• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

সংসার সামলে সফল উদ্যোক্তা টাঙ্গাইলের জ্যোতি


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: মার্চ ২৪, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
সংসার সামলে সফল উদ্যোক্তা টাঙ্গাইলের জ্যোতি

মাত্র ২৬০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মাহবুবা খান জ্যোতি। এখন প্রতি মাসে প্রায় লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। সংসার সামলে ব্যবসায়ীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা। এক সন্তানের মা তিনি। বর্তমানে তিনি টাঙ্গাইল পৌর শহরের পূর্ব আদালত পাড়া এলাকার একজন পরিচিত মুখ। জ্যোতির কাছে মিলবে পছন্দ অনুযায়ী ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর কেক, বিভিন্ন রকমের আচার, আমসত্ত্ব, হাতের তৈরি ডিজাইনের শাড়ি, পাঞ্জাবি ও বাচ্চাদের ফতুয়া। খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

জ্যোতির প্রতিষ্ঠানের নাম ‘স্বপ্নের সন্ধানে’। আমাদের দেশের মেয়েরা বিয়ের পর সেভাবে এখনো নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না, এমন ধারণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজ তিনি একজন সফল নারী। প্রায় দেড় মাসে হয়ে গেছেন লাখপতি।

পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ে হয়ে যায় জ্যোতির। তার স্বামী বর্তমানে মেরিনার ইন্টারন্যাশনাল শিপে কর্মরত আছেন। এরপর এক বাচ্চা ও সংসার সামলে কোনো চাকরিতে যোগদান করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করবেন। সময়-সুযোগের অভাবে কিছু করা হয়ে ওঠেনি। সন্তান একটু বড় হওয়ার পর ভাবলেন কিছু একটা করা উচিত। সে অনুযায়ী ২০২০ সালের প্রথম দিকে যোগ দেন ‘উই’ নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে। গ্রুপটিতে যুক্ত হওয়ার পর জানতে পারেন ক্ষুদ্র ব্যবসার ইতিবৃত্ত। ২০২০ সালের জুন মাস থেকে কাজ শুরু করেন। নিজের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করতে শুরু করেন আচার, আমসত্ত্ব।

আমসত্ত্ব, আচারের গুণগত মান নিয়ে সন্তুষ্ট তার ভোক্তারা। তাই অর্জন করেছেন টাঙ্গাইলে আমসত্ত্ব জ্যোতি খেতাব। ক্রেতাদের কাছ থেকেই পেয়েছেন এ নাম। টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা ও বিদেশে ডেলিভারি দিয়ে থাকেন তিনি। এটাকে আরও প্রসারিত করার চিন্তা তার।

মাহবুবা খান জ্যোতি বলেন, “উদ্যোক্তা বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। পেশাগত দিক থেকে আমার স্বামী ছুটিতে এসেছিলেন দেশে। মহামারি করোনার জন্য আটকে যান। অভাবের মুখটা তখন দেখতে পাই। ইচ্ছা না থাকলেও স্বামীর পাশে থাকতে চেয়েছিলাম। দুঃখের ভাগীদার হতে চেয়েছিলাম। লাখপতি হওয়ার জন্য কাজ করিনি। নিজের কাজের ১০০ ভাগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। স্বপ্নটা ছিল বিশাল। অনেকে কটুকথা বলেছেন, আচার সেল, কে খায় আচার? মানুষ কিনে খায় এসব? প্রশ্নের উত্তর দেইনি তখন। জবাবটা হয়তো আজ আমায় দেখে তারা বুঝতে পারেন।”

জ্যোতি আরও বলেন, “প্রথম অর্ডার ছিল ২৬০ টাকার। যেটা আমার স্বামী ডেলিভারি দিয়েছিল। টাকাটা আমার হাতে দেওয়ার আগে সালাম করে বলেছিল, ‘তোমার অনেক কষ্টের টাকা’। টাকাটা আমি হাতে নিয়ে বলেছিলাম, ২৬০ টাকা থেকে ২ লাখ ৬০ হাজার যেদিন করতে পারবো, সেদিন মনটা শান্তি পাবো। টার্গেট পূরণ করতে দুই মাস লেগেছিল। শুরু থেকে আমার স্বামী ও মা অনেক সাপোর্ট করেছে আমায়। পরিবারের সবাই বিপক্ষে থাকলেও মা ও আমার স্বামী পাশে ছিলেন। আমার স্বামী ছিল আমার ভরসার জায়গা।”

সফল এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, “১০-১২টা দেশে আমার বানানো আচার, আমসত্ত্ব ডেলিভারি দিতে পেরেছি এবং বাংলাদেশের প্রতিটা জেলায় আমার এই আচার আইটেম পৌঁছে দিয়েছি। ‘স্বপ্নের সন্ধানে’ নামটা ব্র্যান্ড হবে। একটা সময় আমি শতজনকে যেন কর্মসংস্থানের জায়গা করে দিতে পারি।”

Link copied!