বেলুচিস্তানে পুলিশের ভ্যানে বোমা হামলায় নিহত ৯

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তান প্রদেশে বোমা হামলায় পুলিশের অন্তত ৯ সদস্য নিহত ও আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার (৬ মার্চ) প্রদেশের বোলান এলাকায় বোমা হামলায় হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে বলে দেশটির পুলিশ নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম দ্য ডন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

বেলুচিস্তানের কাচির জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার মাহমুদ নোতেজাই বলেছেন, সিবি থেকে কোয়েটায় ফেরার পথে ক্যামব্রি সেতুতে বেলুচিস্তান কনস্ট্যাবুলারির সদস্যদের বহনকারী গাড়ি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটে।

তার মতে, একজন মোটরসাইকেলচালক সম্ভবত একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী। তার গাড়িটি পুলিশ ভ্যানে ধাক্কা দেয়। তবে হামলার প্রকৃত ধরন তদন্তের পর জানা যাবে। বোমা বিস্ফোরণে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধারের পর স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিস্ফোরণের পরপরই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ স্কোয়াড ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, বোলানের ওই এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং সন্দেহভাজন হামলাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে।

বেলুচিস্তান তথ্য বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আহত ব্যক্তিদের কোয়েটায় নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সরকারি হেলিকপ্টার বোলানে পাঠানো হয়েছে। কোয়েটার হাসপাতালগুলোতেও জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

বোমা বিস্ফোরণে যারা মারা গেছেন, তারা বেলুচিস্তান প্রাদেশিক পুলিশ বাহিনীর বিশেষ বিভাগ বেলুচিস্তান কনস্ট্যাবুলারির (বিসি) সদস্য। পুলিশের এই বিভাগের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান, কারাগারসহ স্পর্শকাতর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তাসেবা প্রদান করে।

তবে এখন পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

দেশটির পাহাড়ি অঞ্চল খাইবার-পাখতুনখাওয়া ও আফগান সীমান্ত-লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় ক্রমবর্ধমান হামলা বৃদ্ধির মাঝে বেলুচিস্তানে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত বছরের নভেম্বরে দেশটির নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সঙ্গে সরকারের শান্তি চুক্তির আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর এই বিদ্রোহী গোষ্ঠী দেশজুড়ে হামলা বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি বেলুচিস্তানের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোও তাদের সহিংস কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে টিটিপির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে।

বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর আব্দুল কুদুস বিজেনজো এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

হতাহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতরা কাপুরুষোচিত কাজের মাধ্যমে তাদের ঘৃণ্য লক্ষ্য অর্জন করতে চায়। তারা প্রদেশে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে ষড়যন্ত্র করছে। তবে তা কোনোভাবে সম্ভব হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, “জনগণের সমর্থনে এই ধরনের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।”

আব্দুল কুদুস বিজেনজো নিহতদের জাতীয় বীর বলে হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

এদিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা করে শহীদ পুলিশ সদস্যদের বীরত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

এ ছাড়া এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ। হামলায় মূল্যবান প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনিও।