শীতকাল এলেই সবার মনের ভেতর একটাই সাধ উঁকি দেয়। তা হলো সারাবছরের ব্যস্ততা আর মানসিক চাপকে ছুঁড়ে ফেলে কোথাও একটু ঘুরে আসা। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া, মন খুলে আড্ডা দেওয়া। যেখানে সময়ের কোনো বাঁধা ধরা নিয়ম থাকবে না। আর চাইলে কিন্তু ঘুরে আসতে পারেন পছন্দের কোনো জায়গা থেকে। আনন্দে কাটিয়ে আসতে পারেন বছরের শেষের কটি দিন।
আজ আপনাদের জন্য রইল সোনারগাঁ জাদুঘর ঘুরে আসার গাইডলাইন-
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে কিংবা প্রাইভেটকারে সোনারগাঁয়ে যাওয়া যাবে। সময় লাগবে বাসে এক থেকে দেড় ঘণ্টা এবং প্রাইভেটকারে এক ঘণ্টা লাগবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা হয়ে উত্তরদিকে গেলেই দেখতে পাবেন পর্যটন নগরী সোনারগাঁ। আপনি ঢাকার যেখানে থেকেই যান আগে গুলিস্তান আসতে হবে।
এসে হকি স্টেডিয়ামের পাশে বাস কাউন্টার রয়েছে। এখান থেকে ঢাকা-মেঘনা সড়কের দোয়েল সার্ভিস, স্বদেশ পরিবহন, মেঘালয়, বোরাক বাসে চড়ে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হবে। বাস ভাড়া ৪৫-৫০ টাকা। এছাড়া প্রাইভেট কারেও আপনি যেতে পারেন। যদি বাসে যান তাহলে চৌরাস্তা বাসস্ট্যান্ড নেমে রিকশা করে উত্তর দিকে পর্যটক নগরী সোনারগাঁ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁ জাদুঘরে) যেতে হবে।
সেখানে রিকশা ভাড়া নেবে ২০-৩০ টাকা। এছাড়া জাদুঘর থেকে যাওয়া যাবে আরেক পর্যটন স্পট বাংলার তাজমহলে। লোকশিল্প জাদুঘর থেকে সিএনজিতে সরাসরি ও বাসে সার্ভিসে মদনপুর নেমে আবার বাসে বাংলার তাজমহলে যাওয়া যায়। সিএনজি ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা।
কী কী দেখবেন
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর
১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠা করেন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁ জাদুঘর)। প্রথমে এটি ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮১ সালে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে এ দেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয়কে তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন এই জাদুঘর গড়ে তোলার প্রয়াস নেন।
লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার। অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ ফি দুটি ভবনের গ্যালারিসহ ৪০ টাকা।
সোনারগাঁয়ে গেলে প্রথমেই আপনি যা দেখবেন তা হলো আবহমান গ্রামবাংলার লোক সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন যা সোনারগাঁ জাদুঘর নামে পরিচিত। এখানে নজর কাড়বে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন এক অট্টালিকা ভবন।
এই ভবনটি পুরনো বড় সর্দার বাড়ি খ্যাত। বড় সর্দার বাড়িটি আরও আকর্ষণ করতে সংস্কার করেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশন। বড় সর্দার বাড়িটি জাদুঘরকে আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে। ভবনের বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্য দুটি ঘোড়া, যা সোনারগাঁ জাদুঘরের কথা বললেই এই দুই ঘোড়া দেখলেই সবাই অনায়াসে চিনতে পারে।
আপনি জাদুঘরে প্রবেশ করেই আরও দেখতে পাবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের তৈরি গরুর গাড়ির ভার্স্কয, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভার্স্কয ওশিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আবক্ষ ভার্স্কয যেটি দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। এখানে ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘর ও বড় সর্দার বাড়ি ভবনের গ্যালারি।
এই গ্যালারিতে অনেক কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোক জীবনের পরিবেশ, তামা কাসা পিতলের নিদর্শনে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ অনেক কিছুই রয়েছে। জাদুঘরের অভ্যন্তরে আরও অনেক কিছুই আপনি ইচ্ছেমতো প্রাণ খুলে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন।
