দিল্লিতে আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনের একটি ছবি সোমবার (১৩ অক্টোবর) ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিটিতে দেখা যায়—সংবাদ সম্মেলনের সামনের সারিতে বসে রয়েছেন একাধিক ভারতীয় নারী সাংবাদিক।
মাত্র দুই দিন আগে, শুক্রবার, মুত্তাকির প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এডিটর্স গিল্ড অব ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়ান উইমেন্স প্রেস কর্পস এবং নেটওয়ার্ক অব উইমেন ইন মিডিয়া, ইন্ডিয়া একযোগে এই বৈষম্যকে 'লজ্জাজনক' ও 'গণতান্ত্রিক মূল্যবোধবিরোধী' বলে আখ্যা দেয়।
এমনকি বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেন, "এটি ভারতের নারীদের জন্য অবমাননাকর বার্তা।"
তীব্র সমালোচনার মুখে অবশেষে রোববার তড়িঘড়ি করে দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আফগান দূতাবাস, যেখানে নারী সাংবাদিকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।
মুত্তাকি দাবি করেন, “আগেরবার নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া ইচ্ছাকৃত ছিল না, বরং প্রযুক্তিগত কারণে তা ঘটেছে। হাতে সময় ছিল খুব কম।”
কিন্তু সাংবাদিকদের অনেকেই তার এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি। তারা স্মরণ করিয়ে দেন—আফগানিস্তানে নারীদের স্কুল, চাকরি ও ভ্রমণের অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ এখনো বহাল।
দ্বিতীয় সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকেরা তালেবান সরকারের নারীনীতি নিয়ে কঠিন প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। জবাবে মুত্তাকি বলেন, “আফগানিস্তানে এক কোটির বেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৮ লাখ নারী শিক্ষার্থী রয়েছেন। মাদরাসায় মেয়েরা স্নাতক পর্যন্ত পড়তে পারে। কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, তবে আমরা নারীদের শিক্ষা শরিয়াহ অনুযায়ী হারাম বলিনি।”
তবে সাংবাদিকেরা পাল্টা মনে করিয়ে দেন, ২০২১ সালের পর থেকে ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না; নারীদের চাকরি, লেখালেখি ও চলাফেরার ওপর কঠিন বিধিনিষেধ এখনো বহাল।
যদিও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দেয়—প্রথম সংবাদ সম্মেলনের সঙ্গে তাদের “কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না”, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি চাপেই দ্বিতীয়বার নারী সাংবাদিকদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভিয়েনা কনভেনশনের কূটনৈতিক রীতিনীতির কথা তুলে দিলেও সমালোচকেরা বলেন—“ভারতের মাটিতে নারীদের ঢুকতে না দেওয়াটা অমার্জনীয়।”