• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম
ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম

আমদানির খবরে হঠাৎ ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। বিভিন্ন হাটে-বাজারে তিন-চার দিন আগেও যে পেঁয়াজ মণ প্রতি ৩০০০ থেকে ৩৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে তা এখন মণ প্রতি ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

রোববার (২১ মে) জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। প্রতি মণ পেঁয়াজ প্রকারভেদে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কম দরে বিক্রি হচ্ছে।

এর আগে শুক্রবার (১৯ মে) ‘দুয়েকদিনের মধ্যে বাজারে দাম না কমলে ভারত থেকে আবার পেঁয়াজ আমদানি করা হবে’ বলে হুঁশিয়ারি দেন।

তবে আমদানির আগেই হঠাৎ এমন দরপতনে হতাশ হয়েছেন চাষিরা। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময় পেঁয়াজের ভালো দাম পেয়ে কৃষকরা স্বস্তিতে থাকলেও বিপাকে পড়েন ক্রেতারা।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক হাট বসে। হাটে পাইকারি দরে বিক্রি হয় পেঁয়াজ। পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত নগরকান্দা ও সালথা উপজেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চাহিদা মেটায়। এ হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যা গেল তিন দিনের তুলনায় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কম।

কৃষক সলেমান কাজী বলেন, “দীর্ঘদিন পর ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষকেরা। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধসহ বাজারদর ঠিক থাকলে আগামীতে পেঁয়াজ চাষে চাষিদের আগ্রহ বাড়বে। এবার প্রায় ১৪০ মণ পেঁয়াজ পেয়েছিলাম। দাম বাড়ায় ৪০ মনের মতো বিক্রি করেছি। বাকিগুলো রেখে দিয়েছি। এ রকম দাম থাকলে চাষিদের জন্য ভালো। ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের জন্য সহনীয় হয়।“

সালথার পেঁয়াজ চাষি রুস্তম আলী বলেন, “গত দুই-তিন দিনে ভালো দাম পেয়ে কয়েক হাট মিলে দেড়শো মন বিক্রি করে দিয়েছি। আজকের হাটে ৩০ মন বিক্রির জন্য এনেছি। কিন্ত মণ প্রতি প্রায় হাজার টাকা কমে গেছে। তবে এখনও যে দাম আছে তা মুটামুটি। আরও দাম কমলে লোকসান হবে কৃষকদের।” পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার দাবি জানান তিনি।

বোয়ালমারী উপজেলার দাদপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম সাতৈর বাজারে এসেছেন পেঁয়াজ বিক্রি করতে। তিনি বলেন, “দাম বেশি দেখে পাঁচ মণ পেঁয়াজ নিয়ে আসছি। গত হাটে যে পেঁয়াজ ৩২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে, সেখানে একই পেঁয়াজ আজ ২৩০০ টাকা দাম বলছে। কী করব ভাবছি। যেহেতু গাড়ি ভাড়া করে হাটে পেঁয়াজ নিয়ে আসছি; তাই বিক্রি তো করতেই হবে।“

মধুখালী উপজেলা সদর বাজারের বড় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও আড়তের মালিক মো. আলম বলেন, “স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করি। হঠাৎ করে কয়েকগুন দাম বৃদ্ধির পর আবার হঠাৎ দরপতন হয়েছে। মোকামে চাহিদা কম। আমদানির খবর শুনেই মূলত পেঁয়াজের দাম হঠাৎ করে প্রতি মনে হাজার টাকা কমেছে। শনিবার ভালো মানের পেঁয়াজ ২১০০ থেকে ২৩০০ টাকা মণ দরে ক্রয় করেছি। তবে আমার ধারণা আমদানির কথা শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যার কারণে বাজারের এই অবস্থা।”

তিনি আরও বলেন, “২১০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৩০০ টাকা মন প্রতি পেঁয়াজের দাম সীমাবদ্ধ থাকলে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের জন্য সুবিধা। তাছাড়া দেশের কৃষকদের ঘরে যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখার ভালো।”

বোয়ালমারীর সাতৈর বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যাবসায়ী মো. আতিয়ার রহমান বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করা হলে খুচরা বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি পাইকারদের। আবার দফায় দফায় পেঁয়াজের দাম ভিত্তিতে হতাশ ভোক্তারা। পাইকার ব্যাবসায়ীদের মতে, বাজারে ভারতীয় পেয়াজ ঢুকলে দাম একটু কমবে। হঠাৎ দরপতনে এখন যেমন বর্তমান বাজারে দেশি পেয়াজের সরবরাহ কম।

এ ব্যপারে ফরিদপুর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল শেখ বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ ব্যবসায়ী, অধিক মুনাফালোভী ও বাজারে কৃতিম সংকট সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে আমাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, “এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে জেলায় মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। ২০২১-২২ অর্থ বছরে মোট ৪০ হাজার ৯৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা হয়। আর চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে ৩৫ হাজার ৮৭৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এবার ফলনও বাম্পার হয়েছে। তবে দামের বিষয়টিতে আমাদের তো কোনো হাত নেই। আমরা ভালো ফলনে এবং বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করে থাকি।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!