টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার যাদুকাটা, চেলা, সুরমাসহ সবকটি নদ-নদী ও হাওরে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, জেলার সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ৩৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সভাপতি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সর্তকতা অবলম্বন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ সময় পুলিশ সুপার, বিজিবি, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শহরের কাজির পয়েন্ট, জামাইপাড়া, নতুন পাড়া, কালীবাড়ি, আরপিন নগরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলায় ও সীমান্ত এলাকার সড়কও পানিতে তলিয়ে গেছে। পৌর শহরের নিম্নাঞ্চলের পাঁচটি উপজেলার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন ওইসব এলাকার পাঁচ-ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। একই সঙ্গে পানি বাড়তে থাকায় বন্যা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ভাটির জেলার ২০ লাখেরও বেশি মানুষ।
জেলা শহরে আসতে গিয়ে কোনো কোনো সড়কে মানুষকে নৌকা দিয়ে পার হতে হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার জেলার হাওর পাড়ে ও সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী লক্ষাধিক মানুষ বন্যার আশঙ্কায় সময় পার করছেন।
আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে স্বল্প মেয়াদি বন্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মধ্যনগর উপজেলার মহেষখলা গ্রামের বাসিন্দা অজিত কুমার বলেন, “মেঘালয় পাহাড়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় ঢলের পানি মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকার সড়ক উপচে প্রবল বেগে হাওর এলাকায় প্রবেশ করছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে বন্যার আতংকে আছি।”
তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের (সীমান্ত এলাকার) বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, পাহাড়ি ঢলে বড়ছড়া বাগলী সড়কের কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় পানি বাড়ছে।”
জরুরি প্রয়োজন তাহিরপুর উপজেলা থেকে জেলা শহরে আসা জসিম উদ্দিন জানান, জেলার সঙ্গে বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর সড়কের শক্তিয়ারখলাসহ কয়েকটি অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। হাওর পাড়ের সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ভেঙে ভেঙে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে পৌছাতে হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল বাড়তে থাকলে জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম জানান, পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা মজুদ রয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :