গোয়ার নাইটক্লাবে আগুন: নিহত ২৩


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১০:০৪ এএম
গোয়ার নাইটক্লাবে আগুন: নিহত ২৩

ভারতের উপকূলীয় অঞ্চল গোয়ার একটি জনপ্রিয় নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

উত্তর গোয়ার আরপোরাতে অবস্থিত এই ক্লাবের নিহতদের অধিকাংশই সেখানকার কর্মী বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নিহতদের মধ্যে পর্যটকরাও রয়েছেন।

পুলিশের ধারণা, শনিবার স্থানীয় সময় মধ্যরাতে ক্লাবের রান্নাঘরে একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকেই আগুনের সূত্রপাত। এরপর মুহূর্তের মধ্যেই আগুন পুরো ক্লাবে ছড়িয়ে পড়ে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বার্তায় গোয়ার এই অগ্নিকাণ্ডকে 'অত্যন্ত দুঃখজনক' বলে অভিহিত করেছেন।

গোয়ার পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) অলোক কুমার বলেন, 'আগুনটি মূলত নিচতলার রান্নাঘর এলাকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'মধ্যরাতের দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।'

অলোক কুমার জানান, অধিকাংশ মৃতদেহ রান্নাঘরের আশপাশে পাওয়া গেছে। অর্থাৎ নিহতরা মূলত ওই ক্লাবেরই কর্মী ছিলেন।

গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ান্ত সাংবাদিকদের জানান, তিনজন আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন, বাকিদের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসরোধ হয়ে।

তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে 'তিন থেকে চারজন' পর্যটক রয়েছেন। তবে তাদের বয়স বা জাতীয়তা সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোয়ার অন্যতম জনপ্রিয় সমুদ্রসৈকত বাগা এলাকায় অবস্থিত বার্চ বাই রোমিও লেন নামক ক্লাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

দুর্ঘটনাস্থলের এলাকাটি নৈশভোজ ও বিনোদনের জন্য পরিচিত। সেখানে এ ধরনের আরও অনেক নাইটক্লাব রয়েছে। এসব জায়গায় পর্যটক ও আমোদপ্রেমী মানুষের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে।

বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে পাশের একটি ক্লাবের একজন শেফ জানান, তিনি বার্চ ক্লাবের কয়েকজন কর্মীকে চিনতেন।

তিনি বলেন, 'গোয়ার বিভিন্ন ক্লাবে ভারত এবং নেপাল থেকে আসা বহু মানুষ কাজ করেন। ক্লাবে আমার পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে আমি সত্যিই খুব চিন্তিত। তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।'

রোববার ভোর পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত ছিল। অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে উদ্ধারকর্মীরা ভস্মীভূত ধ্বংসস্তূপে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন।

ঘটনাস্থলে থাকা একজন দমকলকর্মী বিবিসিকে জানান, তারা এখনও নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করার কাজ করছেন; এরপর তাদের পরিবারকে খবর দেওয়া হবে।

মুখ্যমন্ত্রী জালেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

সাওয়ান্ত বলেন, 'দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো ধরনের গাফিলতি কঠোর হাতে দমন করা হবে।'

আরব সাগরের তীরে অবস্থিত গোয়া একসময় পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল। এখানকার নৈশজীবন, বালুকাময় সমুদ্রসৈকত ও রিসোর্টগুলো প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটককে আকর্ষণ করে।

সরকারি তথ্যানুযায়ী, এ বছরের প্রথমার্ধে প্রায় ৫৫ লাখ পর্যটক গোয়া ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৭০ হাজার ছিলেন বিদেশি পর্যটক।

গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

মে মাসে দক্ষিণের শহর হায়দ্রাবাদে একটি তিনতলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ১৭ জন নিহত হন। তার ঠিক এক মাস আগে কলকাতায় একটি হোটেলে আগুন লেগে ১৫ জনের মৃত্যু হয়।

গত বছর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের একটি বিনোদন পার্কের আর্কেডে ২৪ জন নিহত হন। সেখানে প্রবেশপথের একটি অস্থায়ী কাঠামো ভেঙে পড়লে দর্শনার্থীরা ভেতরে আটকা পড়েছিলেন। পরবর্তীতে সরকারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই মৃতের সংখ্যা এত বেশি ছিল।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর

Link copied!