• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু : চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ১৪, ২০২৪, ০৫:১০ পিএম
হাসপাতালে শিশুর মৃত্যু : চিকিৎসকের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি
অভিযুক্ত চিকিৎসক শরীফ উর রহমান। ছবি : প্রতিনিধি

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শরীফ উর রহমানের দায়িত্বের অবহেলায় শিশুমৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এদিকে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান জানান, এর আগেও ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ উঠেছিল।

বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৮টার দিকে সদর হাসপাতালে মুসাফির নামের চার মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যুর হয়। শিশুর স্বজনরা এর জন্য  চিকিৎসক শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ আনেন।

শিশু মুসাফির শরীয়তপুর পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিব শেখ ও রুবিনা দম্পতির ছেলে।

স্বজন ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দুই দিন ধরে পেটে গ্যাস ও ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছিলো শিশু মুসাফির। বুধবার দুপুরে শিশুটিকে নিয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন মা রুবিনা বেগম। এ সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান। শিশুটিকে ভর্তি করা হলে তরল জাতীয় একটি ওষুধ লিখে দেন তিনি। ওষুধটি খাওয়ানোর পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু মুসাফির। অবস্থা খারাপ দেখে মা রুবিনা বেগম ও স্বজনরা বেশ কয়েকবার চিকিৎসককে ডেকে আনতে যান। কিন্তু চিকিৎসক শরীফ-উর রহমান বিষয়টি আমলে না নিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে আসেননি। একপর্যায়ে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য চিকিৎসককে ডাকতে গেলেও তিনি শিশুটির কোনো চিকিৎসা দিতে আসেননি। শিশুটির অক্সিজেন মাস্ক খুলে তার কাছে নিয়ে যেতে বলেন। এরপর রাত ৮টার দিকে মারা যায় শিশু মুসাফির।

মুসাফিরের মা রুবিনা বেগম বলেন, “আমার বাবু যখন অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ে, আমি নিচে অনেকবার দৌড়ে ডাক্তারকে ডাকতে যাই। তিনি আমাকে ধমক দিয়ে ওপরে পাঠিয়ে দিয়ে বলে আমি আসতেছি। কিন্তু ডাক্তার আর আসেনি। আজ যদি আমার বাবুটাকে চিকিৎসা দেওয়া হতো তাহলে বাবুটা বেঁচে থাকতো।”

চিকিৎসকের অবহেলার বিষয়টি সামনে এনে হাসপাতালে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা বৈদ্য বলেন, “বাচ্চাকে প্রথমে আমি অক্সিজেন লাগিয়ে দেই। এরপর আমাকে বেশ কয়েকবার রোগীর লোক ডাকলে আমি বাচ্চাটাকে দেখে আসি। কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ডাক্তারকে ডাকতে আমার ওয়ার্ড বয়কে দুইবার নিচে পাঠিয়েছি। যখন বাচ্চাটির খারাপ অবস্থা ছিল তখন ডাক্তার আসলে হয়তো বাচ্চাটা বেঁচে থাকতো।”

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার শরীফ উর রহমানের নামের একাধিকবার দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ৩ মাস আগে তার বেতনও আটকে রেখেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ গতকাল তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে এক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা নিয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাসপাতালটির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. হোসনে আরা। সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মিতু আক্তার ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আতিকুর রহমান। তদন্ত কমিটি আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রতিবেদন পেশ করবেন।

বিষয়টি নিয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবিবুর রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “মেডিকেল অফিসার শরীফ উর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। এর আগে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমি তার ২ মাসের বেতন আটকে রেখেছিলাম। পরে সে দায়িত্বে অবহেলা করবে না বলে অঙ্গীকার করলে তার বেতন দেওয়া হয়। গতকাল অসুস্থ ওই শিশুটির চিকিৎসার জন্য দায়িত্বরত নার্স তাকে ডেকেছিল, কিন্তু সে ডাকে সাড়া দেয়নি। এরপর শিশুটি মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এরপর তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।” 

Link copied!