পঞ্চগড়ে শুরু হয়েছে ভাদর কাটানি উৎসব। স্থানীয় রেওয়াজ অনুযায়ী এ সময়টায় নববধূরা বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। সেই রীতি মেনে গত বছরের আশ্বিন মাস থেকে চলতি বছরের শ্রাবণ মাস পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের যত মেয়ের বিয়ে হয়েছে, তাদের অধিকাংশই ফিরেছেন বাবার বাড়ি। আনুষ্ঠানিক ও লৌকিক লোকাচার রীতি মেনে বেশ ঘটা করেই তারা বাবার বাড়িতে আসছেন।
স্বামীর মঙ্গল কামনায় ভাদ্র মাসের প্রথম তিনদিন স্বামীর মুখ দেখবেন না নববধূরা। যে কারণে নববধূরা বিয়ের পর প্রথম ভাদ্রমাস আসার আগেই শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে যান।
শ্রাবণের শেষ সপ্তাহে পায়েস, নানা স্বাদের পিঠা-পুলি, মিষ্টান্ন ও ফলমূল নিয়ে বাপের বাড়ি থেকে মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে আনতে যান। মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজনও তাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেন বউয়ের বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সমাদর করার।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভাদর কাটানির কোনো ব্যখ্যা না থাকলেও এ অঞ্চলের আদি প্রথা অনুযায়ী এ উৎসবটি যুগ যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে। নববধূরা বাবার বাড়িতে ঘটা করে ফিরবে এটাই তো অনেক আনন্দের।
স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চল এবং ভারতের পশ্চিম, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের কোনো কোনো অংশে এই প্রথা এখনও চালু রয়েছে। আধুনিকতার যুগে ভাদর কাটানির পক্ষে তর্কের অভাব নেই। তবু থেমে নেই ভাদর কাটানি উৎসব।
প্রচলিত এ প্রথাটি যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলের হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে চালু রয়েছে।
ভাদর কাটানি মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো ধর্মীয় বিষয় না হলেও এ অঞ্চলে আবহমান কাল ধরে প্রথাটি চলে আসছে। এক সময় সম্ভ্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায় এ উৎসবকে জাকজঁমকভাবে পালন করত। তাদের এ রেওয়াজ ত্রুমান্বয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে প্রভাবিত করেছে। একপর্যায়ে উৎসবটি এ অঞ্চলে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাড়ায়।
মানিকপীর বেংহারী ফাজিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক সেলীনা আকতার বলেন, “ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ভাদর কাটানি নামে কোনো উৎসব না থাকলেও নববধূরা একে কেন্দ্র করে বাবার বাড়িতে কিছুদিন থাকার সুযোগ পান। আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় এটা অনেক আনন্দের।”
সদর উপজেলার ঘাটিয়ারপাড়া গ্রামের নববধূ শিলা আকতার বলেন, “বিবাহিত জীবনের প্রথম ভাদ্রমাসে ভাদর কাটানি উপলক্ষে বাবার বাড়িতে এসে অনেক ভালো লাগছে। যদিও স্বামীর সঙ্গে এই কদিন দেখা হবে না। তবে ফোনে প্রতিদিনই যোগাযোগ হয়।”