অপহরণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত ভারতের সাবেক সংসদ সদস্য ও তার ভাইকে টেলিভিশনে লাইভ চলাকালেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। নিহত আতিক আহমেদ হত্যা ও হামলার অভিযোগে পুলিশ কাছে আটক ছিলেন। তাকে গুলি করার সময় তিনি পুলিশি হেফাজতেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন।
রোববার (১৬ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, পুলিশের সঙ্গে থাকা অবস্থায় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন এ সময় তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করা হয়।
দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, সাংবাদিক হিসেবে পরিচয়দাকরী তিনজন ব্যক্তি গুলি চালানোর পর দ্রুত আত্মসমর্পণ করে। পরে তাদের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। কয়েকদিন আগে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আতিক আহমেদের কিশোর ছেলে।
এর আগে সাবেক এ রাজনীতিবিদ দাবি করেছিলেন পুলিশের কাছে তার জীবনের শঙ্কা রয়েছে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, শনিবার রাতে আতিক এবং তার ভাই আশরাফকে মেডিকেল পরীক্ষা করানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। হাসপাতালের পথে হাঁটতে হাঁটতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আতিক। সেই সময়ই আচমকা আতিকের মাথায় গুলি লাগে। লুটিয়ে পড়েন আতিক। তার পর তাকে ও আশরাফকে ঘিরে ধরে গুলি চালাতে থাকে দুষ্কৃতীরা। সেখানেই দু’ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
এ সপ্তাহের শুরুতে আতিক আহমেদের কিশোর ছেলে আসাদ এবং হত্যা মামলার ওয়ান্টেড আরেক ব্যক্তি পুলিশের হাতে নিহত হয়। পুলিশ জানিয়েছে তারা বন্দুকযুদ্ধ নিহত হয়েছে।
ফুটেজে আহমেদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে তিনি তার ছেলের দাফনে যোগ দিয়েছিলেন কি-না। ক্যামেরায় তার শেষ কথা ছিল, ‘তারা আমাদের নেয়নি, তাই আমরা যাইনি।’
ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ সদস্য ও একজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে পুলিশের সামনে আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছেন ‘গ্যাংস্টার’ আতিক আহমেদ এবং তার ভাই আশরাফ।
এ ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে যোগী সরকার। প্রয়াগরাজসহ উত্তরপ্রদেশের সব জেলায় জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা।
প্রয়াগরাজে এমন ঘটনার পর উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
আতিক আহমেদের মতো এরকম ‘হাই প্রোফাইল’ বন্দীকে মেডিকেল পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়ার পথে এরকম ঘটনা নিয়ে ইতোমধ্যেই সরব হয়েছেন এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব।
টুইটে তিনি লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশ অপরাধের পরাকাষ্ঠা হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের মনোবল আরও মজবুত হচ্ছে। যখন পুলিশের হেফাজতে থাকা একজনকে এভাবে খুন করা যেতে পারে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়? মানুষের মধ্যে ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে। মনে হচ্ছে, কিছু মানুষ সব জেনে বুঝে এমন বাতাবরণ তৈরি করছেন।”
আনন্দবাজার আরও জানিয়েছে, সাবেক সংসদ সদস্য আতিকের বিরুদ্ধে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন থানায় ছিল শতাধিক মামলা। ২০০৫ সালে বিএসপি বিধায়ক রাজু পালের খুনে নাম জড়িয়েছিল আতিকের। ফেব্রুয়ারিতে রাজু খুনের প্রত্যক্ষদর্শী উমেশ পালের হত্যাকাণ্ডেও মূল অভিযুক্ত ছিলেন আতিক।
আতিক আহমেদ দেশটির সাবেক সংসদ সদস্য। তিনি এবং তার ভাই পুলিশি হেফাজতে ছিলেন। হত্যা এবং হামলার অভিযোগে কারণে তাদেরকে সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে নিয়ে আসা হয়েছিল। এছাড়া ২০১৯ সালে অপহরণের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।