রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদ হাসান হিমেলকে ট্রাকচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ট্রাকচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাত দেড়টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে এ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
এর আগে রাত পৌনে ৯টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পাথরবাহী ট্রাক মোটরসাইকেল আরোহী তিন ছাত্রকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই হিমেল নিহত হন। মাহমুদ হাবিব হিমেলের গ্রামের বাড়ি নাটোর জেলায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন কারুশিল্প ও শিল্পকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দপ্তর সম্পাদক ছিলেন।
এ সময় সিরামিক ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হন। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৬টি ট্রাক আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। উপাচার্যের ভবনের সামনে দফায় দফা হামলা চালায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবারে হাজার হাজার শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে আসেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, এ ঘটনায় উপাচার্য ও প্রক্টরকে জানিয়ে সাড়া না পাওয়া যায়নি। তাই তারা ৬টি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে দুটি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল নির্মাণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে। অন্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে। শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণকাজে ট্রাকযোগে বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী আনা-নেওয়া করা হয়। রাতে হিমেল ও রায়হান মোটরসাইকেলযোগে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নির্মাণসামগ্রীবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই হিমেলের মাথা পিষ্ট হয়ে নিহত হন। এরপরই শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকে এসে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে এ ঘটনায় হিমেলের দুই বন্ধু কনিক ও স্মৃতি অভিযোগ করেন, “এটা দুর্ঘটনা নয়। হত্যাকাণ্ড। প্রক্টর লিয়াকত আলীকে কয়েক দফা ফোন করলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি। প্রায় দেড় ঘণ্টা ঘটনাস্থলেই মরদেহ পড়ে থাকে।”
রাত সোয়া ১০টার দিকে উপাচার্য ঘটনাস্থলে আসেন এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে বিক্ষোভ প্রকাশ করে।