• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

‘দুই নাতিকে কবর দিতে গিয়ে বুক ভেঙে গেছে’


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২, ২০২৪, ১০:১৩ এএম
‘দুই নাতিকে কবর দিতে গিয়ে বুক ভেঙে গেছে’

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই নাতিকে হারিয়েছেন মুক্তারবাড়ির বাসিন্দা মোহাম্মদ মজনু মিয়া। তিনি বলেন, “আমার বেঁচে থাকার ইচ্ছা শেষ হয়ে গেছে। জীবনে এত বড় দুঃসংবাদ শুনতে হবে কখনও ভাবিনি। এই দুই হাত দিয়ে নাতি তানাজ ও আনাজকে কবর দিতে গিয়ে আমার বুক ভেঙে গেছে।”

রোববার (৩১ মার্চ) সকালে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় মাইক্রোবাস ও একটি যাত্রীবাহী বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তার দুই নাতি নিহত হন।

মজনু মিয়া বলেন, “দুই নাতি তানাজ ও আনাজসহ আমার মেয়ে ও জামাই মিলে মেজো ছেলে কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীকে আনতে ঢাকায় যাচ্ছিল। তারা ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। আর বিকেলে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল আমার দুই নাতি।”

মজনু মিয়া আরও বলেন, তানাজ খুব মেধাবী ছিল। ও চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে মেয়ের জামাই ওকে চিকিৎসক বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু সব আশা ধুলিসাৎ হয়ে গেল। তানাজের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল।

শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তারেক জানান, “তানাজ জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। সে এবার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। তার এমন অকাল মৃত্যুর খবরে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মজনু মিয়ার একমাত্র মেয়ে মনিরার বিয়ে হয় শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া গ্রামের বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাবের সাথে। তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে শেরপুর শহরের নওহাটা এলাকায় থাকতেন তারা। বড় মেয়ে মাশুরা নোকাদ্দেস তানাজ (১৬) শেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল।

রোববার রাতে তানাজের মামা কুয়েতপ্রবাসী সোহাবুর রহমান বাপ্পীর দেশে ফেরার কথা ছিল। সেজন্য ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে আনতে গত রোববার ভোরে ঢাকা যাচ্ছিল মনিরা, তার স্বামী মোকাদ্দেসুর রহমান তোরাব, তাদের সন্তান তানাজ, আনাছসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

পথিমধ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার জামান ফিলিং স্টেশনের সামনে মিথুন সুপার নামে একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই মারা যায় এসএসসি পরীক্ষার্থী তানাজ ও তার ছোটভাই আড়াই বছর বয়সী শিশু আনাছ। আহত হয় তাদের বাবা-মাসহ তিনজন।

এদিকে দুই সন্তানের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন বাবা তোরাব ও মা মনিরাসহ স্বজনরা। রবিবার বিকালে নিহতদের লাশ নওহাটা এলাকায় পৌঁছলে সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে সন্ধ্যায় নিহত তানাজ ও আনাসের দাদার বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার চরশিমুলচুড়া এলাকায় তাদের নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

Link copied!