এক নারী চিকিৎসকের হিজাব টেনে নামানোর ঘটনায় তীব্র বিতর্কে জড়িয়েছেন ভারতের বিহার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলগুলো একে নারীর মর্যাদা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়েছে। বিবিসি বাংলা এ খবর জানিয়েছে।
সোমবার বিহার সচিবালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ১২০০-এর বেশি নবনিযুক্ত ‘আয়ুষ’ চিকিৎসকের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হচ্ছিল। ওই সময় হিজাব পরিহিত এক নারী চিকিৎসক নিয়োগপত্র নিতে এগিয়ে গেলে ৭৫ বছর বয়সী মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার হঠাৎ তার হিজাব টেনে নিচে নামান। ঘটনাটির ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী সম্রাট চৌধুরী তাকে থামানোর চেষ্টা করছেন। একই সঙ্গে সেখানে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্যসচিব দীপক কুমার ও রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মঙ্গল পান্ডেকে হাসতে দেখা যায়। এ দৃশ্য নিয়েও আলাদা করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠান শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ নীতীশ কুমার নিজেই একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে ১২৮৩ জন আয়ুষ চিকিৎসকের নিয়োগপত্র প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি অংশ নিয়েছেন। তবে হিজাব সংক্রান্ত ঘটনার কোনও উল্লেখ তিনি করেননি।
এই ঘটনার পর বিরোধী দলগুলো নীতীশ কুমারের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় সমালোচনায় নামে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন (এআইএমআইএম) এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছে। দলটির দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে যদি ন্যূনতম নীতিবোধ ও লজ্জা অবশিষ্ট থাকে, তবে তার অবিলম্বে ক্ষমা চাওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে এমন আচরণ করলে রাজ্যে নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে।
বিরোধী কংগ্রেস দলও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি পোস্ট করে নীতীশ কুমারের পদত্যাগ দাবি করেছে। কংগ্রেসের বক্তব্যে বলা হয়েছে, রাজ্যের সর্বোচ্চ পদে আসীন ব্যক্তি প্রকাশ্যে এমন কাজ করছেন, এতে প্রমাণ হয়, বিহারে নারীরা কতটা নিরাপদ। তারা এই আচরণকে ‘ঘৃণ্য’ ও ‘ক্ষমার অযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছে।
বিহারের প্রধান বিরোধী দল রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) আরও এক ধাপ এগিয়ে নীতীশ কুমারের মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। দলটির এক পোস্টে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর মানসিক অবস্থা এখন ‘খুব করুণ পর্যায়ে’ পৌঁছেছে। আরজেডির মুখপাত্র এজাজ আহমেদ বলেন, এই ঘটনা নারীদের প্রতি জেডিইউ-বিজেপি জোটের মনোভাব প্রকাশ করে এবং এটি একজন নারীর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।
ঘটনাটি নিয়ে ধর্মীয় নেতারাও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। দেওবন্দি আলেম ক্বারী ইসহাক গোরা বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, একজন নারী চিকিৎসকের হিজাব টানার দৃশ্য দেখে সারা দেশের মানুষের রক্ত ফুটছে। তার মতে, নারী সম্মানের কথা বলার পাশাপাশি প্রকাশ্যে এমন আচরণ করা সম্পূর্ণ বিপরীত বার্তা দেয়।
তবে নীতীশ কুমারের দল জনতা দল (ইউনাইটেড) এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেন, বিহারে নারী ও সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নীতীশ কুমার অনেক কাজ করেছেন। সংখ্যালঘু কল্যাণমন্ত্রী জামা খান বলেন, বিরোধীরা ও কিছু মুসলিম নেতা মুখ্যমন্ত্রীকে বদনাম করার চেষ্টা করছেন। তার দাবি, নীতীশ কুমার ওই নারী চিকিৎসকের প্রতি স্নেহ প্রকাশ করেছিলেন এবং তার উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটির সাফল্য সবাইকে দেখানো।
এদিকে এই ভিডিও ঘিরে ভারতের বাইরেও আলোচনা শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটির সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এটি মুসলিম নারীদের প্রতি আচরণ এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার একটি দৃষ্টান্ত।








































