• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ওপারে থেমে থেমে গুলি, এসএসসির কেন্দ্র বাতিল


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪, ০৮:১২ এএম
ওপারে থেমে থেমে গুলি, এসএসসির কেন্দ্র বাতিল
আতঙ্কে ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। ফাঁকা পড়ে আছে সড়ক ও বাজার। ফাইল ছবি

বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্তের ওপারে দিনভর থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। দেখা গেছে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। এই পরিস্থিতিতে সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) নিরাপত্তার কারণে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। এখন তিন কিলোমিটার দূরের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

এদিকে সোমবার ১২টি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ২৩ রোহিঙ্গার মধ্যে ২২ জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন কক্সবাজারের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্রীজ্ঞান তঞ্চঙ্গ্যা। একজন আদালতে নিজেকে অসুস্থ দাবি করায় তার রিমান্ড শুনানি হয়নি। ৬ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার রহমতের বিল সীমান্ত দিয়ে এই অস্ত্রধারী রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করলে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন আটকের পর তাদের বিজিবির কাছে হস্তান্তর করে। পরে মামলা হয়।

রোহিঙ্গারা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে টেকনাফের নাফ নদীতে দ্রুতগতির নৌযান নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের। 

এ ছাড়া সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম ও চট্টগ্রাম রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নূরে আলম মিনা ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এরপর ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তারা। 

এ সময় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসহ এ দেশে ঢুকে পড়ছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, এ পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী প্রবেশ করেনি। যে ২৩ জন ঢুকেছে, তাদের বিজিবি আটক করেছে। এ ঘটনায় করা মামলা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সংঘর্ষ চলছে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ঢেঁকিবনিয়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের লম্বাবিলের বিপরীতে কুমিরখালী সীমান্তচৌকি এলাকায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। এ সময় কোস্টগার্ড ও বিজিবি সদস্যদের সতর্ক পাহারায় থাকতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ওপারের কুমিরখালী, শিলখালী ও বলিরবাজার এলাকায় দিনভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে।

ঘুমধুম ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া-নয়াপাড়ার সোজা বিপরীত পাশের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া এলাকা। এ এলাকায় রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির একটি সীমান্তচৌকি ও একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর। ঠিক ওই জায়গায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। এ ছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল সীমান্তের ওপারে কুমিরখালী এলাকায় বেলা দুইটার দিকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। কুমিরখালী এলাকায় একটি বিজিপির সীমান্তঘাঁটি রয়েছে। ওই এলাকায় কয়েক শ রোহিঙ্গা বসবাস করে।

স্থানীয়রা জানান, ওপারে অস্থিরতা বিরাজ করার পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে কয়েক দিন আগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড ঢুকতে চেষ্টা করা কিছু রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি, উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন মাধ্যমে ওপারের খবরাখবর রাখছেন। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, “মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কয়েকটি ফাঁড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে এই কাজ আরকান আর্মি করছে নাকি অন্য কেউ, তা বলতে পারছি না।”

নিরাপত্তার কারণে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রটি সরিয়ে অন্তত তিন কিলোমিটার দূরের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিদ্যালয় দুটি হলো ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাইক্ষ্যংছড়ি ও উখিয়ার সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রটি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে মিয়ানমার সীমান্ত। কেন্দ্রটিতে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়, কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী কাশেমিয়া উচ্চবিদ্যালয় ও কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

কেন্দ্রটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়ায় এখন দুশ্চিন্তামুক্ত পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা। ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী লক্ষ্মী চক্রবর্তীর বাবা মানিক চক্রবর্তী বলেন, “ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রটি বাতিল করায় এখন একটু স্বস্তি পাচ্ছি।”

মাথায় হেলমেট, গ্লাভস, ৯৯টি গুলিসহ উদ্ধার লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার বিকেলে উখিয়া উপজেলার বালুখালী তেলিপাড়া সেতুর নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। 

এর আগে শনিবার উখিয়ার রহমতের বিল এলাকা থেকে উদ্ধার লাশেরও পরিচয় পাওয়া যায়নি।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসেন বলেন, “একটি লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। আরেকটির পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্বজন দাবি করে দুজন এসেছেন। আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। লাশের স্বজনেরা রোহিঙ্গা।”

Link copied!