জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের ৯ কর্মীর বিরুদ্ধে ।
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ঘটনায় হলের প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ঐ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থীর নাম সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক ছাত্র।
অভিযুক্তরা হলেন ইংরেজি বিভাগের জুনায়েদ হাসান রানা, ফার্মেসি বিভাগের নাইমুল ইসলাম সাগর, ইতিহাস বিভাগের আতিক শাহরিয়ার, চারুকলা বিভাগের মোহতাছিম বিল্লাহ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের উৎস ও কাব্য, গণিত বিভাগের জুনায়েদ ইভান, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইমরান মির্জা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সৈকত ইসলাম। তারা প্রত্যেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী বলে পরিচিত।
লিখিত অভিযোগে ওই ভুক্তভোগী বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে প্রেসিডেন্ট ব্লকের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সিনিয়ররা পরের ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তাদের রুম ২১৯ এ যেতে বলেন। সেখানে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় অন্য বন্ধুদের রুমে কান ধরে বসিয়ে রাখেন। আমাকে ডেকে নিয়ে জানতে চান বিভিন্ন সময়ে গেস্টরুমে কেন আসিনি, পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন ছিলাম না। আমি কারণ উল্লেখ করলে তারা রেগে যান এবং অকথ্য ভাষায় গালি দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শার্ট খুলতে বলেন। আমি এতে অস্বীকৃতি জানালে অভিযুক্তরা এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন এবং হল ত্যাগ করতে বলেন। পরে ওই রাতেই আমাদের রুমে তালা লাগানো হয়। আমরা হলের গেস্টরুমে রাত কাটাই।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সাকিবুল ইসলাম ফারাব্বি বলেন, “২৪ ফেব্রুয়ারি আমি ও আমার বন্ধুরা ২১৬ নম্বর রুমে ঘুমিয়ে ছিলাম। রাত দুইটার দিকে ভাইয়েরা আমাদের ডেকে ২১৯ নম্বর রুমে নিয়ে যান। তারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি পলিটিক্যাল প্রোগ্রামে কেন থাকবে পারি নাই? গেস্টরুমে কেন থাকতে পারি নাই? আমি বলি আমার পরীক্ষা চলছে ও সম্প্রতি ডিপার্টমেন্টের একটি ট্যুরে গিয়েছিলাম, এ জন্য থাকতে পারি নাই। এই কথা বলায় তারা আমাকে হল ছাড়তে বলে। এটা আমার অ্যালোটেড হল হওয়ার আমি হল ছাড়তে অস্বীকার করি। তখন তারা আমাকে পোশাক খুলে ফেললতে বলে। আমি পোশাক খুলতে অস্বীকার করলে তারা ক্ষেপে যায় ও মারধর শুরু করে। মার ধরে চিৎকার শুনে আমার বন্ধুরা পাশের রুম থেকে আসে ও আমাকে নিয়ে যায়।”
এদিকে অভিযুক্তরা মারধরের ঘটনা অস্বীকার করেছেন। মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে আতিক শাহরিয়ার বলেন, “মারধরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। অভিযোগ যে দিয়েছে, সে তার বন্ধুদের সাথে খারাপ আচরণ করছিলো। সে তার এক বন্ধুদের রুম থেকে বের করে দিয়েছিলো। তাই আমরা তাকে বোঝাতে গিয়েছিলাম।”
আরেক অভিযুক্ত ইমরান মির্জা বলেন, “তাকে রুমে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাকে মারধরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, “ছাত্রলীগ র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হোসেন তালুকদার বলেন, “ঘটনা সম্পর্কে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন,`বিষয়টি সম্পর্কে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। হলের প্রভোস্ট সংক্ষেপে জানিয়েছে যে সিনিয়র জুনিয়রদের কিছু একটা ঝামেলা হয়েছিল যেটা সমাধান হয়ে গিয়েছে। হল প্রশাসন যদি আমাকে অফিসিয়ালি জানায় তাহলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’