• ঢাকা
  • রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাস্তা বন্ধ থাকায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি গুজব, যুবক গ্রেপ্তার


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১, ২০২৩, ০৬:০২ পিএম
রাস্তা বন্ধ থাকায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি গুজব, যুবক গ্রেপ্তার

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পর বুধবার (২৬ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। ওই দিন সকাল ১০ টা থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল সীমিত ছিল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে সড়কে গাড়ি চলাচল সীমিত থাকায় অসুস্থ এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ এনে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন ইসমাইল নামের এক যুবক। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে তারেক/গণঅধিকার পরিষদ’ ও ‘ফেস দ্যা পিপল’ নামে দুটি ফেসবুক পেজ থেকে নানা সমালোচনা করা হয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) রাতে ইসমাইলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় গোপালগঞ্জ থানা-পুলিশ।  

গ্রেপ্তার ইসমাইল সদর উপজেলার মেরী গোপনাথপুর গ্রামের আকরামুজ্জামান মোল্লার ছেলে। তিনি সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবজাতকের বাবার নাম তরিকুল শেখ। গত ২৫ এপ্রিল তার একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। জন্মগ্রহণের পর থেকে নবজাতকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটে (স্ক্যানো) ভর্তি করানো হয়। বুধবার সকালে হাসপাতালেই ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। ওই দিন সকালে হাসপাতাল থেকে নবজাতকের মরদেহ নিয়ে কাশিয়ানির বাঘঝাপা গ্রামের উদ্দেশ্যে ইজিবাইকে রওনা হন নবজাতকের বাবা, মা ও নানি। পথিমধ্যে সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া পৌঁছালে তাদের গাড়ি গতিরোধ করে কর্তব্যরত পুলিশ। এসময় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশকে বললে পুলিশ তাদের বহনকৃত ইজিবাইকটি ছেড়ে বাইপাস সড়ক দিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার নিউ ব্রন ইউনিটের (স্ক্যানো) কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স সীমা রানী মন্ডল বলেন, “গত ২৫ এপ্রিল রাতে ওই নবজাতক শিশুকে ভর্তি করানো হয়। আমি তাকে দেখভাল করছিলাম। ওই শিশুটির পূর্ণ বয়সে ভূমিষ্ঠ না হওয়ায় তার ওজন কম ছিল এবং শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। ২৬ এপ্রিল সকালে স্ক্যানো ওয়ার্ডেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে পরিবারের লোকের কাছে শিশুকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।”

নবজাতকের বাবা তরিকুল শেখ বলেন, “আমার নবজাতক শিশুকে ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে গোপালগঞ্জ ২৫০ বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। ওই রাতেই হাসপাতালে স্ক্যানো ইউনিটে নেওয়া হয়। পরদিন ২৬ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালের স্ক্যানো বিভাগে আমার ছেলের মৃত্যু হয়। ওই দিন ১০টায় ছেলের মৃতদেহ ইজিবাইকে করে কাশিয়ানি উপজেলার বাঘঝাপা গ্রামে ফিরছিলাম। ইজিবাইক নিয়ে আমরা গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া পৌঁছালে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কারণে আমাদের  ইজিবাইক গতিরোধ করা হয়। পরে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ আমাকে পাশের রাস্তা দিয়ে যেতে বলে। ওই সময়ে একজন যুবক তার মোবাইলে ভিডিও ধারণ করছিল এবং আমাদের ইজিবাইকের ভিডিও ধারণ করে। তখন জিজ্ঞেস করে আমার ছেলে মারা গেছে কিনা তখন আমার শাশুড়ি ও স্ত্রী বলে হ্যাঁ আমার ছেলে মারা গেছে। তখন আমি ইজিবাইকে ছিলাম না। ইজিবাইক থেকে নেমে দেখি চন্দ্রদিঘলিয়া স্ট্যান্ডে কয়েকজন লোকের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। এরপর ওই যুবক তার মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করা শুরু করে। এরপর আমরা ইজিবাইক নিয়ে চলে আসি।”

এ বিষয়ে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মো. খাইরুল আলম বলেন, “মহামান্য রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে পুলিশ সদস্যদের বাধার মুখে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড দিয়েছে এক যুবক। ওই যুবকের কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, কেন এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ফেসবুকে প্রচার করেছে আমরা সেটা খতিয়ে দেখছি। আপাতত তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!