• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

যে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছিল কোভিড


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৩, ১১:৫৮ এএম
যে প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছিল কোভিড

করোনাভাইরাস মহামারি তিন বছরে কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ। এর কারণে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, হতাশা, মাদকাসক্তি, হত্যা, গৃহ সহিংসতা, বিচ্ছেদ ও আত্মহত্যাও অনেক বেড়ে গেছে। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু এ ভাইরাসটি কীভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছিল কিংবা এর উৎস কি, তা এখনো নিশ্চিত নয়। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উৎসসংক্রান্ত প্রশ্নটি ক্রমেই চাপা পড়ে গিয়েছে।

আমরা যদি আরেকটি মহামারি মোকাবিলা করতে চাই, তাহলে চলমান মহামারির কারণ সম্পর্কে জানাটা জরুরি। করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকম গবেষণা হয়েছে, যার মধ্যে পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব রয়েছে, ঢুকে পড়েছে রাজনীতি। যদিও সেসব তত্ত্ব কিংবা যুক্তির কোনোটিই চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত হয়নি।

তবে সম্প্রতি একদল বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, কীভাবে প্রথম কোভিড-১৯ ভাইরাস মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়েছিল, তার ‘সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ’ তারা খুঁজে পেয়েছেন।

করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য উৎস হিসাবে একটি নির্দিষ্ট প্রাণী প্রজাতিকে লক্ষ্য করে গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। নতুন এই গবেষণার তথ্যকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।

রোববার (২৬ মার্চ) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। ২০ মার্চ এই গবেষণার ফলাফল একটি অনলাইন জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়, তিন বছর আগে উহানের হুয়ানান বন্য প্রাণীর বাজার থেকে সংগ্রহ করা নমুনার ওপর ভিত্তি করে এসব বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। শুরু থেকেই ধারণা করা হয়েছিল যে ওই বাজার থেকেই ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। ২০২০ সালের প্রথম দিকে ওই বাজার থেকে নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছিল চীনের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।

সেসব নমুনার জেনেটিক তথ্য বের করা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের একটি দল কোভিড-১৯ ভাইরাস বিস্তারের জন্য মধ্যবর্তী বাহক হিসেবে ‘রেকুন ডগ’ নামে একটি কুকুরজাতীয় প্রাণীকে শনাক্ত করেছেন, যেখানে থেকে ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বাজারের যে জায়গা থেকে সংগ্রহ করা নমুনায় সার্স কোভ-২ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং যেখানে বন্য স্তন্যপায়ী প্রাণী মাংসের জন্য বাজারে বিক্রি করা হচ্ছিল, সেখানে এই রেকুন কুকুরের লালাও পাওয়া গেছে।

রেকুন ডগ হচ্ছে এমন একটি ছোট আকারের কুকুর-সদৃশ প্রাণী, যার সঙ্গে শিয়ালেরও অনেক মিল আছে। পূর্ব এশিয়ার চীন, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপের বেশ কিছু অঞ্চলে এ প্রাণীটির আবাসস্থল রয়েছে।

প্যারিসের ইকোলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক ড. ফ্লোরেন্স ডেবারে বলেন, “আমরা কম্পিউটার স্ক্রিনে যেসব ফলাফল পেয়েছি, তা হলো রেকুন কুকুর। সুতরাং আমরা একই জায়গায় একই সঙ্গে ভাইরাস এবং (বাহক) প্রাণী খুঁজে পেয়েছি। এর মানে এই না যে ওই কুকুরগুলো সংক্রমিত হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা যত ব্যাখ্যা পেয়েছি, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা।”

এ গবেষণার সঙ্গে জড়িত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এডি হোমসের বলেন, “ভাইরাসটি কীভাবে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে, এটাই তার সবচেয়ে ভালো প্রমাণ। আমরা আর কখনোই সেই বাহক প্রাণীটিকে খুঁজে পাবো না, কারণ সেটি (তথ্যপ্রমাণ) হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটি অসাধারণ যে জেনেটিক তথ্যের মাধ্যমে সেটাকে খুঁজে পাওয়া গেছে- আর এর মাধ্যমে শুধু সেটা কোন প্রজাতি তাই নয়, তারা বাজারের ঠিক কোন জায়গায় ছিল, সেটাও আমরা জানতে পারছি।”

যদিও করোনাভাইরাসের উৎস খোঁজার ব্যাপক অনুসন্ধান এবং দীর্ঘদিন আগেই সেই বাজারটি বন্ধ করে দেওয়া, বিক্রির জন্য আনা প্রাণীগুলোকে মেরে ফেলার কারণে এই বিষয়ে একেবারে নিশ্চিত কোনো প্রমাণ নেই।

ভাইরাসের উৎপত্তি রহস্য নিয়ে তদন্ত করে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, চীনের কোনো গবেষণাগার থেকে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটেছে। তবে চীনের সরকার তাদের এমন দাবি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।

Link copied!