• ঢাকা
  • বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মানুষের চাহিদার রূপ


বুশরা আহমেদ
প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২১, ০৩:২৫ পিএম
মানুষের চাহিদার রূপ

মানুষের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা! নেতিবাচকই বেশি। “কেন সে এত বেশি চায়?” চাহিদা থাকলেই কি সে খারাপ? বা সব চাহিদার মানেই কি "বেশি বেশি চাওয়া"?

মানুষ মানেই তার মৌলিক চাহিদা থাকবে এবং সেগুলো পূরণ করতেই হয়। এই চাহিদা জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া। বেঁচে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত মৌলিক চাহিদার জোগান থাকতে হবে।

মৌলিক চাহিদা পূরণের পর আসে “একটু অধিকতর/তুলনামূলক ভালো” থাকতে চাওয়া। এই “চাওয়া”টা বাড়তে বাড়তে এক সময় বিলাসিতায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে।

মৌলিক চাহিদা বা তুলনামূলক ভালো কিংবা বিলাসিতার চাওয়াগুলো মানুষের ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সেই ব্যক্তির চাওয়ারও একটা সীমা আছে। সীমার ভেতর থাকলে তা গতানুগতিক বা সরলরৈখিক জীবনের ভেতরেই ঘুরপাক খায়। সীমা ছাড়ালে তখন সেটি লোভলালসার পর্যায়ে পড়ে এবং তার জন্য অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। 

একবার ভাবুন তো, যদি কোনো “চাওয়া” না থাকতো, অর্থাৎ একটা মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণই যদি সব হতো এবং শেষ চাহিদা হতো, তাহলে কি আর ঐ মানুষ বেঁচে থাকতো?

আচ্ছা আপনাদের কি কখনো এ অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, কখনো কখনো সুন্দর বা ভালো কিছুর সান্নিধ্যে এলে মরে যেতে ইচ্ছে করে?

এটা অবশ্য সবার হয় না।

তো আমাদের কেন মরে যেতে ইচ্ছে করে তখন? নিজেরাও উত্তর খুঁজে পাই না, বা বুঝে উঠি না। নিজের কাছেই অবাক লাগে! কিন্তু মরে যেতে ইচ্ছে করার অনুভূতিটা কিন্তু ভেতরে হতে থাকে এবং এটা সত্য। যারা এর সাথে অপরিচিত তারা বিষয়টাকে উদ্ভট মনে করতে পারেন বা আমাদের নিজেদেরও অবাক লাগে এজন্য যে, মরে যেতে ইচ্ছে করে তো সাধারণত কোনো খারাপ কিছুর প্রেক্ষিতে! তাহলে ভালো সময়ে এরকম হয় বা হচ্ছে কেন!

কারণটা হলো যখন আমরা সেই অপার্থিব সুন্দর দৃশ্য বা অনুভূতির সান্নিধ্য পাই, তখন নিজেদের জীবনটাকে পরিপূর্ণ মনে হয়! তখন মনে হয়, জীবনের সব যেন “পাওয়া” হয়ে গেছে! এখন মরে যেতে বাধা নেই! নিশ্চিন্তে ও সুখে শান্তিতে দুনিয়া ছাড়তে পারি! আর কিছু পাওয়ার নেই। দেখার নেই, শোনার নেই। অর্থাৎ নিজের জীবন পূর্ণ অনুভব করার সাথে এই "আর কিছু না চাওয়ার" বিষয়টা জড়িত।

তাহলে এই যে মানুষ যতদিন বেঁচে থাকে, কিছু না কিছু চায়, এর মাধ্যমে আসলে সে বেঁচে থাকে! বা বেঁচে থাকে বলেই চায়! এতে দোষের কিছু নেই। দোষ হলো নিজের চাওয়া পূরণ করার জন্য কোনো অসৎ পথ অবলম্বন করলে। অন্যের ক্ষতি করলে। চাহিদা পূরণে ইন্দ্রিয়কে গুরুত্ব দেয়া বা হিংসা ও দ্বেষ দ্বারা তাড়িত হওয়া ঠিক নয়।

নিজের চাওয়া নিজের সীমার ভেতর রেখে, নিজের পরিশ্রম দিয়ে সৎ অর্জনের মধ্যে কোনো কিছু পাওয়াতেই প্রকৃত তৃপ্তি।

আর Happiness lies in contentment কথাটির ব্যাখ্যা হলো: চাহিদা/চাওয়া তো থাকবে, সেটা পূরণের চেষ্টাও থাকবে, তবে সেই সৎ চেষ্টার মধ্যবর্তী সময়টায় তাকে ধীর থাকতে হবে! চাহিদা পূরণে অধীর হলেই মানুষ তখন অসৎ পথে যায়। আর ধীর আছে মানেই হল সে আপাতত সন্তুষ্ট আছে; তবে আরো কিছু পাওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রাপ্তির ভেতর দিয়ে উন্নতি করতে পারলে ভালো, না পারলে আপাতত যা আছে তা নিয়েও সে চলতে পারে। এটাই contentment বা সন্তুষ্টি।

আবার এক জাতীয় মানুষ স্বপ্ন দেখে! অনেক বড় স্বপ্ন! নিজের সীমা ডিঙিয়ে অন্যের নিমিত্তে স্বপ্ন! এটাও পূরণের ব্যাপার! অর্থাৎ একরকম “চাহিদা”! এ চাহিদায় অবশ্য তখন অন্যের কল্যাণ অন্তর্ভুক্ত। এই মানুষগুলোও কিন্তু স্বপ্ন ছাড়া বাঁচে না। অর্থাৎ “চাহিদা” ছাড়া বাঁচে না। তারা কখনও-সখনও ভাবে-“আত্মকেন্দ্রিক মানুষগুলোর জীবনের অর্থ কী? শুধু নিজেকে নিয়ে, নিজের জন্য, এটাও কি মানুষের বাঁচা? (ঠিক ভাবে, না ভুল ভাবে সেটা কিন্তু ভিন্ন তর্ক।)

যাহোক, নানান রূপে, নানান ভাবে চাহিদা আসে আমাদের জীবনে। কখনো সে আসে "স্বপ্ন" নামেও! সেই চাহিদার ভেতর কেউ ব্যষ্টিকে দেখে, কেউ দেখে সমষ্টিকে।

চাহিদা আদতে বেঁচে থাকার প্রমাণ! বেঁচে আছে বলেই সে চায়! মারা গেলেই কেবল এর শেষ হয়। সাধু, সন্ন্যাসীদেরও এটি আছে ! শুধু মোহটা নেই। অর্থাৎ কোনো কিছু পাওয়ার ক্ষুধা বা craving। তারা সত্যের/ ঈশ্বরের/ জ্ঞানের সন্ধানে গিয়ে আত্মোপলব্ধি/ বুদ্ধ জ্ঞান/ আধ্যাত্মিক সিদ্ধি লাভ করেন। এসব লাভের পর মানুষের কল্যাণে তা নিয়োজিত হয়। ওটুকুই তাদের চাহিদা বা লক্ষ্য ।

আত্মিক মৃত্যু ঘটে গেলে মানুষ জীবিত থেকেও আর কিছু চায় না । সেটার একটা নাম আছে অবশ্য! থাক, সেটি আর এই বক্তব্যে তুলে না ধরি…

 

০৮.০৮.২০২১, ভোর ৬.১৪

Link copied!