির পরবর্তী অধ্যায় লিখতে পারেন।”

যথারীতি সমাপনী বক্তব্যের বড় একটা সময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, প্রায় চার বছর আগে এই স্থানে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাঁড়িয়েছিলেন এবং জনগণের ইচ্ছাকে দমন করার জন্য সশস্ত্র জনতাকে পাঠিয়েছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বড় একটি সমস্যা স্বীকার করে তিনি বলেন, “এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো খরচ কমানো, যা মহামারির আগেও বাড়ছিল এবং এখনো অনেক বেশি। আমরা ট্রাম্পের কৌতুক করে বলা বাইডেনোমিক্সের পথে হাঁটছি না। বরং নতুনভাবে এগিয়ে নেব দেশকে।”

সমাপনী বক্তব্যে গর্ভপাতের অধিকার রক্ষারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “মানুষ তাদের নিজের শরীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মৌলিক স্বাধীনতা রাখে।”

অন্যদিকে ট্রাম্পের বক্তব্য শুরু এক প্রশ্ন দিয়ে, চার বছর আগের তুলনায় আপনি কি এখন ভালো অবস্থায় আছেন? এরপর একে একে তিনি তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলো পুনরাবৃত্তি করেন। সেগুলোর মাঝে রয়েছে মূল্যস্ফীতি কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা। তার পর সেই ব্যক্তিগত আক্রমণের ফলা।

তিনি আগ্রাসী সুরেই বলেন, “কমলা আমাদের লজ্জিত করেছে। তার মাঝে নেতৃত্বের যোগ্যতা নেই।”

তিনি কমলা হ্যারিসকে আক্রমণ করে তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, কমলা হ্যারিস পুরো অযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে তিনি অযোগ্য।

ট্রাম্প বলেন, সে (কমলা) অযোগ্য এটা সবাই জানে। কেউ তাকে সম্মান করে না, কেউ তাকে বিশ্বাস করে না, কেউ তাকে সিরিয়াসলি নেয় না।

তিনি আরও বলেন, তাকে প্রেসিডেন্ট করার অর্থ হলো লাখ লাখ মানুষের জীবনের সঙ্গে জুয়া খেলা। তিনি (কমলা) আমাদের সবাইকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবেন। এ ছাড়া তিনি (ট্রাম্প) তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিরোধ করবেন বলেও জানান।

এ সময় ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ‘বর্বর মেশিন’ বলে আখ্যা দেন।

কমলার বদলে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে বাড়তি গুরুত্ব দেন তিনি। স্বভাবগত চালে প্রমাণ ছাড়া দাবি করেন, “ডেমোক্র্যাটরা নির্বাচনে কারচুপি করবে। ইতোমধ্যে তেমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।”

বক্তব্যকে আরও জোরদার করতেই তিনি পেনসিলভানিয়ার ল্যাঙ্কাস্টার কাউন্টির একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। সেখানকার কর্মকর্তারা এই সপ্তাহের শুরুতে বলেছিলেন যে, তারা ভোটার নিবন্ধন ফর্ম তদন্ত করছেন, যা জাল হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

২০২৪ সালের নির্বাচনে গণতন্ত্র, অর্থনীতি, অভিবাসন, জলবায়ু এমনকি বৈশ্বিক সংঘাতের মতো বিষয়গুলোও বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে গেছে। রিপাবলিকান প্রার্থী গুরুত্ব দিয়েছেন গণতন্ত্র রক্ষার কথায়। এজন্য অভিবাসী সংকট এবং যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে দিয়েছেন আলাদা গুরুত্ব। ট্রাম্প প্রতিনিধিত্ব করছেন আগের প্রজন্মের। তার এই প্রজন্মের মধ্যে রয়েছে আরব-আমেরিকান থেকে শুরু করে কৃষ্ণাঙ্গ ও লাতিন আমেরিকানরাও। যারা নতুন প্রজন্মের গর্ভপাত কিংবা এলজিবিটিকিউ প্লাস আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মও নয়।

তা ছাড়া রক্ষণশীল পুরুষ এমনকি আরব-আমেরিকানরাও কমলার ট্রান্সজেন্ডার সমর্থনকে মেনে নিতে পারছে না। তাদের অনেকের কাছে ট্রাম্পের মুখে উচ্চারিত গণতন্ত্র ও সত্যিকারের আমেরিকাকে রক্ষাই মূল বিষয়।

অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের বক্তব্য থেকে বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন তিনি নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করেন। নির্বাচনী প্রচারে বারবার তিনি নারী, অভিবাসীসহ আরও অনেকের স্বাধীনতা রক্ষার কথা বলছেন। তবে মূল্যবোধ এবং স্বাধীনতা রক্ষার প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে স্পষ্ট করা হবে, তা কমলা বোঝাতে পারেননি। তাই অনেক নারী ভোটারও যে কমলার দিকে ঝুঁকছেন না তা অন্তত জরিপে বোঝা যাচ্ছে। কমলার সামনে রক্ষণশীল, আরব-আমেরিকান, কৃষ্ণাঙ্গ, লিবারেল রিপাবলিকান এবং যারা কাকে ভোট দেবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারেননিÑ সবার সমর্থন আদায়ের শেষ সুযোগটি ছিল।

অনেকের মতে, তিনি তা বোধ হয় হারিয়েছেন। ফলে রেসের হার্ডলে এখনো কমলার সামনে রয়ে যাচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। আর ট্রাম্প? তার বক্তব্যের শুরুর প্রশ্নের মতোই। তিনি স্বাভাবিক স্রোতে এগোচ্ছেন।

সূত্র : সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস

Link copied!