• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

সাইবার অপরাধী ও হ্যাকারদের ঘাঁটি কোথায়?


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০২১, ০৩:০১ পিএম
সাইবার অপরাধী ও হ্যাকারদের ঘাঁটি কোথায়?

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সবচেয়ে রহস্যময় ও আতঙ্কজনক শব্দ ‘হ্যাকার’। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাক্ষাৎকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি আবারও আলোচনায় এসেছে সাইবার হামলা আর হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধগুলো।

জেনেভার বৈঠকে পুতিনকে সাইবার হামলার ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেন বাইডেন। তাই অনেকেই সন্দেহ করছেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সাইবার অপরাধীদের আশ্রয়দাতা দেশ এখন রাশিয়া। যদিও এই দাবি বরাবরেরই প্রত্যাখ্যান করেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে নামীদামি মার্কিন প্রতিষ্ঠানে যেসব হ্যাকিংয়েরর ঘটনা ঘটে তার পেছনে রাশিয়ান সাইবার অপরাধী চক্রের হাত রয়েছে। আর রাশিয়ার পাল্টা দাবি করে, অধিকাংশ সাইবার আক্রমণের উৎস যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন হ্যাকাররা নিয়মিত রাশিয়ার স্বাস্থ্য খাতে সাইবার হামলা চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ করে থাকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে মস্কোর অভিযোগও অস্বীকার করছে ওয়াশিংটন।

হ্যাকারদের অভয়ারণ্য কোথায় সেটা নিশ্চিত হতে হলে আগে জানতে হবে তাদের হ্যাকিংয়ের মূল কৌশল। প্রধানত র‌্যানসমওয়্যার সফটওয়্যারের মাধ্যমে কম্পিউটারে অনুপ্রবেশ করে তথ্য চুরি, অর্থ পাচার কিংবা কম্পিউটারটি লক করে বিরাট অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করে থাকে হ্যাকাররা। এছাড়া ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়ে কিংবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের বাগ বা ত্রুটি খুঁজেও হামলা চালায় অনেকে। 

ক্লিফ স্টল নামের এক মার্কিন নভোচারী ১৯৮৬ সালে প্রথম হ্যাকারদের তথ্য চুরি শনাক্ত করেন। জার্মানি থেকে তার গবেষণাগারের কম্পিউটারে অনুপ্রবেশ করে সামরিক তথ্য চুরির চেষ্টা করছিল একদল হ্যাকার। এসব তথ্য তার বিক্রি করে রুশ গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির কাছে। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি হ্যাকারদের হামলার ঘটনা সামনে আসে।

বিশেষজ্ঞদের ধারণা বেশির ভাগ র‌্যানসমওয়্যার ব্যবহারকারীর বসবাস রাশিয়াতেই। যদিও রুশ সরকার তা স্বীকার করে না। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়ও রুশ গুপ্তচর সংস্থার দুটি হ্যাকার দল সাইবার হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।

৯০-এর দশকে কয়েকটি হ্যাকার দল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তথ্য চুরির চেষ্টা চালায়। এরা সাধারণত মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করত। রাশিয়ার সরকারি ছুটির দিনে এরা কাজ করত না। এই হ্যাকার দলের প্রোগ্রামিং কোডগুলোতেও রুশ ভাষার ব্যবহার দেখা গেছে।

এদিকে চীনা হ্যাকারদের মূল লক্ষ্য প্রধানত বাণিজ্যিক গোপন তথ্য। ২০১২ সালের শেষে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই দেশেই ৪১ শতাংশ হ্যাকারদের আনাগোনা দেখা গেছে। চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তাইওয়ানও বিপুলসংখ্যক সাইবার অপরাধী আর হ্যাকারদের অবস্থান লক্ষ করা যায়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ব্রাজিল, তুরস্কসহ বিশ্বের অনেকে দেশেই সবার অপরাধী আর হ্যাকারদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এবিসি নিউজের জরিপ মতে, বিশ্বের সাতটি দেশে হ্যাকারদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

বিশ্বের ২ দশমিক ৮ শতাংশ হ্যাকারদের অবস্থান দেখা যায় রোমানিয়াতে। রামনিকু ভাল্সিয়া শহরটি হ্যাকার অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বের সাইবার হামলার ৩ দশমিক শতাংশ পরিচালিত হয় দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ ব্রাজিল থেকে। অন্যদিকে তুরস্ক থেকেও বিশ্বের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হ্যাকিং আর সাইবার হামলা হয়।

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ‘সাইবার ট্রাফিক’ দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রে। অ্যানোনিমাস হ্যাকার দলের মতো অনেক বড় বড় সাইবার হামলাকারী সংগঠন পরিচালিত হয় এখান থেকেই। যদিও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই মনে করেন, বিশ্বের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও লাভজনক অপরাধীদের উৎস রাশিয়া ও তার প্রতিবেশী দেশগুলো।

Link copied!