স্বাধীন শিখ রাষ্ট্র ‘খালিস্তানপন্থী’ নেতা অমৃতপাল সিংয়ের একটি বৈঠককে কেন্দ্র করে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের সব পুলিশের ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। পলাতক অমৃতপাল সিং বাথিন্ডায় সমাবেশের ডাক দেওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, এক সহযোগীকে ছাড়ানোর জন্য একটি থানা দখল করার পর থেকে গ্রেপ্তার এড়াচ্ছেন অমৃতপাল। কট্টরপন্থী এই শিখ প্রচারককে প্রায়শই সশস্ত্র সমর্থকদের সহায়তা করতে দেখা যায়। তিনি প্রকাশ্যে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘোষণার পাশাপাশি খালিস্তান নামে একটি রাষ্ট্র গঠনের বিষয়েও বিবৃতি দিয়েছেন।
পাঞ্জাব পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজিপি) গৌরব যাদবের বরাতে সূত্রটি বলছে, ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব গেজেটেড এবং নন-গেজেটেড অফিসারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আগে অনুমোদিত সব ছুটিও বাতিল করা হয়েছে।
গত মাসে দুটি ভিডিও বার্তায় অমৃতসরের অকাল তখত থেকে বাথিন্ডার দমদমা সাহিব পর্যন্ত একটি ধর্মীয় মিছিল বের করতে বলেছিলেন অমৃত সিং।
এ বিষয়ে শীর্ষ গুরুদ্বার সংস্থা শিরোমণি গুরুদ্বার প্রবন্ধক কমিটি (এসজিপিসি) জানায়, শিখ পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করার পর কেবল অকাল তখত প্রধানই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এসজিপিসি’র সাধারণ সম্পাদক গুরচরণ সিং গ্রেওয়াল সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “এটা অমৃতপাল সিংয়ের ব্যক্তিগত ইচ্ছা। ‘সরবত খালসা’ ডাকা বা না ডাকা অকাল তখতের জথেদারের এখতিয়ার। বর্তমান পরিস্থিতিতে কী করা দরকার তা জথেদার দেখবেন।”
‘সরবত খালসা’ জামাত সবশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি।
অমৃতপাল সিংকে ধরতে ভারতজুড়ে পুলিশের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে নিজের বেশভূষাও বদলে ফেলেছেন তিনি। ভারতের পুলিশ অমৃতপালের কোনো কুল কিনারা করতে না পারলেও কখনও পঞ্জাব, কখনও হরিয়ানা কিংবা নয়াদিল্লির সিসি ক্যামেরায় বার বার নানা বেশে নানা রূপে ধরা পরছেন তিনি।
ভারতের পাঞ্জাবের অন্যতম নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী শিখ সম্প্রদায়। যারা দীর্ঘদিন থেকে ভারত থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র ‘খালিস্তানের’ দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, জম্মু-কাশ্মীর ও রাজস্থানের অংশবিশেষ নিয়ে প্রস্তাবিত এই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে শিখদের পছন্দ চণ্ডীগড় শহর। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে তারা। ওই আন্দোলন ‘খালিস্তানি’ আন্দোলন নামে পরিচিত।
১৯৮০-এর দশকের দিকে সেই আন্দোলন দমনে ভারত সরকার হাজার হাজার শিখ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছিল। তাদের সেই আন্দোলন সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে দীর্ঘ সময়। শিখদের পৃথক মাতৃভূমির স্বপ্নকে পুনরায় পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং।
অমৃতপালের বিরুদ্ধে গোষ্ঠী হিংসা ছড়াতে বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণ দেওয়া, পুলিশকে আক্রমণসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। তবে ১৮ মার্চ থেকে পলাতক রয়েছেন তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :