• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

সুদানে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলা


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৩, ১১:১১ এএম
সুদানে ইইউ রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে হামলা

সুদানে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর সংঘর্ষ চতুর্থ দিনের মতো অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনায় জাতিসংঘের কর্মীসহ ১৮৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যেই দেশটিতে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত তার বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছেন। যদিও হামলায় রাষ্ট্রদূত গুরুতরভাবে আহত হননি।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। এতে বলা হয়, সুদানের সেনাবাহিনী এবং কুখ্যাত আধা সামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে ক্ষমতার লড়াই দেশটিকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং সেনা সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে। সুদানে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত আইদান ও’হারা দেশটির রাজধানী খার্তুমে তার বাসভবনে হামলার শিকার হয়েছেন। তবে আইরিশ এই কূটনীতিক ‘গুরুতরভাবে আহত হননি’ বলে আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন নিশ্চিত করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন এই হামলাকে ‘কূটনীতিকদের সুরক্ষাসংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার চরম লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছেন।

আইরিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন খার্তুমে হামলার শিকার রাষ্ট্রদূত আইদান ও’হারাকে ‘অসামান্য আইরিশ এবং ইউরোপীয় কূটনীতিক হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “তিনি সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও ইইউকে সেবা করছেন। আমরা তার সেবার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই এবং সুদানে সহিংসতা বন্ধ করার ও সংলাপ পুনরায় শুরু করার জন্য আহ্বান জানাই।”

এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল এক টুইট বার্তায় বলেন, “কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সুদানের কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক দায়িত্ব।”

ইইউর মুখপাত্র নাবিলা মাসরালি বলেন, “হামলার পর ইইউ প্রতিনিধি দলকে খার্তুম থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়নি। কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে অগ্রাধিকার রয়েছে এবং নিরাপত্তাব্যবস্থা মূল্যায়ন করা হচ্ছে।”

অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, চলমান নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং খার্তুমের বিমানবন্দর বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে মার্কিন কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে তিনি (সুদানে অবস্থানরত) সব আমেরিকানকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে’ পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে চলাফেরা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সুদানে জাতিসংঘের মিশনের প্রধান ভলকার পার্থেস রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮৫ জন নিহত এবং আরও ১৮০০ জন আহত হয়েছেন। তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অস্পষ্ট। তাই লড়াইয়ের ফলে ক্ষমতার ভারসাম্য কোথায় স্থানান্তরিত হচ্ছে, তা বলা খুব কঠিন।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘস্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল বলে পরিচিত সুদানের রাজধানীতে এই লড়াই নজিরবিহীন এবং এমনকি এটি বেশ দীর্ঘায়িতও হতে পারে। যদিও আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে কূটনীতিকরা সক্রিয় হতে শুরু করেছেন।

এর আগে সোমবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সুদানের যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে ‘অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ করার’ আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করে বলেন, লড়াইয়ের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেলে তা ‘দেশ ও অঞ্চলের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।’

সুদানিজ ডক্টরস ইউনিয়ন বলেছে, লড়াইয়ের কারণে খার্তুম এবং অন্যান্য শহরের একাধিক হাসপাতাল ‘ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু শহরের চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণ ‘পরিষেবার বাইরে’ রয়েছে।

খার্তুমের বাসিন্দা খুলুদ খায়ের বলেন, “এখানকার বাসিন্দারা কোথাও নিরাপদ না। বেসামরিক নাগরিকদের আপাতত ঘরে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানেও নিরাপদ না তারা।”

যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও আরব লিগসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই সংঘাত বন্ধে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে। দ্বন্দ্ব নিরসনে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে মিসর ও দক্ষিণ সুদান।

২০২১ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এর পর থেকে সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ‘স্বাধীন কাউন্সিলের’ নামে দেশ চালাচ্ছিলেন। এই স্বাধীন কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হলেন জেনারেল মোহামেদ হামদান দাগালো। অপর দিকে স্বাধীন কাউন্সিলের প্রধান হলেন জেনারেল আব্দেল ফাতাহ আল-বুরহান।

বেসামরিক সরকার গঠনের অংশ হিসেবে আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি নিয়েই সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনী বলছে, আরএসএফকে দুই বছরের মধ্যে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা হবে। কিন্তু আরএসএফ বলছে এই একীভূতকরণের প্রক্রিয়া যেন অন্তত ১০ বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরএসএফকে একীভূত করলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবে, এ নিয়েও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

Link copied!