নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এখনো পাঁচ টাকায় তিনটি শিঙাড়া, তিনটি পেঁয়াজু ও তিনটি পুরি বিক্রি করছেন সিরাজগঞ্জের বকুল হোসেন (৫০) নামের এক ব্যবসায়ী। বড়দের কাছে পেঁয়াজু ভাই ও শিশুদের কাছে শিঙাড়া দাদু নামেই পরিচিত তিনি।
বকুলের শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও পুরির বিশেষত্ব হলো কম দামে বেশিসংখ্যক পাওয়া যায়। স্বাদেও ভালো। মাত্র পাঁচ টাকায় তিন ধরণের খাদ্য বিক্রি করেন। এসব খাবার স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়। অল্প দাম হওয়ায় চাহিদাও বেশ ভালো।
শিঙাড়া বিক্রেতা বকুল হোসেন জেলার রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া এলাকার বাসিন্দা। বর্তমানে ধানগড়া বাজারে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র পাঠাগারের পাশে অস্থায়ী দোকান তার।
জানা যায়, প্রতিদিন বিকাল ৪টা-সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শিঙাড়া, পেঁয়াজু বিক্রি করেন বকুল। এ ব্যবসায় সহযোগিতা করেন তার ছোট ছেলে কলেজছাত্র রিপন হোসেন। তিন ঘণ্টায় তার দোকান থেকে প্রায় এক হাজার শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও বিক্রি হয়। এই ব্যবসা দিয়েই চলে বকুলের সংসার।
বকুল হোসেন জানান, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এই ব্যবসা করছেন। ছোট বেলা থেকে হোটেল ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। ফুলজোড় নদীর ভাঙনে একবার তার দোকান বিলীন হয়ে যায়। ধানগড়া গ্রামীণ ব্যাংক শাখার পশ্চিমে রাস্তার ধারে শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজু বিক্রি শুরু করেন। সব বয়সী মানুষ তার ক্রেতা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তার শিঙাড়া, পুরি আর পেঁয়াজু খেতে আসেন।
বকুল হোসেন আরও জানান, প্রথম যখন ব্যবসা শুরু করেন, তখন ময়দা সের দরে বিক্রি হতো। প্রতি সের ময়দার দাম ছিল ছয়-সাত টাকা। আর তেলের দাম ছিল প্রতি লিটার ১৬ থেকে ১৮ টাকা। তখন তিনটি শিঙাড়া একসঙ্গে কিনলে দাম নেওয়া হতো পাঁচ টাকা। সবকিছুর দাম বাড়লেও বাড়েনি তার শিঙাড়া, পুরি আর পেঁয়াজুর দাম। তবে আকারে ছোট হয়ে এসেছে শিঙাড়া, পেঁয়াজু। কারণ, বর্তমানে এক কেজি ময়দা ৬৫ টাকা, এক লিটার খোলা তেল ১৬৮ টাকা।
শিঙাড়া কিনতে আসা সেলিম হোসেন বলেন, “অনেক আগে থেকেই আমরা বকুল দাদুর শিঙাড়া, পেঁয়াজু ও পুরির ভক্ত। দামও কম, খেতেও বেশ ভালো লাগে। তাই নিয়মিত আমরা তার শিঙাড়া, পেঁয়াজু খেয়ে থাকি, বাসা-বাড়িতেও নিয়ে যাই।”
মেহেদি হাসান নামের অপর এক ক্রেতা বলেন, “অনেকবার এ দোকানের সুস্বাদু শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজু খেয়েছি। পেঁয়াজু বকুল ভাইয়ের তৈরি শিঙাড়া, পুরি ও পেঁয়াজুর কদর আগের মতোই রয়েছে।”
জানা গেছে, স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে বকুল হোসেনের সংসার। বড় ছেলে সজল হোসেন বাসচালক। ছোট ছেলে রিপন হোসেন স্থানীয় সরকারি বেগম নূরুননাহার তর্কবাগীশ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ছাত্র। সময় পেলে বাবার কাজে সহযোগিতা করে আর ফুটবল খেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন, ছোট মেয়ে বাড়ির কাজে মাকে সহায়তা করে।
বকুল হোসেন একবার ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন, তবে জিততে পারেননি। নির্বাচনে জিততে না পারলেও হতাশ হননি। জীবনের পুরো সময়টাই চুলার আগুনের আঁচে কাটল। যত দিন বাঁচবেন, এ ব্যবসা চালিয়ে যেতে চান তিনি।