অনেকের নিয়মিত সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে রাতে ঘুম কম হওয়া। কাজের চাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় এ সমস্যা হয়ে থাকে। তবে রাতের পর রাত যদি ঘুম কম হয়, তাহলেই সমস্যা। জীবনযাপন ও কাজের ধারায় ‘স্লিপ সাইকেল’ বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
রাত জেগে অফিসের কাজ, আবার কখনো বেশি রাত অবধি টিভি দেখা, ল্যাপটপ অথবা মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করে কাটিয়ে দেন অনেকে। সব মিলিয়ে, ঘুমের সময় বদলাচ্ছে রোজই। কিন্তু শরীরের ঘড়ি কি অত দ্রুত সময় পাল্টাতে পারছে? ফলে ঘুমের অভাবে ক্লান্তি, অবসাদ গ্রাস করছে।
আরো একটি সমস্যা হচ্ছে, কম ঘুম পুরুষদের শুক্রাণুর মান কমিয়ে দিচ্ছে।
ফলে বন্ধ্যত্বের সমস্যা আরো বাড়ছে। কেন এই সমস্যা দেখা দিচ্ছে তা জানাতেই আজকের প্রতিবেদন। চলুন, জেনে নেওয়া যাক
ঘুম ও হরমোন
‘জৈবিক ঘড়ি’ নামে শরীরেরও একটি ঘড়ি আছে। এই ঘড়ি নির্দিষ্ট ছন্দে চলে।
দেহঘড়ির এই ছন্দ মেনে চব্বিশ ঘণ্টা ধরে নানা গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ চলতে থাকে। রাতে নির্দিষ্ট সময় ঘুম আসে, সকালে ঘুম ভাঙে, নির্দিষ্ট সময় খিদে পায়। এই জৈবিক সময়ছন্দকে বলা হয় ‘সার্কাডিয়ান রিদম’, বা ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’। সেইমতো হরমোনের ক্ষরণও নিয়ন্ত্রিত হয়।
হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের গবেষকরা দেখেছেন, মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের ভেতরে হাজার হাজার নিউরন নিয়ে গঠিত ‘সুপ্রাকিয়াসম্যাটিক নিউক্লিয়াস’ শরীরের কেন্দ্রীয় ঘড়ি হিসেবে কাজ করে।
এই ঘড়ির সঙ্গে তাল মিলিয়ে শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ও বাইরের সময়চক্রের সঙ্গে শরীরের সামঞ্জস্য বজায় রাখে।
কোনো কারণে যদি ঘড়ির ছন্দ বিগড়ে যায়, তাহলে শরীরের ভেতরে তৈরি প্রোটিন, হরমোনগুলোর ভারসাম্যও নষ্ট হবে। জৈবিক ঘড়ির নিয়ম অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্কের রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি। ওই সময়ে শরীরে নানা হরমোনের ক্ষরণ এবং তাদের ক্রিয়াকলাপ চলতে থাকে। যদি সময়টাকে কমিয়ে ২-৪ ঘণ্টায় নিয়ে আসা হয়, তখনই গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলোর কাজকর্ম নষ্ট হবে। তার মধ্যে টেস্টোস্টেরন হরমোনও রয়েছে।
হার্ভার্ডের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে জেগে থাকেন, ভোরের দিকে মাত্র ৪ ঘণ্টা ঘুমান, তার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য ঠিক নেই। আর এই হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে গেলে শুক্রাণুর উৎপাদন এবং তার গুণগত মানও নষ্ট হবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বন্ধ্যত্বের সমস্যা বাড়বে।
দেহঘড়ি বিগড়ে গেলে কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণও বাড়ে। একে বলা হয় ‘স্ট্রেস হরমোন’। কর্টিসল বেড়ে গেলে টেস্টোস্টেরনের ক্ষরণ কমে যায়। ফলে ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র ঝুঁকি বাড়ে। এই রোগে ঘুমের মধ্যে বারবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। প্রদাহ বাড়ে, যা থেকে অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
দেহঘড়ি দীর্ঘ সময় ধরে বিঘ্নিত হলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদ্রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। এর থেকেও শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে। তাই রাতে টানা ঘুম জরুরি। যদি ঘুম আসতে না চায়, তাহলে মেডিটেশন করুন বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ। এতেও ঘুমের সমস্যা দূর হবে।
সূত্র : আনন্দবাজার ডট কম







































