• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

নাইন ইলেভেনের ২০ বছর


দেওয়ান জামিলুর রহমান
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ১২:৩৬ এএম
নাইন ইলেভেনের ২০ বছর

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সকাল ৮টার পর যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপরই ক্যালিফোর্নিয়াগামী চারটি যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদার সদস্যরা।

সন্ত্রাসীরা পাঁচজনের তিনটি ও চারজনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে প্লেনগুলো ছিনতাই করে। প্রতিটি দলেই একজন ছিনতাইকারী ছিল বিমানের চালানোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের চারটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একযোগে বিমানগুলো নিয়ে হামলা চালায় আল-কায়েদা। যদিও যাত্রীদের চেষ্টায় একটি বিমান লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে প্রথম বিমানটি আঘাত হানে ম্যানহাটনের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারে। ১৭ মিনিট পর দ্বিতীয় বিমানটি নিয়ে জঙ্গিরা হামলা চালায় ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের আরেকটি ভবন সাউথ টাওয়ারে। দেড় ঘণ্টার মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়ে ধসে পড়ে টুইন টাওয়ারখ্যাত ভবন দুটো।

ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার দৃশ্য

তৃতীয় ফ্লাইটটি ডুলস বিমানবন্দর থেকে ওড়ার পর ওহাইওতে ছিনতাই হয়। সকাল ৯টা ৩৭ মিনিটে এটি ভার্জিনিয়ায় মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদর দপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম দিকে আঘাত হানে।

এরপর চতুর্থ বিমানটি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির দিকে যাওয়ার পথে সকাল ১০টায় পেনসিলভানিয়ার কাছে একটি মাঠে বিধ্বস্ত হয়। বিমানের যাত্রীরা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে বিমানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করলে হামলার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। যদিও প্রাণে বাঁচতে পারেননি বিমানের কোনো যাত্রী।

ধারণা করা হয়, আল-কায়েদার শেষ লক্ষ্যবস্তু ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউস কিংবা পার্লামেন্টের ক্যাপিটল হিল ভবন।

বিমান হামলায় বিধ্বস্ত পেন্টাগন

ভয়াবহ এই আত্মঘাতী সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় প্রায় তিন হাজার মানুষ। আহত ৬ সহস্রাধিক। ১১ সেপ্টেম্বর তথা ‘নাইন-ইলেভেন’ নামে এই সন্ত্রাসী হামলার পরই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ঘোষণা করেন সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযান ‘ওয়ার অন টেরর’।

পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার জেরে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলো। আল-কায়েদার সন্ত্রাসবাদে মদদ দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষমতাসীন তালেবানদের হটিয়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করে পশ্চিমা জোট।

নাইন ইলেভেন হামলার পরিকল্পনাকারীরা

অভিযান শুরুর প্রায় ১০ বছরের পর ২০১১ সালে পাকিস্তানে অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করে মার্কিন সেনারা। নাইন ইলেভেন হামলার আরেক পরিকল্পনাকারী খালিদ শেখ মোহাম্মদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

আল-কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করার দাবি জানিয়ে ২০১১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিদেশি সেনাদের দেশ ছাড়ার ঘোষণায় আক্রমণ জোরদার করে বিদ্রোহীরা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ বন্ধের শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করলেও আফগানিস্তানে পুনরায় আধিপত্য বাড়াতে থাকে তালেবান।

একদিকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে আফগানিস্তান। অন্যদিকে মার্কিন সমর্থিত সরকার ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে তালেবান। উভয় পক্ষের সংঘর্ষের বলি হয় আফগানিস্তানে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি ৪৬ হাজার বেসামরিক নাগরিক।

আফগানিস্তানে মার্কিন ও তালেবান সেনা

অবশেষে ২০২১ সালের অক্টোবরে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সপ্তাহখানেক আগেই আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় বিদ্রোহীরা। মার্কিন সমর্থিত আশরাফ গনির সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতায় ফিরে আসে তালেবান। আর যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠনের পরিবর্তে সেনা অভিযান পরিচালনার লোকসান কাঁধে নিয়েই অভিযান সমাপ্ত করে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কিংবা আফগানিস্তানের রাজনীতিতে তালেবানের ভূমিকা দুটোই পরিবর্তন হয়েছে নাইন ইলেভেনকে কেন্দ্র করে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতেও এর প্রভাব রয়েছে। ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও তাই ঐতিহাসিক এই হামলার ক্ষত শুঁকিয়ে যায়নি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, ব্রাউন ইউনিভার্সিটি আর্কাইভ ও অন্যান্য

Link copied!