• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

যে মেলায় ডুব দিয়ে ‘পাপমোচন’ হয়


টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
যে মেলায় ডুব দিয়ে ‘পাপমোচন’ হয়
পাপমোচনের আশায় গঙ্গাস্নানে অংশ নেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি : প্রতিনিধি

টাঙ্গাইলের বাসাইল কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সৈয়দামপুর গ্রামে বংশাই নদীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিনব্যাপী ডুবের মেলা। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ডুবের মেলা যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে। মাঘী পূর্ণিমায় এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা মানুষের মুখে মুখে ডুবের মেলা নামে পরিচিত। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই মেলায় নদীতে পূণ্যস্নান করলে পাপমোচন হয়।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভক্ত পূজা ও স্নান পর্বে অংশগ্রহণ করেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে স্নান উৎসব। নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরী স্নান উৎসবে অংশ নেন। তারা জমির আইল ধরে ডুবের মেলায় আসেন।

স্নান উৎসবে অংশ নেওয়া পূণ্যার্থীরা বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা তাদের পাপ মোচন উপলক্ষে ভোরে মানত ও গঙ্গাস্নান পর্ব সমাপণ করেন। গঙ্গাস্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়। মনের আশা ও বাসনা পূরণ হয়। এই স্নানে অংশ নিলে পুণ্য মেলে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন গঙ্গাস্নানে অংশ নিয়ে তাদের মনের বাসনা পূরণ করতে।

এই মেলা ব্রিটিশ শাসনামলে বক্ত সাধু নামে খ্যাত সন্যাসী মাদব ঠাকুরের মূর্তি প্রতিস্থাপন করে পূজা অর্চণা শুরু করেন। এই পূজা উপলক্ষে তখন থেকে গঙ্গাস্নান ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তখন থেকে এটা ডুবের মেলা নামে পরিচিত।

স্নানে অংশ নেওয়া সুজন সরকার বলেন, “আজকে আমরা মাঘী পূর্ণিমার মেলায় আসছি। আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি পূর্ণ্য স্থান। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গঙ্গাস্নান হয়। ১০০ বছর ধরে এই গঙ্গাস্নান চলে আসছে। ডুবের মেলায় যারা আসে তারা মনের বাসনা নিয়ে গঙ্গাস্নান করতে আসেন। গঙ্গাস্নান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়।”

স্নানে অংশ গ্রহণ করতে আসা দেবাশীষ দাস বলেন, “সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন যে আজকে এই মাঘীপূর্ণিমার তিথিতে উত্তর বাহিত জলে স্নান করলে সাড়া বছরের পাপ মোচন হয়। অনেকের মনে আশা থাকে যে স্নান করলে তাদের মনের আশা পূরণ হয়।”

গঙ্গাস্নানে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। ছবি : প্রতিনিধি

এদিকে এই মেলাকে ঘিরে নদীর পারে বিভিন্ন দোকান বসেছে। মিষ্টি বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, “৩০ বছর ধরে এই মেলায় আসি। মেলায় ভালোই মিষ্টি বিক্রি হয়। মেলায় ৯ থেকে ১০ মণ মিষ্টি বিক্রি করা যায়। মেলায় অনেক লোকের সমাগম হয়।“

পুরোহিত রবিন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, “পূর্ব পুরুষ থেকে এই গঙ্গাস্নান শুরু হয়েছে। এই গঙ্গাস্নানকে বলে মাঘীপূর্ণিমার গঙ্গাস্নান। ৩০-৪০ জন পুরোহিত এই গঙ্গাস্নানে এসেছে। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন গঙ্গাস্নানে অংশগ্রহণ করতে। পূণ্যার্থীরা তাদের মনের বাসনা নিয়ে এখানে আসেন। তারা ডুব দিলে তাদের মনের বাসনা পূর্ণ হয়।”

কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম আল মামুন বলেন, “পূর্বপুরুষ থেকেই এই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মাঘীপূর্ণিমায় ডুবের মেলা পালন করে থাকেন। মেলা দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন।”

Link copied!