কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গার ১৯টি ঢুলি পরিবারের দীর্ঘদিনের হতাশা আর বঞ্চনার দিন শেষ হলো বুধবার। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় জমি ও ঘর পেয়েছেন তারা। পাকা বাড়ি পেয়ে বিশেষ পূজা-অর্চনায় মেতেছেন এই সম্প্রদায়ের নারীরা। নেচে-গেয়ে ঘর পাওয়ার আনন্দকে তারা ভাগাভাগি করছেন।
ঢুলি সম্প্রদায়ের লোকজনের পেশা বাদ্যকর। বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে বাদ্য বাজিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। বুধবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়ে রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঙ্গার বাসিন্দা অনিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “৫০ বছরের বেশি সময় ধরি ঢোল বাজাই। কোনো জাগাত অনুষ্ঠান হইলে ডাক পড়ে যাই। যেদিন না হয় সেদিন বসি দিন কাটে। যা কামাই হয় তা সংসারত কোনমতে চলে। পাকাবাড়ি হামার করার তো দূর থাউক ভাববেরে পাইনে। শেখের বেটি আইজ বাড়ি দেইল হামাক। এটা স্বপ্ন নাগবেইছে।”
ঘর পাওয়া শান্তনা রাণী বলেন, “সরকার হামাক পাকা ঘরের সাথে এট্টি একটা পাকা মন্দির করি দিছে। আগত হামার গ্রামের মন্দিরটা টিনের ভাঙা ছিলো। পাকা মন্দিরত সকলে একসাথে পূজা দিবার পামো। সত্যি খুব আনন্দ নাগবেইছে হামার।”
ঢুলি পাড়ার পাশের গ্রামের কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী মো. শিফাত রহমান বলেন, “আমি কলেজ যাওয়ার সময় দেখতাম বাড়ির গার্জিয়ানরা বাইরে যখন কাজে চলে যেত, তখন জীর্ণ শীর্ণ ঘরে বাড়ির মহিলারা ভয়ে ভয়ে রাত পার করতেন। কিন্তু পাকা বাড়িতে এখন আর সেই কষ্ট হবে না তাদের। বাচ্চারা পাশের স্কুলে লেখা-পড়া সুযোগ পাবে। এটা সত্যি আনন্দঘন পরিবেশ।”
রাজারহাট উপজেলার নির্বাহী অফিসার নূরে তাসনিম বলেন, এটি একটি ইউনিক প্রকল্প। কারণ এই জনগোষ্ঠী, যারা মানুষকে আনন্দ দেয়, মানুষের বিভিন্ন উৎসব আয়োজনকে সরব করে রাখে, দিন শেষে তাদের থাকার জায়গাটি ছিলো জরাজীর্ণ। অন্যের জায়গায় আশ্রিত হিসেবে থাকতেন এই সম্প্রদায়ের লোকজন। তাদের এই দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।”
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, “জাতির পিতার বিখ্যাত উক্তি ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়, সবাইকে সাথে নিয়েই সামনে এগিয়ে যাওয়া’। সেই লক্ষ্যকে ধারণ করে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা সবসময় সরকারের রয়েছে। এরই আলোকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর অধীনে ঘড়িয়ালডাঙ্গার এই ১৯টি ঢুলি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে পাকা বাড়ি। সরকারের এমন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পেরে আমরাও গর্বিত।”