রেকর্ড উচ্চতায় ওঠার পর বিশ্ববাজারে সোনার দামে হঠাৎ বড় পতন ঘটেছে। শুক্রবার এক দিনে এ মূল্য কমেছে ২ শতাংশেরও বেশি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনবিষয়ক নতুন মন্তব্য ও শক্তিশালী ডলারের প্রভাবে এই পতন ঘটে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সময় দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে (ইস্টার্ন টাইম) স্পট গোল্ডের দাম ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৪ হাজার ২১১ দশমিক ৪৮ ডলার। এর আগে একই সেশনে দাম ছুঁয়েছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৭৮ দশমিক ৬৯ ডলার। বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো স্বর্ণের মূল্য ৪ হাজার ৩০০ ডলারের সীমা অতিক্রম করেছিল। তবু পুরো সপ্তাহে মোট বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশে।
ডিসেম্বর সরবরাহের জন্য মার্কিন সোনার ফিউচার ২ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৪ হাজার ২১৩ দশমিক ৩০ ডলারে বন্ধ হয়। বিপরীতে, ডলার সূচক বেড়েছে ০ দশমিক ১ শতাংশ, যা বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনার দাম আরও ব্যয়বহুল করে তুলেছে।
বিশ্লেষক তাই ওয়ং বলেন, “ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নরম সুর বাজারের উত্তেজনা কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে।”
শুক্রবার ট্রাম্প নিশ্চিত করেন যে তিনি শিগগিরই চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য উত্তেজনা সাময়িকভাবে প্রশমিত হয় এবং বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ কিছুটা কমে আসে।
সাধারণত অনিশ্চয়তার সময় স্বর্ণকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে দেখা হয়। চলতি বছর এ ধাতুর দাম বেড়েছে ৬৪ শতাংশেরও বেশি। ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনার ক্রয়, ডলার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নেওয়া এবং ইটিএফ ফান্ডে প্রবাহ বৃদ্ধির মতো কারণগুলো এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুদের হার কমার সম্ভাবনাও এতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের পণ্যবিশ্লেষক সুকি কুপার বলেন, “আমরা ২০২৬ সালে স্বর্ণের গড় দাম ৪ হাজার ৪৮৮ ডলার হিসেবে ধরে রাখছি। তবে বাজারের বর্তমান কাঠামো দাম আরও বাড়ানোর সম্ভাবনাও তৈরি করছে।”
বাজারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ফেডারেল রিজার্ভ অক্টোবর ও ডিসেম্বরে দুটি ২৫ বেসিস পয়েন্ট হারে সুদ কমাতে পারে।
অন্যদিকে, এইচএসবিসি তাদের ২০২৫ সালের স্বর্ণের গড় মূল্য পূর্বাভাস ১০০ ডলার বাড়িয়ে প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ৪৫৫ ডলার করেছে এবং বলেছে, ২০২৬ সালে এটি ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে।
এশিয়ার বাজারে স্বর্ণের বাস্তব চাহিদা রেকর্ড দামের মধ্যেও স্থিতিশীল রয়েছে। ভারতের উৎসব মৌসুম ঘনিয়ে আসায় স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের প্রিমিয়াম বর্তমানে গত এক দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
শুধু স্বর্ণ নয়, রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও বড় ধস দেখা গেছে। রুপার মূল্য ৫ দশমিক ৬ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে ৫১ দশমিক ২০ ডলার, প্লাটিনামের দাম ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৬০৭ দশমিক ৮৫ ডলার, আর প্যালাডিয়ামের পতন ৭ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে ১ হাজার ৪৮৫ দশমিক ৫০ ডলারে দাঁড়িয়েছে।