এখানে দেখতে পাবেন লাইব্রেরি, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, ক্যান্টিন, সেমিনার হল, সোনারতরী মঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান, হরেক রকম বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌবিহার, মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা, স্থায়ী মনোরম প্রকৃতি অপরূপা সেতু, পঙ্খীরাজ নৌকা।
এছাড়া আপনি আরও একটি আকর্ষণীয় এলাকা দেখতে পাবেন জাদুঘরের পশ্চিম দিকে। বিশাল এই এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কারুশিল্প গ্রাম। বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে তৈরি হয়েছে মানোরম ঘর।
এ ঘরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা অচেনা অথচ দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, পাট শিল্প, ঝিনুক,কামার, শঙ্খ শিল্প, রেশম শিল্প, একতারা ইত্যাদি উৎপাদন করছেন। এখানে কারূপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দের কারূপণ্য কিনতে পারেন।
পানাম নগরী
জাদুঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক উত্তর দিকে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক পানাম নগরী। পানামের অট্টালিকা আপনাকে স্বাগত জানাবে। এখানে এলেই মন ভালো হয়ে যাবে। চারদিকে পরিখা বেষ্টিত দুই দিকে ফটকসমৃদ্ধ ইমারতরাজী শোভিত নাচঘর, নহবতখানা, দরবার কক্ষ। এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল।
একটু উত্তর দিকে দেখা যাবে পঙ্খীরাজ সেতু (পানাম সেতু) ও নীলকুঠি। ঈশা খাঁর সময়কালে এই নগরী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।
সোনারগাঁওয়ে রাজদণ্ড বা রাজকার্য পরিচালিত হতো এই পানাম নগরী থেকেই। এ নগরীই যে প্রাচীন বাংলার রাজা-বাদশাদের বাসস্থান ছিল তার প্রমাণ এই অঞ্চলের স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যেই পাওয়া যায়। আর এ কারণে পানাম গড়ে উঠেছিল বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে। যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের স্বাক্ষর হয়ে আছে।
এ নগরীতে আরও রয়েছে- খাজাঞ্চিখানা, ঠাকুর ঘর, গুপ্তপথ, মঠ, মন্দির, পুরানো লোক কারুশিল্প জাদুঘর ভবন, পোদ্দার বাড়ি, ৪০০ বছরের প্রাচীন টাকশাল বাড়ি, বিনোদন পিকনিক স্পট, টুরিস্ট হোম এবং প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন।
যেখানে থাকবেন
সোনারগাঁয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সাধারণত থাকার পরিকল্পনা করেন না বেশিরভাগ পর্যটক। ঢাকার খুব কাছাকাছি বলে একদিনে ঘোরাঘুরি শেষে আবার বাসায় ফিরে যান। কিন্তু যারার দূর থেকে বেড়াতে আসেন তারা অনেক সময় থেকে যেতে চান।
তাদের জন্য এখানে একটি থ্রি স্টার মানের ‘সোনারগাঁ রয়েল রিসোর্ট’ নামে একটি রিসোর্ট রয়েছে। এটি লোকশিল্প জাদুঘরের পাশেই খাসনগর দিঘীরপাড় এলাকায় অবস্থিত। রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। তবে থাকতে হলে আগেই বুকিং দিতে হবে।
এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে একটি রেস্ট হাউস আছে। সেটি এমএ সাত্তার কেন্দ্রীয় গণবিদ্যালয় (বেইস)। এখানে অনেকগুলো মনোরম কক্ষ রয়েছে। জাদুঘর সংলগ্ন খাসনগর দিঘীরপাড় ইছাপাড়া গ্রামে এর অবস্থান। এছাড়া সরকারি অতিথিদের জন্য জাদুঘর ও উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব গেস্ট হাউস বাংলো রয়েছে।
অনেক দূরে কোথাও ঘুরতে ইচ্ছা না হলে সোনারগাঁ থেকে কম সময়ে অনায়াসেই ঘুরে আসতে পারেন চাইলে।
এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে একটি রেস্ট হাউস রয়েছে এখানে। সেটি এমএ সাত্তার কেন্দ্রীয় গণবিদ্যালয় (বেইস)। এখানে অনেকগুলো মনোরম কক্ষ রয়েছে। জাদুঘর সংলগ্ন খাসনগর দিঘীরপাড় ইছাপাড়া গ্রামে এর অবস্থান। এছাড়া সরকারি অতিথিদের জন্য জাদুঘর ও উপজেলা প্রশাসনের নিজস্ব গেস্ট হাউস বাংলো রয়েছে।