• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চুরির সময় দেখে ফেলায় মা-ছেলেকে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৬:৫৫ পিএম
চুরির সময় দেখে ফেলায় মা-ছেলেকে হত্যা, গ্রেপ্তার ৩
পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রবাসীর স্ত্রী এবং তাঁর শিশুকে হত্যা মামলার তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি : প্রতিনিধি

বাড়ি নির্মাণের নতুন ইট কেনা দেখে ও ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা জেনে চুরি করতে গিয়েছিলেন তিনজন। তাদের ঘরে ঢোকার বিষয়টি টের পেয়ে যাওয়ায় গৃহবধূ লাবনী খাতুন ও তার শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে চোরের দল। পরে টাকা ও গহনা চুরি করে পালিয়ে যান তারা।

পাবনার চাটমোহরে চাঞ্চল্যকর প্রবাসীর স্ত্রী ও তার শিশু সন্তান হত্যার রহস্য উদঘাটনে তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে চুরিকৃত মালামাল।

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী।

গ্রেপ্তাররা হলেন চাটমোহর উপজেলার ধুপুলিয়া গ্রামের মোজাম আলীর ছেলে সাদ্দাম হোসেন (২৬), তার ভাই হোসেন আলী (৩৭) এবং রাজবাড়ির খানখানাপুর দত্তপাড়া এলাকার হুমায়ন কবির ওরফে হৃদয় (২৮)।

পুলিশ সুপার জানান, চাটমোহর উপজেলার দিঘুলিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ ৭ বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকেন। তার স্ত্রী লাবনী খাতুন নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য কিছুদিন আগে ২৫ হাজার ইট কেনেন। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে নগদ টাকা তোলেন।

বিষয়টি টের পান লাবনীর পূর্বপরিচিত হোসেন আলী। বিষয়টি তিনি ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেনকে জানান। সাদ্দাম গোপালগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। বিষয়টি জানার পর সাদ্দাম তার অপর সহযোগী হুমায়ন কবিরকে খবর দেন। এরপর দুজন ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় জেলা সদরের টেবুনিয়ায় আসেন। রাত গভীর হলে হোসেন আলী অপর দুজনকে গ্রামে ডেকে নেন।

হুমায়ন ও সাদ্দাম রাত ১টার দিকে ঘরের পেছন দিকের টিন কেটে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এ সময় লাবনীর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি উঠে কিসের শব্দ, তা জানতে ঘরের দরজা খোলেন। এ সময় হুমায়ন ও সাদ্দাম ঘরে ঢুকেই লাবনীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তাকে হত্যা করেন। এর মধ্যে লাবনীর ছেলে রিয়াদের ঘুম ভাঙে। সে জেগেই চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। এ সময় সাদ্দাম তাকে পুকুরপাড়ে নিয়ে মাফলার পেঁচিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখেন।

হুমায়ন ও সাদ্দাম এরপর ঘরে ঢুকে লাবনীর কানে থাকা সোনার দুল ও ট্রাংক খুলে সোনার চেইন, হাতের বালা, কানের দুল, দুই জোড়া রুপার নূপুর ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে হোসেন আলীর সঙ্গে দেখা করে তাঁকে লাবনীর কানে থাকা দুলটি দিয়ে দুজন আবার গোপালগঞ্জে চলে যান।

গত ২৫ জানুয়ারি লাবনী খাতুন তার ১০ বছরের ছেলে রিয়াদকে নিয়ে রাতে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। পরদিন সকালে বাড়ির ছাগলের ঘর থেকে লাবনী খাতুনের ও বাড়ির পাশে পুকুরপাড়ে গাছে ঝুলন্ত শিশু রিয়াদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় মামলার পর রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের খুঁজে বের করতে মাঠে নামে পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে জড়িত ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেন। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু বক্কর সিদ্দিক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাসিবুল বেনজির, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমরান মাহমুদ তুহিন, সদর থানার ওসি রওশন আলী সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। 

Link copied!