• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

পুড়ছে গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল


শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৭, ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম
পুড়ছে গারো পাহাড়ের বনাঞ্চল

শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে প্রতিদিই শেরপুর সীমান্তের গারো পাহাড়ের বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। দুই মাসের বেশি সময় ধরে জ্বলা এ আগুনে মারা যাচ্ছে বনের পাখি-কীটপতঙ্গ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনের গাছ। মরে যাচ্ছে শাল গাছের চারা।

বন বিভাগ বলছে, দিনে ও রাতের বিভিন্ন সময় এ আগুন দিচ্ছে দুবৃত্তরা। আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে আহত হচ্ছেন বন কর্মকর্তারাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাতের আঁধারে জ্বলছে বন। কে বা কারা আগুন দিয়েছে বনে, জানেন না কেউ। অথচ এ ঘটনা পুরো শুষ্ক মৌসুম জুড়েই ঘটে শেরপুরের গারো পাহাড়ে। শাল-গজারির এ বনে আগুনে মারা যাচ্ছে বনের পাখি ও কীটপ্রতঙ্গ। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা চারা গাছ ও বেত বাগান। হুমকিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বনভূমি।

স্থানীয়রা জানান, বনের ভেতর গরু চরানো রাখাল ও অসাধু একটি চক্র নিজেদের সুবিধার্থে এ কাজ করে থাকেন। আগুনে পুড়ে কোনো গাছ মরে গেলে রাতের আঁধারে চুরি করার অভিযোগও রয়েছে এখানে। বছরের পর বছর ধরে চলছে এ বন পোড়ানো। প্রতিবছর এ মৌসুমে বনে আগুন দেওয়ার কারণে পুড়ে যায় ছোট গজারি গাছ (শালকপিচ), ঝোপঝাড়, লতাপাতা, পোকামাকড়, কেচু ও কীটপতঙ্গসহ নাম জানা-অজানা বিভিন্ন প্রাণী। জন্ম নেয় না গাছ। বিনষ্ট হয় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ময়মনসিংহ বন বিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় তিনটি বিট কার্যালয় রয়েছে। এ তিনটি বিট কার্যালয়ের আওতায় বনভূমি রয়েছে প্রায় আট হাজার ৮৮০ একর। এরমধ্যে বেশিরভাগ জমিতে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ-পালা সমৃদ্ধ বন রয়েছে। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে। বনাঞ্চলের মধ্যদিয়ে চলাচলের জন্যে সড়কপথ থাকায় খুব সহজেই দুর্বৃত্তরা রাতে আবার কখনো দিনেও বনে আগুন দেন। ঝরাপাতাগুলো শুকনা থাকার কারণে মুহূর্তেই বনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া বলেন, বনের ভেতর অসংখ্য রাস্তা রয়েছে। কে কখন কোনো রাস্তা দিয়ে এসে আগুন দিচ্ছে সেটি বোঝার উপায় থাকে না। তবে কিছুদিন ধরে মাঝেমধ্যে বনের ভেতর আগুনের দেখা মিলছে।

বার্ড কনজারভেশন সোসাইটি ঝিনাইগাতী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, যুগ-যুগ ধরে মানুষ নিজের ব্যক্তিস্বার্থে মজে ও জীবনের উন্নয়নের জন্য পরিবেশের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছে। এসবের অবশ্যম্ভাবী ক্ষতির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।

বনবিভাগের রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, “বর্তমান সময়ে শাল-গজারিসহ বিভিন্ন গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে দুই-তিন ইঞ্চি উঁচু স্তরে জমা আছে। এতে আগুন ধরিয়ে দিলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বনের ভেতর আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে আমার অল্প সংখ্যক স্টাফ নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।”

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ঝিনাইগাতীর স্টেশন মাস্টার আব্দুল লতিফ বলেন, “দুর্গম পাহাড়ে আগুন নেভানো কঠিন। তবে আগুনের খবর পেলে তা নির্বাপনের জন্য আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Link copied!