• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

‘সাত বিয়ে’ যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী : রবিজুল


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২৩, ০৫:০৮ পিএম
‘সাত বিয়ে’ যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী : রবিজুল
সাত স্ত্রীর সঙ্গে রবিজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঠে আসে কুষ্টিয়ার রবিজুলের সাত বিয়ের খবর। ‘সাত স্ত্রী নিয়ে রবিজুলের সুখের সংসার’ শিরোনামে সংবাদ ও ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এরপর দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চান রবিজুল। তিনি বলেন, “আমার সাত বিয়ের মিশন কমপ্লিট। এইটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।”

তবে রবিজুল প্রতারণামূলকভাবে একে একে সাতটি বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্ত্রীরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভালো জীবনের আশায় এক দশক আগে লিবিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন রুবিনা আক্তার, সেখানেই পরিচয় হয় টাইলসমিস্ত্রি রবিজুলের সঙ্গে; এরপর প্রেম আর পরিবারকে না জানিয়েই বিয়ে।

কিশোরগঞ্জের মেয়ে রুবিনা জানতেন না রবিজুলের ঘরে আরও এক স্ত্রী আছে। আর যখন জানলেন, তখন ছিল না পেছনে ফেরার সুযোগ; অগত্যা থেকে যান সতীনের সংসারেই।

দ্বিতীয় বিয়ের ক্ষেত্রে প্রথম স্ত্রীকে কিছু জানাননি রবিজুল। এভাবে ফোনে সম্পর্ক ও আগের স্ত্রীদের অনুমতি না নিয়ে গোপনে একে একে বিয়ে করেন সাতটি।

অসহায় কিংবা দরিদ্র পরিবারের হওয়ায় সব স্ত্রীই থেকে গেছেন এক সংসারে, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো ভাইরাল কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের রবিজুল ইসলাম (৩৮)।

রবিজুলের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবিনা বলেন, “বিয়ের এক সপ্তাহ পরই আমি জানতে পারি রবিজুলের বাড়িতে আগে থেকেই বউ-বাচ্চা আছে। বিষয়টি রবিজুলের কাছে জানতে চাইলে বলেছিল, তাতে কোনো সমস্যা নেই। বউ আমাকে মেনে নেবে। যেহেতু আমি নিজেও পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলি, সেই কারণে আমিও আর প্রকৃত অবস্থাটা পরিবারকে না জানিয়েই এখানে সংসার করছি। আমার বাবা-মা এখনো জানে যে আমিই রবিজুলের বড় বউ।”

রবিজুলের ষষ্ঠ স্ত্রী কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহের মেয়ে জুঁই আক্তার। তার আগের স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে দেড় মাস আগে রবিজুলের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তবে জানতেন না রবিজুলের আরও পাঁচজন স্ত্রী আছে।

জুঁই আক্তার বলেন, “আগের স্বামী অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাওয়ার পর প্রায় ৫ বছর দিনমজুর বাবার ঘরে মানবেতর জীবন ছিল আমার। সে সময় আমার বাবা-মাকে রাজি করিয়ে রবিজুল আমাকে বিয়ে করে। তবে আমি জানতাম না যে তার আগে আরও পাঁচ বউ আছে। জানলে কি আর এই বিয়েতে আমি রাজি হতাম!”

জুঁই আরও বলেন, “তা ছাড়া রবিজুলও তার পাঁচ বিয়ের কথা গোপন করে রেখেছিল। আমাকে বিয়ের ১৮ দিন আগে একটা বিয়ে করেছে। আর ১৮ দিন পর আরেকটা (সপ্তম) বিয়ে করেছে। এখন কী আর করা! এখানে পেট ভরে দুমুঠো খাবার পাচ্ছি, এটা আমার জন্য অনেক।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রবিজুল বলেন, কাবিন ছাড়াই সাতটি বিয়ে করেছেন তিনি। রবিজুল বলেন, “আমার সাত বিয়ের মিশন কমপ্লিট। এইটা যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার বউদের যেহেতু কোনো অভাব-অভিযোগ নেই, এ জন্য আমার যে শাস্তি হয় হোক মেনে নেব।”

‘বিধিসম্মত না হলেও’ তার স্ত্রীদের কারও কোনো অভিযোগ নেই। একসঙ্গে ‘শান্তিপূর্ণভাবেই’ তারা সংসার করছেন বলে দাবি রবিজুলের।

এদিকে রবিজুলের সাত বিয়ের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় অনেকে তাদের বাড়িতে দেখতে যান।

প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষিকা সাবিনা খাতুন জানান, “হঠাৎ ভাইরাল হওয়া একটা সংবাদ দেখে আমি আশ্চর্য হলাম যে আমারই বাড়ির পাশে একসঙ্গে সাত বউয়ের সংসার, আর আমি জানতেই পারিনি। তাই কৌতূহলবশত দেখতে এসেছিলাম। বউদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে চেষ্টা করলাম ব্যাপারটা কী। কীভাবে সম্ভব নির্বিবাদে একসঙ্গে সাত বউ থেকে সংসার করে। ওদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, রবিজুল প্রত্যেক বউকেই বিয়ে করেছে তথ্য গোপন করে। এরা প্রায় সবাই গরিব ঘরের মেয়ে। সেই কারণে তারা অনিচ্ছা সত্বেও হয়তো আপাতত একসঙ্গে আছে। তবে সেটা কত দিন স্থায়ী হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।”

রবিজুলের বাবা আইন উদ্দিন বলেন, “আইনে নাই, ধর্মেও নাই সাত বিয়ে। একন ছেইলি বিয়ে কইরি ফেইলিচে, ইডা বৈদি (বৈধ) না জানিউ মাইনি (মেনে) নিতি হচ্চে। ইছাড়া কিই বা করার আচে আমার? সুখ-শান্তিতে বসবাস কল্লিই ভালো।”

পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ রেজভী উজ্জামান বলেন, “আমার ইউনিয়নের ঘটনা, আর আমরা জানতামই না।”

একাধিক বিয়ের ব্যাপারে ‘বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ কুষ্টিয়ার উপপরিচালক মো. হেলাল উজ্জামান বলেন, “শরিয়া অনুযায়ী শর্ত সাপেক্ষে কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারেন বৈধভাবে। এ জন্য আগের সব স্ত্রীর অনুমতি থাকতে হবে। দাম্পত্য জীবনে সব স্ত্রীর সম-অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এর বাইরে অতিরিক্ত কোনো স্ত্রী গ্রহণের বিধান নেই। যদি কেউ করেন, সেটা সম্পূর্ণ বেদাতি কর্মকাণ্ড হবে। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কাজী মুজ্জাফারুল ইসলাম বলেন, “বিয়ে বা নিকাহ নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আগের স্ত্রীর অনুমতি থাকলে তার অনাপত্তি অঙ্গীকারনামাকে আবশ্যক। প্রথম স্ত্রীর পরে যে কয়বার বিয়ে করবে, প্রত্যেকবারই পূর্ব স্ত্রীদের লিখিত অনাপত্তি অঙ্গীকারনামা জমা নেওয়া সাপেক্ষে কাজী সাহেব পরবর্তী নিকাহ নিবন্ধন করবেন। অন্যথায় এর বাইরে কোনো নিকাহ করলে সেটার বৈধতা নেই।”

Link copied!