মার্কিন সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা ও নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনার চাহিদা বেড়ে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নিতে শুরু করেছেন। এতে সোনার দাম পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় দৈনিক দরপতনের পথে রয়েছে।
মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের সময় সকাল ১টা ৪৫ মিনিটে স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমে এক সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন ৪ হাজার ১১৫ দশমিক ২৬ ডলারে দাঁড়ায়, যা ২০২০ সালের আগস্টের পর সবচেয়ে বড় দৈনিক পতন।
এর আগের দিন সোমবার সোনার দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ দশমিক ২১ ডলারে উঠেছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত সোনার দাম প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে, যা মূলত ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সুদের হার কমার সম্ভাবনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ক্রমাগত সোনা কেনার কারণে সম্ভব হয়েছে।
সোনা-রুপা ব্যবসায়ী তাই ওয়ং রয়টার্সকে বলেন, ‘দরপতন শুরুর পর গতকাল পর্যন্তও ক্রেতারা সোনা কিনছিলেন, কিন্তু এখন বাজারে দরপতনের অতি অস্থিরতা সতর্কবার্তা দিচ্ছে। অনেক বিনিয়োগকারী স্বল্প মেয়াদে মুনাফা তুলতে উৎসাহিত হচ্ছেন।’
ডলার সূচক ০ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ায় অন্য মুদ্রাধারীদের জন্য সোনা কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। কিটকো মেটালসের সিনিয়র বিশ্লেষক জিম উইকফ এক নোটে লিখেছেন, সপ্তাহের শুরুতে বাজারে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বাড়ায় নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে সোনা ও রুপার চাহিদা কিছুটা কমেছে।
সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, চলমান মার্কিন সরকারের অচলাবস্থা (শাটডাউন) শেষ হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণার ফলে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহে সোনার দাম স্থিতিশীল অবস্থায় যেতে পারে।
এদিকে স্পট সিলভার বা রুপার দাম ৭ দশমিক ৬ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে ৪৮ দশমিক ৪৯ ডলারে নেমে গেছে।
তাই ওয়ং বলেন, আজ রুপা ভয়াবহভাবে হোঁচট খেয়েছে এবং পুরো বাজারকেই নিচে নামিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে রুপার দাম রেকর্ড ৫৪ ডলারে পৌঁছেছিল, আর এখন ৫০ ডলারের নিচে। তাই সোনার দাম স্থিতিশীল থাকলে রুপার বাজারেও বড় ধরনের অস্থিরতা চলমান থাকবে।
অন্যদিকে, প্লাটিনামের দাম ৫ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫৪১ দশমিক ৮৫ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪১৭ দশমিক ২৫ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষা করছেন শুক্রবার প্রকাশিতব্য সেপ্টেম্বরের মার্কিন ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) জন্য। মার্কিন সরকার অচল থাকায় এটি প্রকাশে বিলম্বিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বার্ষিক ৩ দশমিক ১ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি দেখানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারণা, ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সপ্তাহের নীতিনির্ধারণী বৈঠকে সুদের হার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ বা ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাতে পারে।